আজ শনিবার, ১৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সেন্ট্রাল ঘাটে নৌকা ও মাঝি নিয়ে ত্রিমুখী বক্তব্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাটে নৌকায় ইঞ্জিন বাসানো নিয়ে নৌকা মাঝিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। এনিয়ে ঘাটে ত্রিমুখী বক্তব্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। তবে এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশনা ও সুষ্ঠু সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানাগেছে।

২৯ অক্টোবর রোববার সকালে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটের মাঝি সমিতি, সাধারণ মাঝি ও ঘাট ইনচার্জের সাথে কথা বলে নানা তথ্য পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত কিছুদিন ধরে সেন্ট্রাল খেয়াঘাটে নৌকা মাঝি সমিতির সমর্থনে মুষ্ঠিমেয় কিছু মাঝি নৌকায় ইঞ্জিন স্থাপন করে যাত্রী পারাপার করতে চাইলে ইঞ্জিন বিহীন মাঝিরা ইঞ্জিন না বসানোর দাবিতে ১৭৯ জন মাঝি এমপি সেলিম ওসমানের নিকট আবেদন জানান। এরপর দফায় দফায় ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করতে থাকে। এদিকে মাঝিদের দুপক্ষ দুই ধরণের কথা বলছে।

সেন্ট্রাল খেয়া ঘাটের মাঝি সহ ঘাট ইনচার্জের ত্রিমুখী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ঘাটের নৌকা মাঝি সমিতির লোকেরা নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেছেন, ‘এমপি সেলিম ওসমান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহেরের নির্দেশনায় নৌকায় ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে।’

অন্যদিকে বাকি ১৭৯ জন মাঝিরা বলছেন, ‘এমপি সেলিম ওসমান এমন কোন কথাই বলেনি। মাঝি সমিতির লোকেরা কোন এক অদৃশ্য শক্তির সমর্থনে এমপির অনুপস্থিতিতে তার নাম ব্যবহার করে নৌকায় ইঞ্জিন স্থাপন করছেন।’

তবে ঘাট ইনচার্জ দিদার খন্দকার জানলেন ভিন্ন কথা। তিনি নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘এমপি সেলিম ওসমান নৌকায় ইঞ্জিন বসানোর কোন কথাই বলেননি। মাঝিদের আয় কমে গেছে এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান বলেন, ‘তাহলে ভিন্ন কোন বিকল্প ব্যবস্থা করে আয় বাড়িয়ে নাও। তবে এমপি সেলিম ওসমান নৌকায় ইঞ্জিন লাগানোর কথা বলেননি।’

সেন্ট্রাল ঘাটের নৌকা মাঝি সমিতির সহ সভাপতি পিয়ার মোহাম্মদ নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, ‘আমরা এমপি সেলিম ওসমান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহেরের আশ্বাসে নৌকায় ইঞ্জিল স্থাপন করেছি। এই দুইজনের নির্দেশেই আমরা নৌকায় ইঞ্জিন লাগিয়েছি। প্রতিটি নৌকায় ইঞ্জিন লাগাতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে পরবর্তীতে ১৭৯ জন নৌকার মাঝির আন্দোলনে আবারো এই কাজ থমকে যায়।

এখন জাপা সভাপতি আবু জাহের বলছেন, ‘এমপির নির্দেশনা অপেক্ষায় থাক। তিনি দেশে ফিরে আসলে আমি তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব। এরপর তিনি যা সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রায় দেড় মাস পূর্বে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহেলের সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ‘নৌকায় ইঞ্জিন লাগানোর ব্যাপারে এমপি সেলিম ওসমানের সাথে আমার কথা হয়েছে। তোমরাও তার সাথে কথা বলো। এর কিছুদিন পরে এমপি সেলিম ওসমান ঘাট পার হওয়ার সময় মাঝি সমিতির সভাপতি শরীফ, মাসুদ এবং আমি তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলি। ট্রলারের কারণে নৌকার মাঝিদের আয় কমে গেছে। তাই ট্রলার ছাড়ার সময় কমিয়ে সকাল ৭টা থেকে শুরু করা সহ নৌকায় ইঞ্জিন লাগানের কথা বললে তিনি ট্রলারের সময় কমানোর কথা মানা করে দিয়ে নৌকায় ইঞ্জিন লাগানোর কথায় সারা দিয়ে আমাদের আশ্বাস দেন। এসময় তিনি নৌকার ভাড়া ৫ টাকা থেকে কমিয়ে ২ টাকা করার কথাও বলেন। এরপর থেকে আমরা নৌকায় ইঞ্জিন লাগাতে উদ্বুদ্ব হই।

নৌকার ভাড়া বাড়ানোর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঘাটে অনেকগুলো ট্রলার ছাড়ার পর থেকে নৌকার মাঝিদের আয় কমে গেছে। সব যাত্রীরা ট্রলার দিয়ে নদী পারাপার হয়। একারণে আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাই মাঝিরা ৫ টাকা করে ৮-১০ জন যাত্রী নিয়ে থাকে। আর রিজার্ভ নৌকার ক্ষেত্রে ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা নিয়ে থাকে। এগুলো সবই বেঁচে থাকার তাগিদে মাঝিরা করছে।

এদিকে ১৭৯ জন মাঝিরা তাদের বিপরীতে গিয়ে বলছেন, ‘নৌকায় ইঞ্জিন স্থাপন করা হলে ইঞ্জিন বিহীন মাঝিরা তো না খেয়ে মরবে। তাহলে আমাদের কি হবে। এমনিতে ট্রলারের কারণে আগের তুলনায় যাত্রী অনেক কমে গেছে। এখন যদি কিছু নৌকায় ইঞ্জিন বসানো হয় তাহলে যাত্রীরা ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় উঠবে না। এছাড়া এই ঘাটে এতগুলো নৌকা চলাচল করে তাতে যদি ইঞ্জিন বসানো হয় তাহলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে নৌকার মাঝি সমিতির লোকেরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের মিয়ার সাথে মিলে এই কাজ করছে বলে শুনতে পেরেছি।

নৌকা মাঝি সূত্রে জানা যায়, ‘জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের অনেক আগে থেকেই নৌকা মাঝি সমিতির লোকজনদের অদৃশ্য কারণে সমর্থন দিয়ে আসছিল। এর মধ্যে মাঝি সমিতির লোকদের ইঞ্জিন বসানের কাজে মূল হোতা হিসেবে তার নাম উঠে আসে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে মাঝি সমিতির দাবিগুলো এমপির কাছে হাজির করে তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তোষামত করে আসছেন। এবং পরোক্ষভাবে মাঝি সমিতির লোকদের সমর্থন করে আসছেন বলে জানাগেছে।

এদিকে ঘাট ইনচার্জ দিদার খন্দকারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ‘এমপি সেলিম ওসমান নৌকায় ইঞ্জিন বসানোর কোন কথাই বলেননি। মাঝি সমিতির লোকেরা মাঝিদের আয় কমে যাওয়ার কথা বলায় তিনি বিকল্প কিছু করার কথা বলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মাঝি সমিতির লোকেরা কি বুঝে অথবা কার ক্ষমতা বলে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা বুঝতে পারছিনা। তবে নৌকায় ইঞ্জিন বসানোর ব্যাপারে কেউ একজন পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে এটাই মনে হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের মাঝি সমিতির লোকদের নির্দেশেই এমনটা হচ্ছে বলে আমিও শুনেছি তবে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছিনা। আর ঘাট দুটি বরাবর হওয়ায় নৌকায় ইঞ্জিন লাগালে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রায় সময় নানা সমস্যা দেখা দিবে।’