আজ মঙ্গলবার, ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অযত্ন অবহেলায় সোনাকান্দা দুর্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সোনাকান্দা দুর্গ। এটি একটি জল দুর্গ। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় দুর্গটি অবস্থিত। সোনাকান্দা দুর্গের অবস্থান নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে। নদীপথে ঢাকার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ নদীপথগুলোর নিরাপত্তার জন্য মোগল শাসকগণ বেশকিছু জলদুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল সোনাকান্দা দুর্গ। ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ বহু দূর দূরান্তের দর্শনার্থীগণ আসেন দূর্গটি দেখতে। বর্তমানে দুর্গটির বেহাল দশা। দেখভালের জন্য নেই কেউ। প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনের অমূল্য এই সম্পদ অযতœ অবহেলায় পরে আছে। যেন দেখার কেউ নেই।
তৎকালীন সময়ে ঢাকাকে রক্ষা করতে নির্মাণ করা হয় ‘ট্র্যায়াঙ্গল ওয়াটার ফোর্ট’ বা ‘ত্রিভুজ জলদূর্গ’। ১৬৫০ সালের কিছু আগে-পরে নির্মিত হয়েছিল এই সব দূর্গ। শীতলক্ষ্যার পশ্চিম পারে অবস্থিত এই জল দুর্গটিকে নির্মাণ করেছেন কে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। মুন্সি রহমান আলী তাঁর গ্রন্থে লিখেছেন, মীর জুমলা দুর্গটি নির্মাণ করেন। অন্যদিকে আহাম্মদ হাসান দানি তাঁর ‘মুসলিম আর্কিটেক্টচার ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে বলেছেন, ইসলাম খাঁন ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন। তাছাড়া দুর্গে কোন শিলালিপি না থাকায় বিষয়টি অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
দুর্গটিতে প্রবেশের জন্য উত্তর দিকে একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। খিলানযুক্ত এ প্রবেশপথ একটি আয়তাকার ফ্রেমে আবদ্ধ এবং উভয়দিক পলেস্তরায় বিভিন্ন আকৃতির প্যানেল নকশায় সজ্জিত। প্রবেশপথের মূল খিলান ছিল চতুষ্কেন্দ্রিক এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পার্শ্ববুরুজ। সোনাকান্দা দুর্গের পার্শ্ববুরুজগুলি অষ্টভুজাকার।
দুর্গটিতে দুটি প্রধান অংশ আছে। একটি অংশ বিশাল আয়তনের মাটির ঢিবিসহকারে গঠিত দুর্গপ্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত, যার মধ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য বহুসংখ্যক প্রশস্ত-অপ্রশস্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। অপর অংশটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ, যা দুর্গের অভ্যন্তরে পশ্চিমাংশে নির্মিত। সুরক্ষিত দেওয়ালের অভ্যন্তরে উঁচু মঞ্চটি ব্যতীত আর কোন স্থায়ী ইমারতের সন্ধান পাওয়া যায় নি। দুর্গপ্রাচীরের সর্বত্র গুলি ছোড়ার ব্যবস্থাসহ মারলোন দ্বারা সজ্জিত। এ মারলোনগুলির গড় উচ্চতা ১ মিটার।
মঞ্চটিতে দুটি বৃত্তাকার অংশ আছে, অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অংশটি যথাক্রমে ১৫.৭০ মি এবং ১৯.৩৫ মি ব্যাস বিশিষ্ট। মঞ্চটি ৬.০৯ মি উঁচু এবং বেষ্টনীপ্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত। দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম পার্শ্বের কোণার বুরুজগুলি পূর্বপার্শ্বস্থ বুরুজগুলি অপেক্ষা অধিক প্রশস্ত। পূর্ব বুরুজের ব্যাস ৪.২৬ মিটার এবং পশ্চিম অংশের দুটি বুরুজের ব্যাস ৬.৮৫ মিটার।
সোনাকান্দা নামের চমৎকার একটি জনশ্রুতি রয়েছে, বার ভূঁইয়াদের অধিপতি ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনাবিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এই দুর্গে নিয়ে আসেন। বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি সোনাবিবি। তিনি নীরবে নিভৃতে দুর্গে বসে রাত-দিন কাঁদতে থাকেন। সেই থেকে দুর্গের নামকরণ হয় সোনাকান্দা।
বর্তমানে রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে দুর্গটির বেহাল দশা। অযত্ন আর অবহেলায় দুর্গটির ভগ্ন দশা। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন এই দুর্গটির রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়োজন বলে মনে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি ঐতিহাসিক এই দূর্গটিকে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষন করে ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য আরো আকর্ষনীয় সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা হউক।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ