আজ শনিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আড়াইহাজারে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে পছন্দের প্রার্থী ঘোষণা ও তার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে। ফলে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এতে করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভোটে অংশ নেওয়ার প্রতি আগ্রহ কমেছে। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অজানা আতঙ্ক তাড়া করে ফিরছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, নিজের পছন্দের লোককে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর অপর এক প্রার্থীর সমর্থক অনুসারীদের মুঠোফোনে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন নজরুল ইসলাম। যদিও তিনি একটি গণমাধ্যমে এই হুমকি ধামকির অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি দাবি করেছেন নির্বাচনে তার পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই।
স্থানীয়রা জানা, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আগেই নজরুল ইসলামের দুই পছন্দের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে কেবল চেয়ারম্যান পদেই নির্বাচন হবে।
সূত্র মতে, আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৯ জন প্রার্থিতার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তিন জন নির্বাচনের মাঠে আছেন। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজালাল মিয়া (দোয়াত কলম প্রতীক), উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি সুজন ইকবাল (আনারস প্রতীক) এবং কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপন (ঘোড়া প্রতীক)।
উল্লেখ্য, স্বপন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্য আলোচিত রুবেল মাহমুদ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটনসহ সন্ত্রাসী বাহিনীকে শেল্টার দেয়াসহ নানা ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ শোনা যায়। গত ৪ মে এক সভায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিত এই স্বপনকেই ঘোষণা করেছেন হুইপ নজরুল।
আড়াইহাজার বাজার এলাকার একটি চায়ের দোকানে কথা হয় ইজিবাইকচালক মাহমুদ আলীসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের ভোট নিয়ে ভাবনা জানতে চাইলে মাহমুদ বলেন, ‘ভাইয়ে ভাইয়ে কুস্তি খেলা। বাপ-মা পক্ষ নিছে এক পোলার। এমনকি হেরা আগেই আরেক পোলার মাজা ভাইঙ্গা দিছে। এহন কন, আপনে হেই খেলা দেইখা সময় নষ্ট করবেন?’
মাহমুদ আলীর এমন সরস জবাবে দোকানে উপস্থিত আকরাম হোসেন, শাহজাহান মিয়া, দেলবার আলীরা হেসে ওঠেন। আলাপে জানা যায়, আড়াইহাজারের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলামকে উপজেলার একক নিয়ন্ত্রক মনে করেন এই ভোটাররা। অন্তত গত ১৫ বছরে নজরুলের পছন্দের বাইরে গিয়ে কেউ সেখানে জনপ্রতিনিধি হতে পারেননি। নজরুল যেহেতু এবার স্বপনকে নিজের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন, ফলে যেকোনো উপায়ে তাকে বিজয়ী করা হবে বলে ধারণা এই ভোটারদের। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর বর্জন করা এই নির্বাচনে তাই আলাদা করে তেমন আগ্রহ নেই তাদের। তবে ভোটের দিন পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলে কেন্দ্রে যাওয়ার কথা ভাববেন তারা।
ভোটারদের এমন মনোভাবের কারণ জানা গেল উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘দলের চাওয়া, ভোটাররা যেন কেন্দ্রে আসেন। এই কারণে দল একক প্রার্থী দেয়নি। পরে হুইপ দলীয় ফোরামে স্বপনকে একক প্রার্থী করার প্রস্তাব দেন। কিছুদিন আগেই স্বপন ইউপি নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরেছেন। তাছাড়া তিনি বিতর্কিত। একক প্রার্থীর বিষয়টা ফোরামে পাস হয়নি, তাই একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকেন। হুইপ তখন নিজে সভা করে সাইফুলকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেন। আমরা তো চাইলেও এখন আর অন্য প্রার্থীর ভোট করতে পারছি না। এই কারণে ভোটারদের মনে ভোট নিয়া সন্দেহ থাকতে পারে। তারা মনে করতে পারেন, আগেই সব সিলেকশন হয়ে গেছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন বলেন, একক প্রার্থী ঘোষণা আওয়ামী লীগের দলীয় নীতিবহির্ভূত। হুইপ যদি কাউকে দলের প্রার্থী ঘোষণা দেন, তাহলে ভোটের নিরপেক্ষতা হারায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রায় প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয়গুলোতে বর্ধিত সভার আয়োজন হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো সভা করে স্বপনের পক্ষে নির্বাচন করার ঘোষণা দিচ্ছে। সংসদ সদস্য ৪ মে এক সভায় বক্তব্যে বলেন, ‘শেখ হাসিনার দলের প্রার্থী হিসেবে আমাদের একক প্রার্থী হলো ঘোড়া মার্কার স্বপন।’ তার পর থেকে বিভিন্ন সময় তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় স্বপনের জন্য ভোট চেয়েছেন। সর্বশেষ গেল শুক্রবার খাগকান্দা ইউনিয়নে সভা করে তিনি স্বপনের জন্য ভোট চেয়েছেন। স্বপনও ভোটারদের কাছে নিজেকে হুইপ নজরুলের প্রার্থী বলেই পরিচয় দিচ্ছেন।
অথচ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ধারা-২২-এ বলা হয়েছে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনের প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
একজন প্রার্থীর পক্ষে সংসদ সদস্যের অবস্থান নেওয়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করেন দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী শাহজালাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘হুইপ নিজে যখন একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি কাজ করেন, তখন আর মাঠের নিরপেক্ষতা থাকে না। আমার পক্ষে কাজ করায় তিনি অনেককেই ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন। আমি দল এবং প্রশাসনের কাছে উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু একটি ভোট প্রত্যাশা করছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ও হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আড়াইহাজারের সব জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতা-কর্মীরা মিলে যৌথভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে। আমার নিজস্ব কোনো প্রার্থী নেই। আর হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগগুলো বানোয়াট।’
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব-আল-রাব্বি বলেন, ‘হুইপ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা করণীয়, তার সব ব্যবস্থাই আমরা নিয়েছি।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ