আজ মঙ্গলবার, ১৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হাইব্রিড প্রশ্নে সতর্ক বিএনপি

 

স্টাফ রিপোর্টার :

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপিতে সুবাতাস বইছে। এই বাতাসে গা ভাসাতে শুরু করেছে সুবিধাবাদিরা। যারা বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে; এমন কী বিএনপি নেতাদেরই চোখ রাঙিয়ে গেছে বছরের পর বছর।
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নিএনপি নেতারা বলছেন, বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যারা বিএনপিতে নিষ্ক্রীয় ছিলেন এবং যারা পরোক্ষ ভাবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছিলেন, তারাই এখন নিজ নিজ মহল্লায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠছেন। এমনকি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অনেক কর্মীই এখন বিএনপিতে ভিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল বিএনপি নেতাদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়েছে বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা।
জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ে দলটিতে অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়েছে। বহু অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের পদপদবি পেয়েছিলেন, আবার অনেকে হয়েছিলেন জনপ্রতিনিধিও। এতে দলটির প্রকৃত নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন। গেল বেশ কয়েকদিনের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সেই অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাদেরকে আওয়ামী লীগের পাশে এসে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। ফলে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিড নেতাদেরকে সু-সময়ের কোকিল বলেও আখ্যায়িত করেছেন বোদ্ধা মহল।
বিএনপিতে এখন সুবাতাস বইতে শুরু করায় সেই সু-সময়ের কোকিলরা ভোলপাল্টাতে শুরু করায় প্রশ্ন উঠেছে- বিএনপিও কী আওয়ামী লীগের মত সেই একই ভুল করবে? যদিও দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সেই সুযোগ দেবেন না তারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীরা অনেক নিগৃহীত হয়েছে। জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে। এখন ওই স্বৈরাচারি সরকারের পতন ঘটায় আমাদের প্রকৃত নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও মুক্তি পেয়েছে। তো বিগত সময়ে যারা সৈরাচারিদের সাথে মিলে মিশে ছিলেন এবং বিএনপি করেনি- তারা যদি এখন ভোল পাল্টাতে চায়- তাহলেও তাদেরকে আমাদের নির্যাতিত বিএনপি নেতারা মেনে নিবে না। আমরা অনুপ্রবেশকারী এবং হাইব্রিডদের বিষয়ে সতর্ক রয়েছি। যেহেতু আমরা রাজনীতির মাঠেই ছিলাম- সেহেতু আমরা জানি যে, কে বিএনপির কর্মী আর কে সুবিধাবাদী। তো এই সুবিধাবাদীদের বিষয়ে আমাদের প্রকৃত নেতাকর্মীরা যেন সতর্ক থাকে- সেই আহবান রইল।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমাদের দলে কোনো অবস্থায় অনুপ্রবেশকারী ঢুকতে দেয়া হবে না। সৈরাচারি সরকারের সাথে যারা কাজ করেছে- তাদের সহযোগির ভূমিকা পালন করেছে- তারা এখন বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক- তবে আমরা তাদেরকে বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করতে দিব না। তাদেরকে আমরা প্রতিহত করবো। বিগত সরকারের মত চাঁদাবাজ, ধান্দাবাজ, মাস্তানি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, ডিস ব্যবসা, ইন্টার নেট ব্যবসা, জমি দখল, লুটতরাজ করা সহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজে যারা সম্পৃক্ত- এমন কেউ যদি আমাদের দলেরও হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর নিগৃহীত হয়েছে। আমরা যেহেতু মাঠ পর্যায় থেকে বিএনপি করে এসেছি- সেহেতু আমরা জানি যে, কে প্রকৃত বিএনপি এবং কে সুবিধাবাদি ও আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টির সাথে ছিলো। তাই হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদিদের প্রশ্নে আমরা সর্তক রয়েছি। আজকেও একটি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে, আমাকে রিসিভ করার জন্য কিছু লোক জড়ো হয়েছে- যারা বিগত সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল এবং যারা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সাথে সম্পর্ক গড়েছিল। তো আমি বা আমার নেতাকর্মীরা কেউ-ই তাদের সাথে হাত মিলাইনি। এর কারণ হলো তাদেরকে একটা বার্তা দিয়েছি যে, হাওয়া পরিবর্তন ঘিরে তারা যেন এখন বিএনপিতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। আমাদের দলে নেতাকর্মীদের অভাব নেই- যারা বিগত প্রায় ১৮ বছর ধরে জুলুমের শিকার হয়েও দলকে আগলে রেখেছেন।’
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে আজই একটা নির্দেশনা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি এবং এ কোনো অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনগুলোতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে যোগদান করানো যাবে না। আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। এখন কেউ সমর্থক থাকতে পারে- তবে যারা আওয়ামী লীগের সাথে থেকে হৃষ্ট-পুষ্ট হয়েছে- এখন আবার হাওয়া বদলের কারণে বিএনপির সাথে আসতে চাচ্ছে, তাদেরকে আমরা কোনো সুযোগ দিব না। আমাদের নিজেদের নেতাকর্মীরাই বিগত সময়ে বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বহু নিগৃহীত হয়েও রাজপথে ছিলো- তাদেরকে আমরা মূল্যায়ন করবো। কোনো সুবিধাবাদিদের নয়।’
সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘বসন্তের কোকিল এবং সুবিধাবাদীরা সুযোগ পেয়ে মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। যারা করছে তারা বিএনপির কেউ না। আমাদের বিএনপি নেতাকর্মীরা মানুষের জানমাল রক্ষায় কাজ করছে। তো এই বসন্তের কোকিল, সুবিধাবাদী এবং বিগত সময়ে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছে, তাদের বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। বিএনপিতে কোনো অনুপ্রবেশকারী কিংবা হাইব্রিডের জায়গা হবে না। আমরা আমাদের দলের সক্রিয় কর্মীদের মূল্যায়ন করবো ইনশাআল্লাহ।’