আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অভিযান হচ্ছে প্রশংসা পাচ্ছে এত দিন কেন হয় নি সেই প্রশ্ন শহর জুড়ে

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
নারাণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের যোগদানের পর তাঁর কঠোর অবস্থানে সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্বৃত্তদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নানা কারণে আলোচিত নারায়ণগঞ্জ এখন সন্ত্রাস ও মাদকমুক্তের পথে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের জোরালো অভিযানে স্বস্তিতে নগরবাসী।

নারায়ণগঞ্জের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব যোগদানের পর থেকে নগরীর যে সকল স্থানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হতো সেগুলোর এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম তৈরী হয়েছে। চলমান মাদক বিরোধী অভিযান ও বন্দক যুদ্ধের কারনে এমনিতেই মাদক কারবারিরা অতি সতর্কতার সাথে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে তবে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের কড়াকড়িতার কারণে মাদক কারবারিরা আতঙ্কে আত্মগোপন ও গাঢাকা দিয়েছে। ইতি পূর্বে পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ একাধিকবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, ঝুট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তার নেতৃত্বে জেলা পুলিশ।

জেলা পুলিশের এত সকল অর্জনের কারনে স্বস্তিতে নারায়ণগঞ্জবাসী। তবে নগরবাসীর অভিযোগও কম নয়। নগরবাসীর মতে এই সকল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী, ঝুট সন্ত্রাসী এগুলোতে এক দিনে হয়ে যায় নি। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে এ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছে। নারায়ণগঞ্জের অপরাধীরা দীর্ঘ দিন ধরে গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাঁদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসলেও বিগত সময় পুলিশ প্রশাসন এসকল বিষয় দেখেও যেন না দেখার ভান করে ছিলেন। আজ পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের তৎপরতায় হয়তো দীর্ঘদিনের এ ঝঞ্জাল ধীরে ধীরে বন্ধের পথে রয়েছে। তবে নগরবাসীর প্রশ্ন এর আগে যে সকল পুলিশ সুপারগণ নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে ছিলেন, তারা কেন এ সকল অপরাধের বিষেয়ে পদক্ষেপ নিলেন না? না নেওয়ার কারনই বা কি?

নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরু। দীর্ঘ দিন ধরে প্রভাবশালীদের ছত্রছাঁয়ায় নারায়ণগঞ্জবাসীকে জিম্মি করে রেখেছিল। সর্বমহল পরিচিত এই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তারপরও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালীদের সভা-সমাবেশে ব্যানার ফেস্টুন সংবলিত বিশাল মিছিন নিয়ে যোগদান করছে সে। তাতে কি বোঝা যায়? এ সকল সন্ত্রাসীরা কি আপনা আপনি এই শহরে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে? নগরবাসীর মতে নারায়ণগঞ্জে একটি মহল এদের লালনপালন করছেন নিজেদের স্বার্থে। প্রভাবশালীরা ভদ্র লেভাস্ ধরে থাকে। এ সমাজের মানুষ তাঁদের জনগণের পরম বন্ধু আর অভিভাবক মনে করে। অতএব, তাঁরা তাঁদের গ্রহণ যোগ্যতার কারনে প্রকাশ্যে অনেক কিছুই করতে পারেন না, পারেন না অনেক কাঁটা উপরে ফেলতে। যার কারনে মীরুদের মতো সন্ত্রাসীদের তাঁরা লালন পালন করেন এবং তাঁদের যে সকল ব্যক্তি বা পথের কাঁটা রয়েছে তাঁদের শায়েস্তা করেন এবং অনেক সময় দুনিয়া থেকেও চিরতরে বিদায় করে দেন। যেমনটা হয়েছে মেধাবী ছাত্র তানভীর আহম্মেদ ত্বকীর ক্ষেত্রে।

নগরবাসীর মতে, পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের পূর্বে ডজনের বেশি পুলিশ সুপারগণরা নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ড. আনিসুর রহমান, মঈনুল হক, আনিসুর রহমান সহ আরও অনেকে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন চলে আসে তাঁদের দায়িত্বপালনের সময় কেন তাঁরা এ সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। ইতি পূর্বে জেলা পুলিশ সুপারে নির্দেশে ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী শাহ আলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে জেলা পুলিশ গ্রেফতার করে। ফতুল্লা এলাকাবাসীর ভাস্যমতে এই টেনু গাজী ও তার সন্ত্রাসীবাহিনী যুগ যুগ ধরে বহু অপকর্ম করে আসছে। এদের অত্যাচারে ফতুল্লাবাসী অতিষ্ঠ ছিল। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, টেনু গাজী ও তার সন্ত্রাসীবাহিনীরা সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিলো। অপর দিকে বছরের পর বছর ধরে অব্যহত ভাবে চলতে থাকা বিভিন্ন জুয়ার আসরেও হানা দিয়েছে জেলা পুলিশ। গত ১২ ফেব্রুয়ারী নারায়ণগঞ্জের ৫ নম্বর ঘাট এলাকার জুয়ার আসরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে জুয়ার আসর থেকে ৪১ জন জুয়ারিকে আটক করে। আটককৃত জুয়ারিরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। তাঁদের জবানবন্দীর সূত্র থেকে জানা যায়, দীর্ঘ দিন ধরে এই জুয়ার আসরটি রাজু সাংবাদিক নামে একজন পরিচালনা করে আসছিলেন।

জুয়ার আসরের সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যক্তি নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, দীর্ঘ অনেক বছর ধরে এই জুয়ার আসরটি সাংবাদিক রাজু পরিচালনা করে আসছেন। আর এই জুয়ার আসর পরিচালনা বিষয়টি নিয়ে যাতে কোন সংবাদপত্র সংবাদ না করে তাঁর জন্য রাজু প্রতি মাসে নারায়ণগঞ্জের একাধিক পত্রিকা অফিসে মাসিক মাশোয়ারা প্রেরণ করতেন। যার পরিমাণ নেহাত কমও নয়। তবে এই জুয়ার আসর সম্পর্কে পুলিশ প্রশাসন অবগত ছিল। অবগত ছিল নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী মহলটিও। কিন্তু সকলের জানা থাকলেও কেউ এই অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি তবে এর বিনিময়ে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত অনেকই হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যাপক অর্থ।

এ দিকে চলমান বেশ কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবু রহমান মাসুম নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, আইন বিরোধী কাউকে প্রশ্রয় দেবন না। দয়া করে আপোস করবেন না। নারায়ণগঞ্জবাসী মুক্তি চায়। আপনাদের প্রতিটি ভালো কাজের সঙ্গে আমরা থাকবো। তিনি আরো বলেন, সরকারি একজন কর্মকর্তা যখন জুয়ার আড্ডায় হানা দিলেন, মেরি এন্ডারসনে হানা দিয়ে ৭০জন মাদকসেবী, ব্যবসায়ী ধরলেন, মামলা হলো। সেখানে শামীম ওসমানের আত্মীয় টিটুর নাম আসলো। এতে কিছু কিছু ব্যবসায়ী নেতা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেন। আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করলে আমরা অস্ত্র কেড়ে নেবো। এটা কি অপরাধ না? প্রশাসনকে বিভিন্ন ভাবে চ্যালেঞ্জ করে তারা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করার চেষ্টা করছে। অশান্ত করার চেষ্টা করছেন, আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। আপনাদের চোখ রাঙানিকে আমরা ভয় পাই না।

অপর দিকে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্জের আহ্বায়ক ও ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি একটি অনুষ্ঠানে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিচারহীনতার কারণে আজ নারায়ণগঞ্জে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। জুয়া ব্যবসায়ীদের, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তাঁরা নারায়ণগঞ্জ অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ অচল করার ঘোষণা দেয়ার মানুষগুলো, মানুষ রূপী জানোয়ারগুলো আমাদের বহু কথা বলেছে ত্বকী হত্যার পরে। প্রভাবশালীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, আপনারা মনে করেছেন সরকার আপনাদের পেছনে আছে। তাই আপনারা দাপিয়ে বেড়াবেন। না থাকলে দেশের বাইরে আপনাদের বাড়ি আছে, লক্ষ লক্ষ ডলার আছে। আপনাদের কোন ভয় নেই।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী হকারদের উচ্ছেদে মাঠে নামলে শামীম সমর্থকরা তার উপর হামলা করে। নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান তখন আইভী কে হকার উচ্ছেদে সহযোগিতা করে নাই। বর্তমান এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জ শহর কে ফুটপাত দখল মুক্ত রাখতে কাজ অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছেন।