সজিব খান: আজ রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আজ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। গতকালই নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল তাদের চূড়ান্ত প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে। বিএনপি ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করলেও এবার দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সারা দেশবাসী, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, বহির্বিশ্ব সবার চোখ এই নির্বাচনের উপর। এবার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা আওয়ামী লীগের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
আজ ভোটের লড়াইয়ে ৩০০ আসনের মধ্যে যে দল বা জোট সবচেয়ে বেশি আসন পাবে তারাই নতুন করে সরকার গঠন করবে। বরাবরই বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো হয়েছে যথেষ্ট প্রন্দ্বিন্দ্বিতাপূর্ণ। বিএনপি-আওয়ামী লীগ দেশের এই প্রধান বড় দুই দলই নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে প্রচণ্ড আশাবাদি। এছাড়া জয়ের পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চারবার করে মোট আটবার এবং জাতীয় পার্টি দুবার সরকার গঠন করেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রথম (১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ ), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২ জুন), নবম (২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর) , ও দশম (২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি) সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। এবং বিএনপি দ্বিতীয় (১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি), পঞ্চম (১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারিতে), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি) ও অষ্টম (২০০১ সালের ১ অক্টোবর ) সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে যে দলই বিজয়ী হোক না কেনো তারাই পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠন করে এগিয়ে থাকবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসবে বলে অনেকটাই বিশ্বাস দলের নেতাকর্মীদের। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে বেশ কয়েকবার শোনা গেছে তিনি বলেছেন, জনগণ আমাদের চায়, আমরাই আবার ক্ষমতায় আসবো। আপনাদের উন্নয়ন দেবো। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেব।
অপরদিকে বিএনপি, গণফোরাম ও নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দল নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবি, যদি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিপুল ভোটে বিনা দ্বিধায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসবে।
গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রে দলের নেতাকর্মীও প্রার্থীদের অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, নির্বাচন বানচাল করতে সন্ত্রাস ও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচনের মাঝপথে বিএনপির ভোট বর্জনের প্রবণতা আছে। তবে এই সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে যেন অন্যান্য দলের প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকে। আমরা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ নির্বাচন চাই। তাই কোনো সংকট সৃষ্টি হোক এটি কাম্য নয়।
এদিকে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া খুবই ইতিবাচক। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয় বিনা দ্বিধায় বলতে পারি আমরা, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় আসবে। এছাড়া জনগণের ইচ্ছার বাইরে কোনো সরকার গঠন করা হলে তার পতন ঘটবে।’
ঐক্যফ্রন্টের দাবি অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল এক মাস না পিছিয়ে মাত্র এক সপ্তাহ পেছানোর ফলে নির্বাচনী প্রস্তুতি পুরোপুরি নেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও জানান ড. কামাল।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ১০ বছর ইতিহাস লেখলে দেখা যাবে শুধু আতঙ্ক, ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, রক্তপাত আর বিরোধী দলসহ ভিন্ন মত ও বিশ্বাসের ব্যক্তিদের দমনের দশক। জনগণ এই ফ্যাসিবাদ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিজয়ের মাসে নৌকা বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজেট সরকার গঠন করবে। যে গণজোয়ার দেখা যাচ্ছে, উৎসব বিরাজ করছে তাতে জয়ের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ঐক্যফ্রন্ট জনবিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
এখন অপেক্ষা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের।