সংবাদচর্চা রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নকল করে অভিনব ভূমি জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে । এ ঘটনায় কাজী সাজাহান ও ইসমাইল ভূইয়া সাকেরসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামী করে আড়াইহাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আড়াইহাজার উপজেলা ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বরাত দিয়ে আড়াইহাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান, নরসিংদীর মাধবদী থানার কান্দাইল এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কাজী সাজাহান। তিনি দুপ্তারা ইউনিয়নের পাঁচগাও মৌজাস্থিত এস এ ৩৮৮, আর এস ১২১৯ খতিয়ানের এস এ ২০৮ ও আর এস ৫৯৪ ও ৫৯৫ নং দাগের ২৫ শতক সম্পত্তির জাল দলিল দাখিল করে নামজারী করেন। এর বিরুদ্ধে ওই এলাকার আবুল হাসিম মিস মোকদ্দমা নং- ৪০৮/২০১৮ দায়ের করলে দীর্ঘ শুনানীর পর গত ২ জানুয়ারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স মামলায় রায় ঘোষনা করেন। রায়ে কাজী শাজাহানের নামজারী বাতিল করে জমির প্রকৃত মালিক আবুল হাসিমের পক্ষে নামজারির নির্দেশ দেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওই দিন ভূমি কর্মকর্তাদের দেখে নেয়ার হুমকী দিয়ে ভূমি অফিস ত্যাগ করেন সাজাহান। পরবর্তীতে প্রাক্তন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেজওয়ানুল হক ও বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্সের স্বাক্ষর জাল ও নকল সীল তৈরি করে নকল রায় ও ভূয়া নথিসহ নকল হাজিরা নোটিশের কপি তৈরি করে স্থানীয় সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। সাংবাদিকরা কপিগুলোর নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্সের সাথে আলোচনা করলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পরে। ভূমি অফিসের নথি চেক করে দেখতে পান কাজী সাজাহানের কাছ থেকে সরবরাহ করা সাংবাদিকদের কাছে থাকা মোকদ্দমার রায়, নথি ও হাজিরা নোটিশে স্বাক্ষর ও সীল নকল যাতে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জাহিদ হাসান প্রিন্স জানান, কাজী সাজাহান ও তার সহযোগি ইসমাইল হোসেন সাকের জাল দলিলকে মুল দলিল হিসেবে ব্যবহার করে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অবৈধ সুবিধা নেয়ার পাঁয়তারা করেছিল। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা দক্ষতার সহিত তার জাল দলিল ধরে ফেলায় তার প্রতারণার ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে তিনি এসিল্যান্ডসহ ভূমি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ও সীল স্ক্যানসহ মামলা নথি জাল করে ভূমি অফিসের সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এ জন্য প্রতারক দুজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি আক্তার হোসেন জানান,কাজী শাজাহান ও তার সহযোগি ইসমাইল হোসেন সাকেরসহ প্রতারণার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের বেশ কয়েকটি টীম মাঠে কাজ করছে।
অন্যদিকে আসামী ইসমাইল ভুইয়া সাকের জাল জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি আইনের পরিপন্থী কোন কাজ করিনি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদকর্মীদের জানানোর কারনে তারা উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছে। আমি তার যথাযথ তদন্ত দাবী করছি। যদি আমি কোন অন্যায় করে থাকি প্রমানিত হয় তাহলে যে শাস্তি দিবে তা মাথা পেতে নেব। অন্যথায় আমার বিগত ৫০ বছর ধরে দখলে থাকা জমি কি ভাবে অন্য লোককে নামজারি করে দেয়, আমি তার জোরালো বিচার চাই।
এদিকে কাজী শাহজাহানের সাথে মোবাইলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এ ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি কথা না বলে লাইনটি কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।