আজ বৃহস্পতিবার, ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আইভী যুগের অবসান

স্টাফ রিপোর্টার:
নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভী যুগের অবসান ঘটেছে। সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে দীর্ঘ প্রায় ২১ বছরের ক্ষমতার আসন হারালেন মেয়র আইভী। মেয়র আইভীর পরিবর্তে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত সচিব এ এইম এম কামরুজ্জামান। ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর ২০২৪ সাল পর্যন্ত সবকটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ইতিহাসে বেশ কয়েকটি রেকর্ডের জন্ম দিয়েছেন মেয়র আইভী। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করা হয়েছে। তাদের অপসারণের পর সব সিটিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অপসারিত মেয়ররা হলেন- ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তর সিটির আতিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটির রেজাউল করিম চৌধুরী, খুলনা সিটির তালুকদার আব্দুল খালেক, রাজশাহী সিটির এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটির আবুল খায়ের আব্দুল¬াহ, রংপুর সিটির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সিলেট সিটির মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, ময়মনসিংহ সিটির ইকরামুল হক টিটু, কুমিল্লা সিটির তাহসিন বাহার সূচনা, গাজীপুর সিটির জায়েদা খাতুন এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র টানা তিনবার সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম নারী সিটি মেয়র হওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি। এরপর পরপর তিন মেয়াদে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন তিনি। মেয়র আইভীর জন্ম ১৯৬৬ সালের ৫ জুন। তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আইভীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় শিক্ষাজীবনেই। ১৯৮৪ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এর পরের বছরই মারা যান তার বাবা আলী আহাম্মদ চুনকা।
আইভী রাশিয়ার ওডেসা পিরাগোব মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৯২ সালে। এরপর দেশে ফিরে নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদিকার দায়িত্ব পান ১৯৯৩ সালে। এর ১০ বছর পর (২০০৩ সালে) হন নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সে বছরই তিনি নির্বাচিত হন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে। পৌরসভার নির্বাচনের মাত্র ১৭ দিন আগে নিউজিল্যান্ড থেকে তাকে দেশে আনা হয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দিয়ে তার পক্ষে নারায়ণগঞ্জে জোর প্রচারণা চালান দলের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও বিপলু ভোটে জয়ী হন তিনি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০১১ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত একটানা পৌর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর টানা আট বছর ছিলেন সে পদে। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জকে সিটি করপোরেশন করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটির প্রথম নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগ অবশ্য তাকে মনোনয়ন দেয়নি। দল থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে সমর্থন দেওয়া হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন আইভী। ওই নির্বাচনে তিনি শামীম ওসমানকে প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে দেশের প্রথম নারী মেয়র হিসেবে ইতিহাসে না লেখান। এরপর সিটির দ্বিতীয় নির্বাচনে (২০১৬ সালে) দলের মনোনয়ন নিয়ে ফের মেয়র পদে প্রত্যাবর্তন করেন। ২০২২ সালে তৃতীয় দফায় তিনি দলের মনোনয়ন নিয়েই বিজয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন টানা তিন মেয়াদে কোন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হওয়ার। মেয়র পদে দায়িত্ব পালন ছাড়াও আইভী ‘আলী আহাম্মদ চুনকা ফাউন্ডেশন’ এবং ‘নারায়ণগঞ্জ হার্ট ফাউন্ডেশন’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ডা. আইভী তার শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৯৩-৯৪ সালে মিটফোর্ড হাসপাতালে এবং ১৯৯৪-৯৫ সালে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে অনারারি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন।