নিজস্ব প্রতিবেদক:
কোন মালিক পৃথিবী বিনির্মান করেনি উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেছেন, শ্রমিকেরা তিলে তিলে তাদের শ্রম দিয়ে পৃথিবী সুন্দর করেছে। সুতরাং শ্রমিকের হাত কে যারা অবজ্ঞা করে তারা দেশ ও জাতির শত্রু।
‘শ্রমিক মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মহান মে দিবস ২০১৮ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
মোঃ আমিনুল হকের সভাপতিত্বে ও হুমায়ূন কবিরের সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিঃ পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও শিল্প পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডিসি বৈঠকে একমাত্র আমি বলেছি অটোরিক্সা ও টেম্পু উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসন করে দিতে হবে। আমরা শুধুমাত্র সরকারি চাকুরী করতে এখানে আসিনি, এসেছি এই জেলার সকল মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে। আমরা শুধুমাত্র সরকারি চাকুরী করতে এখানে আসিনি, এসেছি এই জেলার সকল মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্যে।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, এই বাংলাদেশকে আমরা সবাই মিলে এমনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি যাতে ২০২১ সালের ভেতর মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের ভেতর উন্নত রাষ্ট্রে আমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। আমরা যারা শ্রমিক আছি, আমরা আমাদের মেধা দক্ষতা দিয়ে একসময় মাঝারি ক্ষুদ্র ও বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক হবো আর বিদেশ থেকে শ্রমিকেরা আমাদের দেশে কাজ করতে আসবে। শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন বাঁধাই বাধা নয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে আর আপনারা প্রতিনিয়ন পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা হচ্ছেন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তিযোদ্ধা।
আপনাদের সকল দাবি দাওয়া আমাকে জানান, আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের সমস্যা সমাধান করতে সচেষ্ট থাকব। অনুগ্রহ করে ভাংচুর রাস্তা অবরোধ করে মানুষকে কষ্ট দিবেন না। কারন এই দেশ আপনাদের আর এর সৌন্দর্য নষ্ট করলে আপনারই ক্ষতি। টাকা পয়সা থাকা আর সুখ এক জিনিষ নয়। অনেকে প্রচুর সম্পদশালী হয়েও শান্তিতে নেই। আর কেউ কেউ গরীব হয়েও আরামে ঘুমাতে পারে। আপনারা আপনাদের সন্তানকে সৎ মানুষে পরিনত করুন। মাদক, জঙ্গিবাদ থেকে তাদের দূরে রাখুন। এতে করে আপনাদের ঘর যেমন শান্তি আসবে তেমনি সমাজে আইনশৃঙ্খলা ভালো থাকবে।
শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে জাতীয় শ্রমিক লীগ জেলার সাধারণ সম্পাদক মাঈনুদ্দিন আহমেদ বাবুল তার বক্তব্যে বলেন, শ্রমিক আন্দোলনে ১৮৭৬ সালে যারা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন তাঁদের জানাই লাল সেলাম। তাঁদের রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে পেরেছি। বিগত বিএনপি সরকার আমাদের অনেক শ্রমিককে হত্যা করেছে। হত্যার পর বিভিন্ন আন্দোলন করে আমাদের দাবি আমরা আদায় করেছি। কিন্তু যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে তখন আন্দোলন করতে হয় নাই শুধু বলাতেই আমাদের বেতন দ্বিগুন করা হয়েছে। আমাদের বেতন বাড়িয়ে ৫৩০০ টাকায় উন্নিত করেছেন। আমাদের শ্রমিক দাবি আদায় করেছেন। আওয়ামীলীগ সরকার শ্রমিক বান্ধব সরকার।
মালিক প্রতিনিধির বক্তব্যে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি (অর্থ) মো. হুমায়ুন কবির শিল্পী বলেন, যাদের জন্য দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সেসব বিপ্লবী শ্রমিকদের আমার লাল সেলাম। আমাকে এখানে মালিক প্রতিনিধি বলা হয়েছে। কিন্তু আমি মালিক নই, আমি আমার ফ্যাক্টরিতে নিজে কাজ করি। আমিও শ্রমিক। আপনাদের কারনে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেবল বিয়োগ করি, কাজ করেন আপনার। অতএব আপনাদের বুভুক্ষু রেখে, আপনাদেরকে বঞ্চিত রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে না। আপনাদের অবদানেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হচ্ছে। শ্রমজীবি মানুষ আর মালিকদের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ। আপনাদের দাবিগুলো তুলে ধরার জায়গা কিন্তু কম নয়। আপনারা আপনাদের দাবি তুলে ধরবেন, আমরা বিবেচনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করবো। আপনাদের ছাড়া উন্নয়ন কোন মতেই সম্ভব নয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে আর আপনারা আপনাদের পরিশ্রম দিয়ে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করবেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগের শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যান বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ কাউসার আহমেদ পলাশ, জেলা ও মহানগর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক মোঃ গোলাম কাদির, জেলা মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক উমাইয়া বেগম সুমি, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারন সম্পাদক কামরুল হাসান মুন্না, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সহ-সভাপতি আবুল খাঁয়ের ভুঁইয়া।