আজ শুক্রবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাতে চুরি, ভোরে বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাত গভীর হলেই ওরা তৎপর হয়। ওৎ পেতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আকাঙ্খিত গাড়ি এলেই দৌড়ে পিছু ওরা। এরপর চলন্ত গাড়ির পেছনে উঠে শুরু করে চুরি। এভাবে মাছ, মুরগি, চাল, ডাল সহ নানা পণ্য হাতিয়ে ভোরে তা কিছু রেস্টুরেন্টে বিক্রি করে। সূত্র জানায়, এমন চুরির জন্য শহরে নির্দিষ্ট বাহিনী রয়েছে আর চোরাই পণ্য কেনার জন্যও নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্ট রয়েছে। চোরদের মন্দা বাজারে এ রেস্টুরেন্টের মালিকরা অগ্রীম টাকা দিয়ে চালায় বলে জানা গেছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে গভীর রাতে পন্যবাহী যানবাহন থেকে মালামাল লুট করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। চাল, ডাল, মুরগীসহ নানা পন্য চুরি করে তা বিক্রি করা হয় চাষাঢ়ার কয়েকটি ভ্রাম্যমান হোটেলে। চোরাইকৃত এসব মালামাল অল্পদামে কেনার জন্য হোটেল মালিকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখে অপরাধীদের। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে চুরি কম হলে তখন চোরদের টাকা দিয়ে চালিয়ে রাখেও ওইসব হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা।

জানা গেছে, শহরের চাষাঢ়া, চানমারি, ইসদাইর, গলাচিপাসহ আশপাশের চোর ও ছিনতাইকারীরা চাষাঢ়া রেলস্টেশনে রাতে অবস্থান করে। গভীর রাতে এসব অপরাধীরা বিভিন্ন পরিবহন থেকে মালামাল লুট করে রাস্তায় ফেলে। তাদের সাথে থাকা সহযোগিরা সেই মালামাল রিকশায় করে নিয়ে যায়। পরে গলাচিপা, চাষাঢ়া নতুন রোড, চাষাঢ়া এলাকার বিভিন্ন্ ভ্রাম্যমান হোটেলে বিক্রি করে।

চালকরা জানান, পিকআপ বা খোলা ট্রাকের পেছনে উঠে মালামাল সরানোর কারনে তা নজরে পরে না সামনে থাকা চালক বা চালকের সহকারীর। তবে টহল পুলিশ কিংবা কোনরকম ঝামেলা দেখলে ছিনতাইকারীরা রেলস্টেশনে গিয়ে লুকিয়ে পরে। পুলিশ চলে গেলে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠে।

নিয়মিত এমন চুরির সাথে জড়িত এমন কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, চুরির পেছনে বড় ভাই রয়েছে। তার নির্দেশেই আমরা এসব কাজ করি। বিনিময়ে সে আমাদের টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে আমার খাবার খাই আর নেশা করি। উল্লেখ্য, এ চোরচক্রের সাথে জড়িত কম বয়সীরা অধিকাংশই ডান্ডি নেশায় আসক্ত।

তারা আরও জানায়, ভ্রাম্যমান হোটেল মালিকরা তাদের চোরাই মাল দেয়ার জন্য অগ্রিম টাকা দেয়। এদের মধ্যে রেলস্টেশনের ভ্রাম্যমান হোটেল ও চাষাঢ়ার ভ্রাম্যমান দোকানীরা সব চেয়ে বেশি পণ্য কেনে। এছাড়া চোরাই মাল কেনার জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে আরও অনেইে এসে চাষাঢ়ায় অবস্থান করে। মাল নামানোর সময় কেউ ধরা পড়লে তাদের বাঁচাতে বড় একটি চক্র কাজ করে বলে জানায় চুরির সাথে জড়িতরা।

সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চাষাঢ়া এলাকার সড়ক গুলোতে চলাচলরত পন্য পরিবহন গুলো থেকে মালামাল চুরি করে বাবু বাহিনী। একই সাথে বিভিন্ন এলাকার ছিনতাইকারীরা এখন সংঘবদ্ধ হয়েছে। তারা গভীর রাতে চলন্ত ট্রাক-মিনি পিকআপের পেছনে পেছন দিয়ে উঠে চাল, ডাল, মুরগিসহ নানা পন্য লুট করে। সড়কে চলাচলরত পথচারীদের থামিয়ে ভয় দেখিয়ে সাথে থাকা টাকা পয়সা ছিনতাই করে। কেউ তাদের বাধা দিলে তাকে মারধর করে। তাদের সাথে বড় একটি চক্র রয়েছে যারা তাদের মালামাল ক্রয়সহ অপর্কম করতে সহযোগিতা করে বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকার চোর ও ছিনতাইকারীরা চাষাঢ়ায় এসে একত্রিত হয়। চুরি ছিনতাইকৃত মালামালের ভাগাভাগি করে রেলস্টেশনসহ আরও কয়েকটি এলাকায়। এছাড়া রেলস্টেশনের মাষ্টারের রুমের পেছনে বসে মাদক সেবন করে এই অপরাধীরা।

নারায়ণগঞ্জের পন্যবাহী পরিবহন চালক ও মালিকরা মতে, রাতে টহল পুলিশ পাহাড়া দেয় রাস্তা জুড়ে। টহল পুলিশ যদি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতো তাহলে সড়কে চুরি, ছিনতাই হতো না। চাষাঢ়ায় দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন থেকে মালামাল লুট করা হচ্ছে । অপরাধীরা সন্ধ্যার পর থেকে সড়কে ও রেলস্টেশনে অবস্থান করে। পুলিশ চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

পুলিশের সূত্র জানায়, চাষাড়া এলাকার কোন অংশ সদর থানায় আর কোন অংশ ফতুল্লা থানার আওতায় পরেছে। এ সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। তবে পুলিশ বলছে, তারা সক্রিয় রয়েছে। কোন অপরাধীই ছাড় পাবে না।