আজ সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

রাজকোটে যে কারণে হেরে গেল বাংলাদেশ

টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। আর একটা ম্যাচ জিতলেই ভারতের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজ পকেটে পুরে ফেলার হাতছানি টাইগারদের। তবে রাজকোটে সে সুযোগ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ। অথচ এখানে দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন টাইগার ওপেনাররা। চলুন দেখে নেওয়া যাক ঠিক কোন জায়গায় পিছিয়ে পড়েছিলেন তারা।

ক্রিকেটে ছন্দে থাকার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তা সে ব্যক্তিগতই হোক বা দলগত, ছন্দে থাকলে নিজের দিনে অনেক অঘটনই ঘটানো সম্ভব। তবে রাজকোটে সেই ছন্দই যেন দেখা গেল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

বাংলাদেশের ওপেনার জুটি লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইম শুরুটা বেশ ভালভাবে করেছিলেন। তবে তার রেশ ধরে রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কোনও উইকেট না খুইয়েই পাওয়ার প্লে-তে লিটন-নাইমের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। কিন্তু তার উপর বড় রানের ভিত গড়তে ব্যর্থ হন দু’জনেই। অন্তত এক জনকে এখানে থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতেই হত।
দিল্লিতে খলিল আহমেদের শেষ চার বলে টানা চার হাঁকিয়েছিল বাংলাদেশ। রাজকোটেও খলিলের প্রথম তিন বল থেকে তিনটি চার তুলে নেন নাইম। তবে সেই দাপট ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ৩১ বলে মাত্র ৩৬ রান করেই ফেরেন নাইম। যেহেতু নাইম সবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল লিটনের।

নাইমের মতোই দলকে বড় রানের পথে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন অন্য ওপেনার লিটন দাস। চারটি চার মারলেও ২১ বলে ২৯ রান করেন তিনি। জীবন ফিরে পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন লিটন। যুজবেন্দ্র চাহালের গুগলি লেগ সাইডে পাঠাতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। ফলে শুরুতে চমক দেখালেও তা ধরে রাখতে পারেননি কোনও ওপেনারই।

আইসিসি’র শাস্তির কোপে এই বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসান। নেই তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও। তা সত্ত্বেও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটের ভারে প্রথম ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে রাজকোটে প্রথম ম্যাচের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। এ ম্যাচে মাত্র ৪ রান (৬ বলে) করেন মুশফিক।

মুশফিকের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাও বাংলাদেশের হারের একটা বড় কারণ। রাজকোটে দলের অন্য ব্যাটসম্যানেরাও তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি। ওপেনারদের পরে একমাত্র মাহমুদুল্লাহ ছাড়া বাকিদের স্কোর দু’অঙ্কও পার হয়নি। শেষমেশ রান উঠেছে ১৫৩, যা ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট নয়।

মুশফিক ছাড়াও মাহমুদুল্লাহ’র দিকেও তাকিয়ে ছিল এই বাংলাদেশ টিম। রাজকোটে শুরুটা ভাল করলেও ২১ বলে ৩০ রান করে ফিরে যান তিনি। মাহমুদুল্লাহর ব্যাট থেকে বড়সড় রান না আসাটাও বাংলাদেশের হারের একটা ফ্যাক্টর।

টি-২০তে অনেক সময় শেষ কয়েক ওভার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডেথ ওভারে চার-ছয়ের বন্যা তো দূরের কথা, ১৮.৩ ওভারে মাহমুদুল্লার আউটের পর বাংলাদেশ ইনিংশের শেষ ৯ বলে মাত্র ১১ রান ওঠে। একটাই মাত্র বাউন্ডারি পায় তারা। যা ভারতকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।

ভারতের বিরুদ্ধে যে রানের পুঁজি নিয়ে বল করতে নামে বাংলাদেশ, তাতে প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে উইকেট তুলে নিতেই হত। তবে রোহিত শর্মা বা শিখর ধাওয়ানের বিরুদ্ধে সে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি মুস্তাফিজুররা।

রাজকোটে মুস্তাফিজুর রহমান বা শফিউল ইসলামের ইকোনমি রেট দেখুন! মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট ৯.৫৪। শফিউলের ১১.৫০। সেই সঙ্গে ভারতের কোনও ব্যাটসম্যানকেই তারা প্যাভিলিয়নে ফেরাতে পারেননি। মুস্তাফিক কোনও উইকেট না পাওয়ায় এ ম্যাচে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ।

দিল্লিতে রোহিত শর্মার ব্যাটকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন বাংলাদেশিরা। তবে রাজকোটে সে সুযোগ তৈরি করে উঠতে পারেননি তাদের কোনও বোলার। মুস্তাফিজের ব্যর্থতার ফলে এমনিতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রোহিত শর্মাকে সহজেই না ফেরাতে পারাটাও একটা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে।

পেসারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্পিনাররাও ভেল্কি দেখাতে ব্যর্থ হন। একমাত্র আমিনুল ইসলাম ছাড়া কেউই উইকেট পাননি। ভারতের দুই ওপেনারকেই আমিনুল তুলে নিলেও আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনের বল টলাতে পারেনি কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানকেই।

রাজকোটে কোনও সময়ই ভারতকে চাপে ফেলতে পারেননি মুশফিকুর রহিমরা। বিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি না করতে পারলে ম্যাচের দখল নিজেদের দিকে আনাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ কাজটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ।