আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছে এলাকার পরিস্থিতি। স্থানীয়দের ৭০% নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করেছে জনতার মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। গত রবিববার সকাল ১১টায় কারখানার প্রধান ফটকে এ কর্মসূচি পালন করে স্থানীয়রা।
তবে, এসব আমলে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির। জানা যায়, কেইপিজেডে স্থানীয়দের জন্য ৭০% কোটা বরাদ্দ, স্থানীয়দের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও সকল দুর্নীতি বন্ধসহ ৩ দফা দাবি নিয়ে দীর্ঘ আধাকিলোমিটার এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে সিইউএফএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন, কাফকো নিরাপত্তা কল্যাণ সমিতি, জুঁই ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম, তৈলারদ্বীপ নোয়াপাড়া একতা সংঘ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু স্মৃতি সংসদ, বৈরাগ সমাজ কল্যাণ পরিষদ, প্রিয় রায়পুর, উপজেলা আওয়ামীলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগসহ ১৮টি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জনতার মঞ্চ নামক সংগঠনটির উদ্যোক্তা এম কামাল উদ্দিন। কর্মসূচির সমন্বয়ক এইচ এম হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আনোয়ারা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শওকত ওসমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলী আকবর, উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল তালুকদার, মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী সাজিয়া সুলতানা, আনোয়ারা ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম আলী হোসেন, উপজেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক এরশাদ আলী সোহেল, আনোয়ারা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, সমন্বয়কারীদের মধ্যে সরোয়ার কামাল, ওসমান গণি মনসুর, ওমর ফারুক, কাজী আবদুল্লাহ, রেজাউল করিম, নঈম উদ্দিন, ওবাইদুল হক মুন্না, তারেকুর রহমান, সালাহউদ্দিন, মাসুদ রানা ও জিকু তালুকদার প্রমুখ। বক্তারা বলেন, কেইপিজেডে স্থানীয় শিক্ষিত এবং দক্ষ শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে স্থানীয়রা চাকরির কোন সুযোগ পাচ্ছে না। তাদেরকে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ চাকরী থেকে বঞ্চিত করেই চলেছে। এ বৈষম্য থেকে বাঁচতে সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছি।
এ কেইপিজেড বাস্তবায়নের জন্য আমরা বাপ-দাদার ভিটা বাড়ি হারিয়েছি, বিনিময়ে আমরা কি পেয়েছি? আমাদের আবেগ নিয়ে অনেক প্রতারণা হয়েছে, আর নয়। কারখানায় বিভিন্ন পদে স্থানীয় ৭০% কোটা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে। অনেক ছাড় হয়েছে, আর ছাড় দেয়া যাবে না। আগামী রবিবারের মধ্যে স্থানীয়দের ৩ দফা দাবি মেনে না নিলে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও হুঁসিয়ারী দেন বক্তারা। উল্লেখ্য যে, কেইপিজেডে নিম্ন পদে স্থানীয়দের নিয়োগ দিলেও ম্যানেজমেন্ট বা উধ্বর্তন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য’র শিকার স্থানীয়রা। কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বার বার ৯০/৯২% লোক স্থানীয়দের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে আসলেও মূলত নিম্ন পদেই স্থানীয়দের কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে উধ্বর্তন পদে বাহিরের লোক এনে নিয়োগ বাণিজ্যে লিপ্ত রয়েছে।
অথচ কেইপিজেড ৯০/৯২% লোক নিয়োগ দিচ্ছে বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে এলাকার পরিস্থিতি। এদিকে, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ বলেছে এসব আন্দোলন নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। কারণ বর্তমানে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে অধিকাংশই স্থানীয়। স্থানীয়দের এসব আন্দোলন-কর্মসূচির ব্যাপারে জানতে চাইলে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের (কেইপিজেড) সহকারি মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মুশফিকুর রহমান বলেন, কেইপিজেডের বিভিন্ন পদে স্থানীয় ৯২% লোক কাজ করছেন। তাই এসব আন্দোলন অযৌক্তিক। এ কারণে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ এসব আন্দোলন নিয়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।