বিশেষ প্রতিবেদক:
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়, ভুলতা, গোলাকান্দাইল, দাউদপুর, ভোলাবো, রূপগঞ্জ, কায়েতপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমন, আখ, মাসকলাই, সবজি, পেঁপে ও কলা বাগানসহ অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। তাতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া গাছ পড়ে, দেয়াল ধসে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে, তার ছিরে, মাছের ঘের ও মৎস্য খামার ভেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মোবাইল ফোন টাওয়ার অচল হয়ে পড়ে। তাতে নেট দুনিয়া থেকে রূপগঞ্জ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুড়াপাড়া গ্রামের ভূমিহীন বর্গাচাষী আনোয়ার হোসেনের দুই বিঘা জমির দেশীয় সাগর জাতের কলাবাগান ঘূর্ণিঝড়ে ধসে গেছে। কৃষক আনোয়ার হোসেন সাড়ে সাত ফুট দুরত্বে কলা গাছের চারা রোপন করেছিলেন। তিন শত গাছে কলা ধরেছিল। আট মাস আগে লাগানো গাছে ব্যাপক ফলন হয়েছে। আর চার মাস পরে কলা বিক্রি করতে পারতেন। তাতে আনোয়ার হোসেনের ব্যয় হয়েছে পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা। প্রতিটি কলার ছড়ি সাতশ’ টাকা থেকে নয়শ’ টাকা বিক্রি করতে পারতেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে তার বাগানের একটি গাছও রক্ষা পায়নি। ঘূর্ণিঝড়ে আনোয়ার হোসেনের ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকা।
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার । ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করছে। আনোয়ার হোসেন রিক্সার প্যাডেল ছেড়ে সুদের উপর দার-দেনা করে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশীয় জাতের সাগর জাতের কলাবাগান করেছিলেন। জমিতে ফসফেট, ম্যাগনেসিয়াম, খৈল, গোবর ও কীটনাশক প্রদান করে তার ব্যয় হয়েছে পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা। কিন্তু এই ঋণের টাকা কিভাবে শোধ করবেন এ প্রশ্নে বিভোর আনোয়ার হোসেন। রিক্সা চালানোর আয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে আনোয়ারের। উপায়ন্তর না দেখে তিনি জমি বর্গা নিয়ে কলাবাগান করেন। ঘূর্ণিঝড়ে তার পথে বসার জোগাড় হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেহা নূর বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে রূপগঞ্জে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাসকলাই ১ দশমিক ৫ হেক্টর, রোপা আমন ৫২ হেক্টর, সবজি ৪১ হেক্টর, কলাবাগান ৬ হেক্টর জমির ফসলসহ কৃষিখাতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হয়েছে। তবে সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা হবে। ক্ষতির তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।