আজ শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হেফাজতে চটেছে আওয়ামী লীগ

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই হুংকার ছাড়ছেন নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের নেতারা। পান থেকে চুন খসলেই বেড়িয়ে পড়েন রাস্তায়। শেখ রাসেল পার্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত পার্ক ল্যান্ডের সামনে এসএসসি ৯৫ ব্যাচের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলার ঘটনায় মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের দায়েরকৃত মামলার পর আবারও হুংকার দিয়েছেন হেফাজত ইসলামের নেতারা। তাদের হুংকারে টার্গেট করা হয়েছে সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে। মামলার দুদিন পর গত ১৯ এপ্রিল ওলামা পরিষদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে হেফাজত ইসলামের আমীর ও ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়াল ও মামলায় আসামী হওয়া ওলামা পরিষদের নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান মেয়র আইভীকে নিয়ে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন।
এর মধ্যে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ভাবে মেয়র আইভীর জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। নারায়ণগঞ্জের জনগণ এখন তার সাথে নেই।’ রাসেল পার্ককে মিনি পতিতালয় আখ্যায়িত করে ফেরদাউস হুংকার দিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি প্ল্যান করে চারুকলায় যাই, আমাদের যাওয়ার আগের বাতাসেই সব তছনছ হয়ে যাবে। আমরা যদি ভাঙ্গি, তাহলে কী এগুলোর অস্তিত্ব থাকবে? এটা পুরোটাই মিনি পতিতালয় হয়ে গেছে। ডিআইটি মসজিদের পাশে এগুলো থাকতে পারবে না।’
অন্যদিকে মাওলানা আব্দুল আউয়াল মেয়র আইভীকে অহংকারি আখ্যায়িত করার পাশাপাশি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ শহরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশ করে দেখিয়ে দিব। সারা বাংলাদেশ থেকে এখানে হেফাজত ইসলামের সমর্থকরা আসবে। মুসল্লিরা আসবে। হেফাজতকে উৎখাত করতে গেলে তুমি নিজে উৎখাত হয়ে যাবে। তুমি ভালো থাকবে না। তুমি অহংকারি হয়ে গেছ। ডিআইটি মসজিদ নিয়ে তোমার কেনো মাথা ব্যথা। তুমি নারায়ণগঞ্জে আসার আগেই ডিআইটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ডিআইটি মসজিদের কোনো দোকান ভাঙতে আসলে লাশ হয়ে ফিরতে হবে।’
মেয়র আইভীকে নিয়ে এমন মন্তব্য ও হুমকির প্রেক্ষিতে বেজায় চটেছেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা। আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘হেফাজত হলো মৌলবাদী অপশক্তি। যারা বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তারা আইনকে ফেস করার আগেই হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু করেছে। তারা মেয়রকে হুমকি দিয়েছে। দেখতে হবে যে মেয়র কে? তিনি আমাদের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শুধু যে মেয়রই হয়েছেন তা নয়, তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেত্রী। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে তিনি তিন তিন বার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তো তার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় কিভাবে হয়। বিগত নির্বাচনের আগেও আমরা দেখেছিলাম যে, এই হেফাজত ইসলাম সহ অনেকেই মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছিলেন। পরে নির্বাচনে তৈমূরের পক্ষ হয়ে বিএনপি এবং হেফাজত সহ অন্যান্য দলগুলো একত্রিত হয়ে মেয়রকে পরাজিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর দীর্ঘদিন হেফাজত ইসলামের নেতারা চুপসে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা নতুন ইস্যুতে আবারও সরব হয়েছেন। মেয়র আইভীকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাদের ভালো করে জেনে রাখা উচিৎ যে, আমরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও কেউ ঘরে বসে থাকবো না। প্রশাসনের উচিৎ তাদের এই বক্তব্যের কারণে জিজ্ঞাসাবাদ করা।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘মেয়রকে হত্যা ও উৎখাতের হুমকি দিয়েছে। আসলে মেয়রতো একজন জনপ্রতিনিধি এবং তিনি দেওভোগের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছে। আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে তিনি। তাছাড়া, তিনি আমাদের আওয়ামী লীগেরও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাকে হত্যা করতে আসলে আমরা আওয়ামী লীগ নেতারা কী ঘরে বসে থাকবো নাকি! তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একজন আস্থাভাজন। তাকে হুমকি দেয়াটা নিন্দনীয়। আমরাও ঘরে বসে থাকবো না।’
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে গতকাল রাতে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনের নম্বরটিতে সংযোগ পাওয়া যায়নি।