সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
অবশেষে বিএনপির মূলধারায় ফিরলেন সংস্কারপন্থী ১১ নেতা। তাদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী, হুইপ ও সংসদ সদস্য রয়েছেন।
এক সময় এই নেতারা দলের কেন্দ্রীয় পদে ছিলেন। কিন্তু আলোচিত এক-এগারোর সরকারের সময় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় তাঁরা মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর অংশ হিসেবে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে বিএনপি। প্রথম দফায় সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত ১১ নেতাকে দলে নেওয়া হয়েছে।
এসব নেতাও তাঁদের অতীতের ভুল স্বীকার করে দলের মূলধারায় ফিরতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করেছিলেন। বিএনপির একটি সূত্র থেকে পাওয়া খবরে এমনটাই জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সংস্কারপন্থী এসব নেতা সাক্ষাৎ করেন। এ সময় মহাসচিব তাঁদের দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন।
দলে ফেরা সংস্কারপন্থীরা হলেন- আড়াইহাজারের সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুর, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, সাবেক সাংসদ আবু হেনা জি এম সিরাজ, সর্দার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, নজির হোসেন, ডা. জিয়াউল হক, ইলেন ভুট্টো, শফিকুল ইসলাম তালুকদার, শহিদুল আলম তালুকদার ও জহির উদ্দিন স্বপন।
সংস্কারপন্থীদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পেছনে থেকে কাজ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে বিএনপি শিগগিরই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। মাঠের আন্দোলনে নামার আগে সবাইকে নিয়ে শক্ত প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে দলের পুরোনো নেতাদের মধ্যে যারা যেখানে আছেন সবাইকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে সংস্কারপন্থীদের দলে নেওয়া হয়।
দলে ফেরা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা যারা দলে নিষ্ক্রিয় ছিলাম তাদের মধ্য থেকে ১১ জনকে দলে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আমরা দলে আগের মতো সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ পাব।’ সুযোগ করে দেওয়ার জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
দলে যোগ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, আমরা দলে আছি, আগে ছিলাম এবং দলে থাকব। আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশ পেয়েছি। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিয়েছেন, সেই বিষয়ে জেনেছি। আমরা দলের নির্দেশনা অনুযায়ী একযোগে কাজ করে যাব।
শহিদুল আলম তালুকদার বলেন, আমরা এত দিন দলে নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এখন আমাদের সক্রিয় হওয়ার জন্য দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন জেলে আছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে আছেন এবং সামনে নির্বাচন আছে। আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের মুক্ত করব। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হওয়ার আহ্বান
এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলকে সময় উপযোগী ও ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারার ঐক্য নিশ্চিত করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় আজ দেশে বিএনপিসহ সব গণতন্ত্রকামী দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। যার অংশ হিসেবে আজ দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে গুলশান কার্যালয়ে বেশ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মহাসচিব।
বৈঠকে চলমান জাতীয় সংকট, খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সব নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং জনগণের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দলের পক্ষ থেকে মহাসচিব কাল বিলম্ব না করে সবাইকে পূর্ণমাত্রায় সক্রিয় হয়ে দলকে শক্তিশালী করার এবং সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান।
পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুযায়ী বিএনপির নেতাদের সঙ্গে এ ধরনের বৈঠক অব্যাহত থাকবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।