আজ সোমবার, ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আরও ৪ গুন ট্রাফিক প্রয়োজন- এএসপি সালেহউদ্দিন

সাইফুল সুমন

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের রুটিন। জনবল কম থাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে থাকে দীর্ঘ যানজট। সাধারন মানুষের কাছে যানজট এখন সীমাহীন ভোগান্তি।

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবৈধ স্ট্যান্ড, যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং ও গাড়ির কাউন্টার, হকারদের ফুটপাত ও রাস্তা দখলের মত আরো অনেক কারনে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। তাছাড়া রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে থাকায় রাস্তার প্রস্থ ছোট হয়ে যায়। ফলে রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটে এবং সৃষ্টি হয় যানজট। আরো জানা যায়, এ জেলায় প্রায় ৩০লাখের মত জনসংখ্যা রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় অনেক শিল্পকারখানা। শিল্প নির্ভর এ জেলার যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে মাত্র ১১৫ জন ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছে। ৫৬টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দায়িত্ব পালন করতে পারেন ৭২জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে মনে করছেন খোঁদ ট্রাফিক পুলিশরাই।

বিভিন্ন সূত্রের তথ্যনুযায়ী জেলায় ১১ জন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর, ১৩ সার্জেন্ট, ৬ টাউন সাব ইন্সপেক্টর, ১২ জন সহকারী টাউন সাব ইন্সপেক্টর, এবি এএসআই ৬ জন, এএসআই একজন ও কনস্টেবল আছেন ৬৫ জন। আর প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে আছেন একজন সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি)। উল্লেখ্য, জেলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে ৫৬টি স্থানে কাজ করে ট্রাফিক পুলিশ । তবে দুই ভাগে কাজ করতে গিয়ে মোট ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। সকাল ৭টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এক ভাগ ও ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত আরেক ভাগ কাজ করে। ফলে প্রতি ভাগে এই ৫৬টি স্থানে দায়িত্ব পালন করতে পারেন মাত্র ৭২ জন। অনেক সময় রাতেও মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করতে হয় ট্রাফিক পুলিশদের।

ট্রাফিকের জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে সংবাদচর্চা থেকে মুঠোফোন করা হয় সহকারি পুলিশ সুপার সালেহউদ্দিন আহমেদকে। তিনি বলেন, আমাদের যেই জনবল রয়েছে তার থেকে ৪ গুন বেশি জনবল আমাদের প্রয়োজন যানজট নিরসনের জন্য। কারন আমাদের কাজ শুধু যানজট নিরসন করা না। আমাদের কাজ আইন প্রয়োগ করা ও যানজট নিরসন করা। নারায়ণগঞ্জ জেলা মেট্রোপলিটন হওয়ার আগ পর্যন্ত এমনি থাকবে জনবল। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা মেট্রোপলিটন হওয়ার সাথে সাথে পুলিশের অনেক জনবল চলে আসবে। তখন সাধারন মানুষের সেই কাঙ্খিত সার্ভিস আমরা দিতে পারবো।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে বিভিন্ন স্থানে চলাচল করা যানবাহন শহরের চাষাঢ়ার মোড় হয়ে চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে রয়েছে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী। তবুও এই চাষাঢ়ায় বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায় যানজট। মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা বাড়ার সাথে সাথে এতটাই যানজট সৃষ্টি হয় যে রাস্তায় পা ফেলার স্থান থাকে না। আবার দুপুরের দিকে ব্যপক যানজটে সাধারন মানুষকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তখন মানুষের চেয়ে মাথার রিকশাই দেখা যায় বেশি।

নগড়বাসীর অভিযোগ, যানজটের মূল কারণ অবৈধ স্ট্যান্ড ও পার্কিং এবং যেখানে সেখানে গাড়ির কাউন্টার। এসব দেখেও না দেখার ভান করে ট্রাফিক বিভাগ। ভিআইপি কিছু স্কুলও যানজটের অন্যতম কারণ। শহরে যানবাহন সংখ্যার তুলনায় সড়কগুলো সরু। এছাড়াও নগরীতে অপরিকল্পিতভাবে রিক্সার অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং অনেক রিকশা চলছে অনুমোদন ছাড়াই। আনফিট যানবাহনও রয়েছে শহরজুড়ে। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিনা কারনে গাড়ি ও রিকশা রেখে অবৈধ স্ট্যান্ডে পরিনত করা হয়েছে। একই অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ শিমরাইল, নারায়ণগঞ্জ থেকে ফতুল্লা-পাগলা সড়ক এমনকি চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ডের দু’পাশের সড়কে রয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। অন্যদিকে নিতাইগঞ্জের ট্রাক স্ট্যান্ড অনত্র সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও তা এখনো আগের জায়গাতেই বহাল আছে। ওই স্ট্যান্ড নিতাইগঞ্জের ব্যবসায়ীরা লোড-আনলোড করার কাজের জন্য ব্যবহার করছে। আর মালামাল লোড-আনলোডের কারণে তৈরি হচ্ছে স্ট্যান্ড। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং সহ বিভিন্ন সমস্যার কারণেই মূলত যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ