আজ শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সুযোগে পকেট কাটছে ‘বন্ধু-বাঁধন’

বিষাদ সিন্ধু:

নামে বন্ধু, আচরণ রক্তচোষা পিশাচের মত! সাধারণ মানুষের রক্তচুষে খাওয়াটাই যেন এদের নেশা। বলছি, চিটাগাং রুট থেকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত চলাচলরত ‘বন্ধু পরিবহন’র কথা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে এই পরিবহনটি প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা! যা মাসের হিসেবে প্রায় ত্রিশ লাখ এবং বছরে তিন কোটি টাকার মত!

ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকার কারণে একটি চক্র প্রকাশ্যেই সাধারণ মানুষের পকেট কাটছে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়াতে তারা এমনটা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।

সূত্র বলছে, চিটাগাং রুট থেকে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল পর্যন্ত বন্ধু পরিবহনের বাস চলাচল করে ২৫টি। যার তিনটি বাদে বাদ বাকি ২২টি বাস চলে সিএনজিতে। এই পরিবহনের নিয়মিত ভাড়া ছিল ২০ টাকা। গেল কিছুদিন পূর্বে জ্বালানি তেল বৃদ্ধির অজুহাতে বর্তমানে তারা যাত্রী প্রতি ভাড়া নিচ্ছে ২৮ টাকা করে। যা পূর্বের ভাড়া থেকে জনপ্রতি ৮ টাকা করে।

সূত্র জানায়, ওই রুটে চলাচলরত মোট বাসের মধ্যে মাত্র তিনটি চলে ডিজেলে। বাকি ২২টি সিএনজি গ্যাস দ্বারা চালিত। প্রতিটি বাসের সিট সংখ্যা ৪২ থেকে ৪৮টি। এবং প্রতিটি গাড়ি প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ বারা চলাচল করে। সে হিসেবে প্রতিটি গাড়ি থেকে (একবার) অতিরিক্ত ৩৩৬ টাকা করে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় হচ্ছে। যা গাড়ি প্রতি (১২ বার) ৪০৩২ টাকা। এ হিসেবে প্রতিদিন ২২ গাড়ি (সিএনজি) থেকে ৮৮ হাজার ৭০৪ টাকা নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। যা মাসের হিসেবে দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এবং বছরের হিসেবে এই অঙ্ক দাঁড়াবে ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সিএনজি গ্যাসের দামতো বৃদ্ধি পায়নি, তাহলে কোন যুক্তিতে তারা যাত্রী প্রতি আট টাকা করে বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে, এবং কারা দিচ্ছে তাদেরকে এই আস্কারা? এছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে, অতিরিক্ত ওই টাকা যাচ্ছে কাদের পকেটে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পরিবহনটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আট নম্বর ওয়ার্ডের সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী মোহসীন ভূঁইয়ার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম। ইতোপূর্বে এই সাইফুল ইসলাম একই রুটে চলাচলরত নসিব পরিবহন নিপুকে সাথে নিয়েই পরিচালনা করতেন।

এ ব্যাপারে বন্ধু পরিবহনের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে থাকার অজুহাত দেখিয়ে বলেন, “আমি এখন মিটিংয়ে আছি। আপনি পরে ফোন দেন।”

এদিকে শুধু বন্ধু পরিবহনই নয়, বন্ধন, উৎসব এবং হিমাচল পরিবহন ব্যাতিত নারায়ণগঞ্জ থেকে সোনারগাঁ রুটে চলাচলরত বাঁধন, ঢাকা-গাজিপুর রুটের অনাবিলসহ অন্যান্য পরিবহনগুলোও সিএনজি গ্যাসে চলাচল করে। তারাও বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে বলে জানা গেছে। এভাবে প্রতিদিনই যাত্রীদের পকেট থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা কেটে নিচ্ছে শক্তিশালী এই পরিবহন সিন্ডিকেট। পুরো বিষয়টিকেই অরজকতা বলে মনে করছেন নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি।

তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে খবর নিয়েছি, “এসব রুটে চলাচলরত বন্ধন ও উৎসব ছাড়া অন্যান্য বাসগুলো সিএনজিতে চলে। কিন্তু তারা বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা শিগগিরই ডিসির সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে ভাড়া নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তার সমাধান চাইবো।”

রফিউর রাব্বি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের এই পরিবহন সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করে ওসমান পরিবারের লোকজন। এখান থেকে চাঁদার একটা বিরাট অংশ যাচ্ছে তাদের পকেটে। তাদেরকে যে চাঁদা দিতে হয় তা যাত্রীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখানে এটা চলছে বহুদিন থেকে।”

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “আমরা ইতোমধ্যে বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছি, ডিজেল চালিত গাড়ি এবং গ্যাস চালিত গাড়ির ভাড়া নির্ধারিত করতে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসে চালিত কোনো গাড়ি যদি ডিজেল চালিত গাড়ির ভাড়া আদায় করে তাহলে আমরা তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”