আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শহরের অবৈধ সিএনজির ছড়াছড়ি

স্টাফ রিপোর্টার :

নারায়ণগঞ্জ শহরের অবৈধ স্ট্যান্ড ও রুট পারমিট বিহীন অবৈধ সিএনজির ছড়াছড়ি। এসব অবৈধ সিএনজি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যথাচ্ছা চলাচলসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে তুলেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। যার অধিকাংশই মুন্সিগঞ্জ জেলার অথবা মুন্সিগঞ্জগামী। এসব অবৈধ সিএনজি ও স্ট্যান্ড শহরে যানজট ও ভোগান্তি অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জেলা বিআরটি অফিসের তথ্যমতে, আন্তঃজেলা কোনো সিএনজি’কে রুট পারমিট দেয়নি দপ্তরটি। শহর থেকে চলাচলকারী আন্তঃজেলা সকল সিএনজি অবৈধ বলেও জানান তারা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) তথ্যমতে, নাসিক কর্তৃক মোট ১০টি বৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। যার মধ্যে সিএনজি স্ট্যান্ড ৫টি। এগুলো হলো, শহরের ১ নং রেলগেইট সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড, জীমখানা সড়ক সিএনজি স্ট্যান্ড, জালকুড়ি টিসি রোডের মাথায় সিএনজি স্ট্যান্ড, বন্দরের নবীগঞ্জ সিএনজি ষ্ট্যান্ড (কামাল উদ্দিনের মোড়সহ), বন্দর ১নং খেয়াঘাট রোড ও পার্শ্বস্থ সিএনজি ষ্ট্যান্ড।
অন্যদিকে নাসিকের অবৈধ স্ট্যান্ডের তালিকায় রয়েছে, সরকারী মহিলা কলেজের সামনে, চাষাড়ার খাজা মার্কেটের সামনের নবাবসলিমুল্লাহ সড়কে, রাইফেল ক্লাবের পার্শ্ববর্তী, চাষাড়া শহীদ মিনার সংলগ্ন, সোনালি ব্যাংকের সামনে, হক প্লাজার সামনে, দুই নম্বর রেলগেট সংলগ্ন, চাষাড়া নবাব সলিমুল্লা সড়কের সুগন্ধা বেকারীর সম্মুখ হতে বাগে জান্নাত মসজিদ পর্যন্ত, খানপুর হাসপাতালের সামনে এবং হাজীগঞ্জ গুদাড়াঘাট সংলগ্ন সিএনজি স্ট্যান্ড।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এসব অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে ৪ থেকে ৫টি অবৈধ স্ট্যান্ড থেকে রুট পারমিটহীন অবৈধ সিএনজি চলাচল করে। প্রতিদিনি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চাষাড়া শহীদ মিনার, সোনালি ব্যাংকের সামনে, দুই নম্বর রেলগেট, করিম মার্কেট, মন্ডলপাড়া ব্রীজ থেকে হাজারেরও অধিক সিএনজি পাশর্^বর্তী জেলা মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুর রুটে চলাচল করে। এর মধ্যে মন্ডলপাড়া ব্রীজ ছাড়া বাকি সবগুলোই হচ্ছে অবৈধ স্ট্যান্ড। শহরের মূল সড়ক বঙ্গবন্ধু সড়কে করা এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে সারাদিন সারিবদ্ধভাবে সিএনজি রেখে যাত্রী উঠা-নামা করা হয়। যার ফলে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়।
তথ্যমতে, কয়েক বছর আগেও শহরের মধ্যে এত অবৈধ স্ট্যান্ড ও অবৈধ সিএনজি ছিল না। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নৌ রুট ছাড়া নারায়ণগঞ্জ শহর দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলায় যাতায়াতের তেমন কোনো উল্লেখ্যযোগ্য সড়ক পথ ছিল না। যেটি ছিল সেটিও শহরের বাইরে পঞ্চবটি থেকে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সড়ক হয়ে মুক্তারপর দিয়ে ছিল। তবে শহরের মন্ডলপাড়া বীজ সংলগ্ন নাসিকের একটি বৈধ সিএনজি ছিল। এই স্ট্যান্ড থেকে কিছু সংখ্যক সিএনজি মুন্সিগঞ্জ কাশীপুর ইউনিয়ন হয়ে মুন্সিগঞ্জ যাতায়াত করত।
এদিকে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর মাসে মুন্সিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এরপর ২০২০ সাল থেকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মুন্সিগঞ্জগামী যানবাহনের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। একই সাথে বাড়ছে থাকে ওইসব যানবাহনের জন্য অবৈধ স্ট্যান্ডের সংখ্যাও। তবে এ বিষয়ে জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। যার ফলে এক সময়, মুন্সিগঞ্জগামী যানবাহনের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পায়। সূত্রমতে, এসপি জায়েদুল আলমের সূত্র ধরেই নারায়ণগঞ্জ শহরের মুন্সিগঞ্জের সিএনজি ও ইজিবাইক রুট তৈরী হয়।
পরবর্তী পুলিশ সুপার পরবর্তন হলে এ সংখ্যা কিছুটা কমলেও রয়ে যায় রুট এবং অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো। যা এখনো বহাল আছে।
বিআরটি জেলা কর্যালয়ের তথ্যমতে, পুরো জেলায় মোট ৬ হাজার ৩৬০টি সিএনজিকে রুট পারমিট দেয়া হয়েছে। এ রুট পারমিট শুধু নারায়ণগঞ্জ জেলার ভিতরে চলাচলের জন্য। তবে আন্তঃজেলা চলাচলের জন্য কোনো রুট পারমিট দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, এসব অবৈধ সিএনজি এবং স্ট্যান্ডগুলো শহরের যানজটের একটি প্রধান কারণ। নারায়ণগঞ্জের যানবাহনের সংখ্যা এমনিতেই বেশি। এর উপর এসব অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশা যোগ হয়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্যোগী নয়, কারণ তারা এই যানবাহনগুলোতে থেকে নিয়মিত মাশোয়ারি নেয়।
তিনি আরও বলেন, স্থল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মুন্সিগঞ্জের একটি রুট তৈরি হয়েছে। চাইলেই এটি বন্ধ করে দেয়া সম্ভব হবে না। তবে এসব যানবাহনকে আইনশৃঙ্খলার অধীনে আনে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এমনটা করা গেলে, শহরের যানজট পরিস্থিতি অনেকটা শিথীল হবে বলে আমি মনে করি।
তাই বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহীনির প্রতি অনুরোধ এইসব অবৈধ সিএনজি ও অটোরিকশাগুলোকে আইনের অধীনে এনে একটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।