আজ মঙ্গলবার, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আওয়ামী লীগের সাহসী নেতারা কই

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রাচীন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামীলীগকেই মানুষ চেনেন। এ দলটির রয়েছে দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। ৪৯ সালে দলটির জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে বায়ান্ন কিংবা একাত্তারের প্রতিটি ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম। ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামীলীগের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। সেদলটি বর্তমানে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ গঠনের পর এমন নেতৃত্ব সংকট দেখা যায়নি। এমনকি ৭৫ সালেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পরও এমন সংকটের মুখোমুখি হয় এ দলটি। ছাত্র-জনতার আন্দেলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট দেশ ছাড়েন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে দলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নয়, সংকট দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব নিয়েও। তবে আওয়ামীলীগের এ সংকট কবে নাগাদ কাটিয়ে উঠতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার রয়ে গেছে। দলের তৃনমূলের নেতাকর্মীরা রয়েছে ধোয়াশার মধ্যে। ষোলো বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের সাথে সাথে দলটিও হয়ে পড়েছে ছিন্নভিন্ন। মন্ত্রী-এমপিসহ দলের নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ অবস্থায় সকলের মনে একটাই প্রশ্ন- কে ধরবে চরমভাবে বিধ্বস্থ বর্তমান আওয়ামী লীগের হাল? টানা প্রায় ষোলো বছর ক্ষমতায় থেকে গণরোষের মুখে এক সর্বাত্মক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে দলের অস্থিত্ব মুখথুবড়ে পড়েছে সেই দলের হাল ধরার দায়িত্ব কে নেবে? এমন প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সকলের মুখে মুখে।
সূত্রমতে, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার এক মিলিত অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্মরণকালের ভয়াবহ নৈরাজ্য, সহিংসতা ও বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে এক অন্যরকম বিপর্যস্থপূর্ণ বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করলো দেশের মানুষ। এখন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৭৫ পরবর্তী সময়ে দলটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেয়া থেকে শুরু করে নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্বে ছিলেন একাধিক নেতা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর একেএম সামসুজ্জোহা, আলী আহম্মদ চুনকা, তৎকালীন ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন, একেএম নাসিম ওসমান,সেলিম ওসমানরা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছিলেন। এদের মধ্য থেকে কেউ কেউ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। কিন্তু ২৪ সালের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। বর্তমান অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে অনেক নেতা আছেন ঠিক, কিন্তু দলের হাল ধরার মতো সাহসী নেতা নেই!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর এই রাজনৈতিক দলে যে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয় তা দূর করতে দলটির অনেক সময় লেগেছিল। বেগম জহুরা তাজউদ্দিন, মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান, আব্দুল মালেক উকিল প্রমুখ প্রবীণ রাজনীতিকের হাত ধরে অবশেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসে থিতু হয় এই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্ব। ২০২৪-এর ৫ই আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত শেখ হাসিনার একক হাতেই ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের চাবি। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণরূপেই নেতৃত্বশূন্য। প্রশ্ন- এখন কার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াবে আওয়ামী লীগ? যিনিই নেতৃত্বে থাকুন না কেন তিনি কি দেশে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন, না কি বিদেশে থেকে? কোনো রাজনৈতিক নেতা বিদেশে থেকে দলকে পরোক্ষভাবে নেতৃত্ব দিলে দলের সাংগঠনিক কাঠামো কি শক্ত হওয়া সম্ভব? যদি তা না হয়- তাহলে দেশের ভিতর থেকে প্রত্যক্ষভাবে কে নেতৃত্ব দেবে? এমনই অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের রাজনীতিতে। পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত হাসিনা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একেক সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে ধোয়াশা তৈরী করেছেন। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে যেসব কথা বলেছেন সেখানে তার বক্তব্যের পরস্পরবিরোধিতা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই জয় তার প্রথম বার্তায় বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনার পর আপনাদের কী হবে, সেটা আমার চিন্তার বিষয় না, আমার পরিবারেরও বিষয় না- আপনারা বুঝবেন।’ পরদিন ৬ই আগস্ট বিবিসিকে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা রাজনীতিতে ফিরবেন না। আমার মনে হয় এখানেই শেষ। আমার পরিবার এবং আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।’ ৭ই আগস্ট আগের বক্তব্য থেকে পুরো ঘুরে গিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা একা না। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগকে রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা করতে প্র্রস্তুত।’ এমনকি জয় এও বলেছেন দল চাইলে তিনি দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন এবং দলকে আবার ক্ষমতায় আনবেন।সজীব ওয়াজেদ জয়ের এসব কথায় দলের সংশ্লিষ্ট নেতারা কোনোভাবেই আস্থা আনতে পারছেন না। এদিকে তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুসহ প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদেরও কেউ এই মুহূর্তে নিস্ক্রিয় অবস্থায় থাকা দলটিকে নিয়ে কোনো টুঁ শব্দও করছেন না। দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়া, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এবং দেশের ভিতরে আত্মোগোপন করে থাকা এই সময়ে কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকেই আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরেফিরে আসছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর নাম। যদিও দল থেকে বলা হয়েছে এসব ‘গুজব’। তবে দলের হাল ধরবে কে এমন প্রশ্ন দলটির সাধারণ নেতাকর্মীদের। তাই এ মুহূর্তে ঘুরে-ফিরে একটাই প্রশ্ন- কে নেতৃত্ব দিয়ে জাগিয়ে তুলবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে?