আজ শনিবার, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৩০ ডিসেম্বর ঝুঁকি নেবে জনগণ: বিশিষ্ট নাগরিকরা

তাওসিফ মাইমুন : দলীয় সরকারের অধীনে দেশে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা নির্বাচন ঘিরে সরকারকে ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ব্যাপারে সরকারের উচিত জনগণকে আশ্বস্ত করা। কিন্তু নির্বাচনে ৭দিন আগেও সরকার এ কাজটি করতে ব্যর্থ। নিজেদের সাফল্যে বিশ্বাস করলে সরকার ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করবে। ৩০ ডিসেম্বর জনগণ ঠিকই ঝুঁকি নেবে। কেন না, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের মান ক্ষুণ্ণ হবে।

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে নির্বাচনে জনগণের ঢল নামুক, ভোটকেন্দ্র হোক ভোটারের শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘নাগরিকদের পক্ষে আমরা’ ওই ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে জনমনে রয়েছে প্রবল সংশয়। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। নির্বাচন সরকারের সাজানো ছকে হওয়ায় শঙ্কা ভর করছে। নির্বাচনী প্রচারে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর নানাভাবে দমন-পীড়ন চলছে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছেই। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফাঁকাবুলিতে পরিণত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু করতে নাগরিকদের পক্ষ থেকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। যেখানে ধরপাকড় এখনই বন্ধ করে হয়রানি মামলায় গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানানো হয়। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমকে যথাযথ স্বাধীনতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এসময় খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহীদুল আলম বলেন, প্রতিবাদ করা নাগরিকদের অধিকার। ভয়ের পরিস্থিতিতে জনগণকে সাহস যুগাতে আমাদের প্রতিজ্ঞা ‘আমার ভোট আমিই দেবো, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের হাতে বাংলাদেশকে তুলে দেবো না’। জনগণকে ভোটে যেতে হবে, সোচ্চার হিতে হবে। নইলে মাঠ খালি হয়ে যাবে। সরকার ভয় না পেলে গণমাধ্যমের ওপর এতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতো না, উচিত এগুলো উঠিয়ে নেয়া।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছদ্মবেশে দেশে রাজতন্ত্র হতে যাচ্ছে মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বিরোধী প্রার্থীরা অনলাইন ও অফলাইনে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব’- বাকি দিনগুলোতে সরকারকে তা প্রমাণ করতে হবে। নাগরিকদেরও অধিকার প্রয়োগে জাগ্রত হতে হবে। কেন না, জনগণের হাতে ক্ষমতা না থাকলে দেশের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। জনগণকে সক্রিয় অবস্থানই পারে গণতন্ত্রের ধস ঠেকাতে। প্রত্যেককে নির্ভয়ে ভোট দিতে হবে।

সরকারি দলের নির্বাচনী প্রচার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, সরকার দল সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ভোট চাচ্ছেন, যা আচরণবিধির লঙ্ঘন। আর বিরোধীরা নিজের সুরক্ষা চেয়েও পুলিশ তা দিচ্ছে না। এসব দেখে নির্বাচন কমিশন মুখ বন্ধ করে আছে। তাদের মুখ বন্ধ তবে চোখ কান তো খোলা!

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, অধ্যাপক আহমেদ কামাল প্রমুখ। দেশের বিশিষ্ট ২৯ জন নাগরিকদের পক্ষ থেকে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।