আজ শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হেফাজতকে পাল্টা জবাব

স্টাফ রিপোর্টার :
গত শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশে সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি হুংকার দিয়েছেন ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতারা। শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত মহানগর ওলামা পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশে হেফাজত ইসলামের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা হুংকার দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বলেছেন, সময় মত দাত ভাঙা জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন তারা।

জানা গেছে, আল্লামা মামুনুল হক, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সহ সকল আলেমদের মুক্তি এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতারা সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা বলেন, আলেমদের মুক্তি দেয়া না হলে সরকারের ক্ষমতা নিয়ে টানাটানি হবে। প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জকে অচল করে দেয়া হবে। এমনকি সোনারগাঁয়ে মামুনুল হক কাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা সোহাগ রনি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মান্নুকে পিটানোর মত ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

এদিকে, ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের এমন বক্তব্যের নানা ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ কেউ হেফাজত ইসলামের নেতাদের দুধ-কলা দিয়ে পোষা কালসাপ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আবার অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার আস্কারা পেয়েই আজ এমন কথা বলার সাহস করেছে নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের নেতারা।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আসলে আওয়ামী লীগের কিছু প্রভাবশালী নেতাদের আস্কারায় হেফাজত নেতারা চাষাড়ার মোড়ে বড় বড় বথা বলতে পারে। আসলে তারা অনেক কিছুই বলতে পারে। এর কারণ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার আছে। আওয়ামী লীগ তো প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। আওয়ামী লীগরা কথা শোনে এবং এর প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে ব্যবস্থা নেয়। তারা যদি আমাদের চামড়া তুলতেই আসে তাহলে আমরা তাদের দাত ভাঙ্গা জবাব দিব।’

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘হেফাজতের এসব হুংকার আমরা অতিতেও দেখেছি। শাপলা চত্তরে তাদের হুংকার দেখেছি। আমাদের আওয়ামী লীগের তৎকালিন সেক্রেটারি সৈয়দ আশরাফ সাহেব সেদিন বলেছিলেন, ১০ মিনিটের মধ্যে সব ক্লিন করে দিতে। সেখানে ১০ মিনিটের জায়গায় ১১ মিনিট লাগেনি রাস্তা পরিস্কার করতে। আসলে খালি কলসি বাজে বেশি। ওরা বিভিন্ন মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে, ইমামতি করে। ওদের টার্গেট হলো শুক্রবার। শুক্রবার হলেই মাদ্রাসার শিশু কিশোর তালেবে এলেমদের নিয়ে বাধ্য করে তারা সমাবেশ করে। বড় গলায় কথা বলে। আবার যখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামে তখন লেজ গুটিয়ে পালায়। আমরা হেফাজত অথবা সকল মৌলবাদি সংগঠনগুলোকে এক কাতারে দেখি। হেফাজতের চেয়ে আরো বেশি এক্সট্রিম হচ্ছে জামায়াত। সেই জামায়াতই কিছু করতে পারেনি, সেখানে হেফাজত আর কি করবে। হেফাজত তো নিজেদের হেফাজত করতে পারে না। তারা আমাদের কী করবে। তাদের এই সকল হুংকারগুলো আমরা পাগলের প্রলাপ মনে করি। কিছু পাগল এক জায়গায় জমায়েত হয়ে চিৎকার চেচামেচি করে তাদের বাড়ি চলে যায়।’

আনিসুর রহমান দিপু আরও বলেন, ‘হেফাজত নেতারা হলো দুধ কলা দিয়ে পোষা সাপ। তারা সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায়। কিন্তু ছোবল মারার আগেই আমরা লাঠি দিয়ে তাদের মাথা ভেঙ্গে দেই। এই হেফাজত নেতারা যখন চিপায় পরে, তখন তারা আমাদের প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে আসে। তারা পরিচয় দেয় অমুক আমার বড় ভাই, অমুক আমার চাচা, অমুক আমার বাবা। এসকল পরিচয় দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ থেকে তারা বাঁচার চেষ্টা করে। যখন মনে করে তারা বেঁচে গেছে, তখন আবারও হুংকার দেয়। এই সাপের মাথায় বাড়ি দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা হাতে কঞ্চি নিয়ে নামবে তখনও তারা বলবে যে, অমুক আমার বড় ভাই। এটাতো আমরা জানি যে তারা কাকে বড় ভাই বলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একসাথে ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরী করছে। ইসলামের বড় সেবক হচ্ছে আওয়ামী লীগ, ইসলামের বড় সেবক হচ্ছে শেখ হাসিনা। কিন্তু তারা সেই আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘ওনারা কী ইসলামের কথা বলে? মানুষকে পিটিয়ে চামড়া নিয়ে নিবে- এটা কী কোনো ইসলামের কথা হলো। এটা দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামের নাম বলে এজিদ যেমন মহানবী (স:) এর দৌহিত্রদের হত্যা করেছিলেন কারবার প্রান্তরে, এখন দেশে কি তারা সেই এজিদের ভূমিকা নিতে চাচ্ছেন? তারা যদি এসব বলতেই থাকে, তাহলে জনগণই এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘এক সময় আমার বিরুদ্ধে এই হেফাজত নেতারা মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল। তখন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ছাড়া কোনো আওয়ামী লীগ নেতারা আমার পক্ষে স্টেটম্যান্ট দেয়নি। এখন তারা সরকারের বিপক্ষে কথা বলছে। সরকারকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তারা যদি এই দেশের সরকার বিরোধী কোন আস্ফালন দেখাতে চায়, তাহলে এই দেশের মানুষই তাদের প্রতিবাদ জানাবে।’

উল্লেখ্য, শুক্রবারের মহানগর ওলামা পরিষদের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা কামাল উদ্দীন দায়েমী ও মুফতি হারুনুর রশিদের পরিচালনায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, হেফাজত ইসলামের নায়েবে আমীর ও ডিআইটি জামে মসজিদের খতিব আব্দুল আউয়াল, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আব্দুল কাদির, মাওলানা গাজী ইয়াকুব উসমানী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মুফতী এহতেশামুল হক কাসেমী, মাওলানা আবু সায়েম খালেদ।