নিজস্ব প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ও প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের পক্ষে স্লোগান ও কথা বলে বিতর্কে বিঁধা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে এক প্রস্তুতি সভা বয়কট করেন জেলার কয়েকজন নেতা। তবে ওই সভাতে সাধারণ কর্মীরা আজাদ বিশ্বাসের উপস্থিতি দেখে স্লোগান দেয় ও ক্ষোভ ঝারেন। তখন কর্মীরা আজাদ বিশ্বাসকে অপর সহ সভাপতি শাহআলম ও আওয়ামী লীগের ‘দালাল’ স্লোগান দিলে পরিস্থিতি উত্তাপ ছড়ায়। পরে নেতারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে জেলা বিএনপির সেক্রেটারী মামুন মাহমুদের অফিসে একটি প্রস্তুতি সভাটি ডাকেন জেলা কমিটি। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার টেকনাফ যাত্রা উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ওই প্রস্তুতি সভার আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টা হতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলা প্রস্তুতি সভায় ৭জনের মধ্যে ৩জনের বয়কটের খবর পাওয়া গেছে। সভায় মামুন মাহমুদ, সহ সভাপতি বিতর্কিত আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, আবদুল হাই রাজু, মনিরুল ইসলাম রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার, যুগ্ম সম্পাদক আকবর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তবে সভায় আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের উপস্থিতি দেখে ‘বয়কট’ করে উঠে আসেন রুহুল আমিন সিকদার, মনিরুল ইসলাম রবি ও আকবর হোসেন যারা গত ১৯ অক্টোবর থেকে আকার ইঙ্গিতে আজাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। ফেসবুকে নিজের একাউন্টে প্রতিনিয়ত স্ট্যাটাসও দেন।
১৯ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক সভায় হাজির হন আজাদ বিশ্বাস। বক্তব্য রাখেন সরকার ও আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের পক্ষে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলা বিএনপির প্রথম প্রস্তুতি সভা হয় যেখানে ৩জন বয়কট করেন। সেখানে মাত্র ৪জন ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা যখন সকল কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তখন ৭জনই উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ওই সভাতে উপস্থিত সাধারণ কর্মীরা আজাদ বিশ্বাসকে দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে স্লোগান দেন।
গত ১৯ অক্টোবর ফতুল্লায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমানের ব্যাপক প্রসংশা করেছেন আজাদ বিশ্বাস। আজাদ বিশ্বাস বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ আদর্শচ্যুতের অভিযোগ আগে থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ সভাপতি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পরেও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির কমিটিতে তাঁকে সহ সভাপতি করা হয়েছে অপর সহ সভাপতি শাহআলমের বিরুদ্ধে।
দলের নেতারা জানান, এ ইস্যুতে তারা বেশ বিব্রত হলেও শাহআলমের কারণে কিছু বলতে পারছেন না। বিপরীতে দল ক্রমশ বিতর্কিত হচ্ছে। মূলত আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন সমঝোতা যেটা এখন খোলাখুলি সেটা বহমান রাখতেই আজাদকে ছাড়ছেন না শাহআলম।
দলের বেশীরভাগ নেতারাই মনে করেন, বিএনপির রাজনীতি এখন শিল্পপতিদের তল্পিতে চলে গেছে। আজাদ বিশ্বাসকে দালাল বলা হলেও তাঁর পেছনে যে শাহআলম সেটারও কোন বিকল্প শব্দ নাই। ফলে দালালদের কাতারে শাহআলম থাকলেও শুধুমাত্র শিল্পপতি ও বিএনপির রাজনীতিকে নিজের অবস্থানের কারণে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ শাহআলম সর্বদা প্রচার করেন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মোটা অংকের একটি খরচ তিনি বহন করেন। কোটি টাকা খরচ করে জেলা বিএনপির কমিটিও এনেছেন যেখানে কুতুবপুর ইউনিয়ন পর্যায়ের তিন পোষ্য নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
ডিম পাড়া হাস হিসেবেই খ্যাত শাহআলম রাজনীতিকেও ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। কোন আন্দোলনে তো ছিলেন না। বরং এ নিয়ে যখন সমালোচনা হচ্ছিল তখন সোনারগাঁওয়ের একটি মামলায় আসামী হওয়া নিয়েও রয়েছে নানা গুঞ্জন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহআলম কোনভাবেই চাচ্ছেন না আজাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। কারণ এতে তাঁর ইমেজের ক্ষতি হবে। এসব কারণেই তিনিও চাচ্ছেন যেকোন ভাবে আজাদ বিশ্বাস যেন পদে থাকেন।