আজ শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সোনারগাঁয়ে নষ্ট হচ্ছে ভোটের পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার :

উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের হস্তক্ষেপ বা প্রভাবমুক্ত রাখার নির্দেশনা এলেও সোনারগাঁয়ে তা উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল হায়সার হাসনাতের বিরুদ্ধে। একই সাথে তার সমর্থনকে পুঁজি করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরাও অসংলগ্ন ও উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখে ভোটের পরিবেশকে প্রভাবিত করে যাচ্ছেন। গতকাল এমপি কায়সার হাসনাত এবং তার অনুগত কতিপয় চেয়ারম্যানকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এমন অভিযোগ এনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সোনারগাঁয়ের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম। এমপির প্রকাশ্য সমর্থনে ইউপি চেয়ারম্যানরা বক্তব্যের মাধ্যমে ভোটের মাঠে আস্ফালন দেখিয়ে যাওয়ায় নির্বাচনি পরিবেশ নিরপেক্ষ থাকছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন এই চেয়ারম্যান প্রার্থী।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন হলেও এতে নিয়মিত আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছেন স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাত। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নির্বাচনে এমপির হস্তক্ষেপ এবং দ্বিমুখি পদক্ষেপে প্রভাবিত হচ্ছে ভোটের মাঠ। সাধারণ ভোটারদের মাঝেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।
আগামী ২১ মে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। যারা প্রত্যেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। এর মধ্যে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করা মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির অন্যতম কার্যকরি সদস্য পদে আছেন। মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নান্নু আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে, একই পদে থাকা আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হায়দার নির্বাচনে লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে। আর আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবু আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য পদে।
প্রার্থীদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ নেতা হলেও সোনারগাঁয়ের এমপি কায়সার হাসনাত শুরুতে রফিকুল ইসলাম নান্নুকে নিয়ে মোগরাপাড়ায় নিজ বাসভবনে রুদ্ধদার বৈঠক করে তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ক’দিন না যেতেই তার সমর্থনে পরিবর্তন দেখা দেয়। মাঠে দুহাতে টাকা খরচ করে যাওয়া আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবুকে নতুন করে সমর্থন দেন এমপি।
এমপির সমর্থন পাওয়া বাবুর পক্ষে কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান এবং ছাত্রলীগের নেতারা হস্তক্ষেপ মূলক অসংলগ্ন বক্তব্য রাখতে শুরু করেন।
এর মধ্যে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিতর্কিত লায়ন বাবুল সম্প্রতি একটি সভায় বলেন, ‘এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত যাকে সমর্থন করছে, আমরা মনে কইরা নিমু প্রধানমন্ত্রী তাকে সমর্থন দিছে। আমার পরিষদের সকল মেম্বারবৃন্দ এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি এমপি কায়সার হাসনাতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে কাজ করি, তাহলে এমপি আনারস মার্কায় যাকে সাপোর্ট করেছে (বাবুল ওমর বাবু) তাকে নিয়ে বারদী থেকে আমরা কামিয়াব হইতে পারমু।’
এমপির সমর্থনকে প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন হিসেবে মন্তব্য করায় লায়ন বাবুলকে নিয়ে তুমুল ক্ষোভ ও সমালোচনা চলছে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মাঝে। একই সাথে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবীর আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুর পক্ষ নিয়ে অপর প্রার্থী কালামের নির্বাচনী কর্মীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ সহ কতিপয় ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর পক্ষ নিয়ে মাঠে প্রচারনায় নেমেছেন এবং বাবুকে এমপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে অভিহিত করে ভোটের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন।
গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনি আচরণবিধি সংক্রান্ত সভায় এসকল অভিযোগ তুলে ধরে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় কমিটির মিটিংয়ে ঘোষণা দিয়েছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে কোনো এমপি যেন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নেয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকেও এই নির্দেশনা এসেছে। আমাদের সোনারগাঁয়ের এমপি কায়সার হাসনাত বিভিন্ন ভাবে তার বাসায় সভা করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ, চেয়ারম্যান, মেম্বার; সবাইকে নিয়ে তিনি একজন প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। আজকে ৩-৪ দিন যাবত এমপির সমর্থিত প্রার্থী ভোটের মাঠে বিক্ষুব্ধ আচরণ করে যাচ্ছেন এবং ওই প্রার্থীর পক্ষে কয়েক জন ইউপি চেয়ারম্যান এমন বক্তব্য দিচ্ছেন যা ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করছে। বারদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল বলেছেন যে, এমপির মনোনয়ন মানেই প্রধানমন্ত্রীর মনোনয়ন। কায়সার হাসনাতের সমর্থন মানে এমপির সমর্থন। এসকল বক্তব্য দিয়ে সোনারগাঁয়ের সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে।’
অভিযোগ করে কালাম আরও বলেন, ‘এমপি সাহেব তার সমর্থিত প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেয়ার পরে ইউপি চেয়ারম্যানরা যেভাবে মাঠে নেমেছে- এতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকছে না। গত শনিবার জামপুর ইউনিয়নের বাবুর বাজার মাঝেরচর কেন্দ্রের পাশে আমার নির্বাচনী সভা ছিলো। সভায় আমার কর্মী সমর্থকরা অংশ নেয়ার আগে জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ন কবীর এবং প্রার্থীর ভাই সহ সেখানে লোকজন নিয়ে উপস্থিত হয় এবং একটি চায়ের দোকানে লাগানো তাদের সমর্থিত প্রার্থীর পোষ্টার বৃষ্টিতে ভিজে খশে পড়ায় হুমায়ন চেয়ারম্যান এবং ওই প্রার্থীর ভাই সহ সেই চায়ের দোকানীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তাকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এর মূল কারণ হলো, ওই দোকানীর ছেলে আমার কর্মী হিসেবে কাজ করছে। আমি চাই এই বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
বাবুল ওমর বাবুকে উদ্দেশ্য করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে কালাম আরও বলেন, ‘আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাঁচপুরে বলেছে যে, কাঁচপুরে ৪৭ হাজার ভোট সকালে নাস্তা করার আগেই শেষ কইরা ফালামু- তারপর অন্যদিকে যামু।’ এই ধরনের কথা যদি বলা হয়, তাহলে মানুষ ভোট কেন্দ্রে কিভাবে যাবে। ভোটারদের তো বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ