বিপ্লব হাসান : রূপগঞ্জ উপজেলার সড়কগুলোতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রদানব ট্রাক্টর। ক্ষেত খামারে হালচাষের এ যন্ত্রটির অবাধ বিচরণে উপজেলার ভোলাব হইতে ছনপাড়া সড়ক প্রায় সবজি চাষযোগ্য ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। এতে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ মেরামত না করায় ভারী বর্ষণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও এলজিডির প্রায় ২০ কিলোমিটার পাকা সড়কই এখন মৃত্যু ফাঁদ। কর্তৃপক্ষ মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় এই সড়কে প্রতিদিন প্রায় কয়েক হাজার মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভাসহ বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও ট্রাক্টর নিয়ে প্রশাসনের তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। প্রশাসনের সামনে দিয়েই বেপরোয়াভাবে বিকট শব্দে মাটি বোঝাই ট্রাক্টরগুলো রাস্তা ভেঙ্গে পাউডারের মতো ধুলো উড়িয়ে ছুঁটে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে ট্রাক্টরগুলো কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি দ্রুত গতির ট্রাক্টরগুলো। উপজেলার ভোলাব সড়কটিতে ইট,বালু,মাটি বোঝাইকৃত ট্রাক্টরগুলো দিনরাত ছুঁটে চলেছে। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত শতাধিক ট্রাক্টর মাটি, ইট,বালু বোঝাই করে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছে। ফলে এই সড়কটি ভেঙ্গে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়ে প্রায় সবজি চাষের জন্য পরিণত হয়েছে। ভোলাব থেকে ছনপাড়া পর্যন্ত সড়কটি দিয়ে স্কুল-কলেজ, মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ জনসাধারণের পায়ে হাঁটায় চরম দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভোলাব থেকে ছনপাড়া সড়কে মাটি ছিটকে পড়ে পিচ ঢেকে পাকা সড়ক এখন মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে পিচ্ছিল মাটি ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে কাঁদা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এলাকার ছোট-বড় যানবাহনসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলে প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে,গরীবের বাহন ইজিবাইক,রিকশা,সিএনজি নিষিদ্ধ করে যন্ত্রদানব ট্রাক্টরকে পাকা সড়কে চলতে দেওয়া হচ্ছে কোন স্বার্থে? এই গ্রামের পাকা সড়কটি যন্ত্রদানবের দাপটে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইজিবাইক চালক মনিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানিতে কাঁদায় ছড়াছড়ি আর সূর্যের আলোয় ধুলায় অন্ধকার। তবে এতো দূর্ভোগ সহ্য করে এই রাস্তা দিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি চালাতে অনেক সমস্যা হয়। এছাড়া প্রতিদিন ঘটে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। কিছু দিন আগেও একটি পিকনিকের গাড়ি উল্টে গিয়ে দুইজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এক পথচারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কি আর কমু ভাই এই রাস্তা তো আমগো না এই রাস্তা তো ইছার মাতার। দেহেন না ভাই ইছার মাতা যাইয়া রাস্তার কি করছে? অটো দিইয়া গেলে মরণ লাগে এই ডরে পায়ে হাইটা যাই, পরেও পেকেপুকে সইল তো বড়েই লুঙ্গীও বইড়া যায়। কবে যে এই রাস্তাডা ঠিক করবো আল্লায়ই বালা জানে। আর এই সড়ক দিয়ে যারা চলাচল করে থাকেন তাদের পা থেকে মাথা পর্যন্ত কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। অনেক যাত্রীবাহী যানবাহন এসব সড়কে আসতে চায় না। আর যারা গাড়ি নিয়ে আসেন তারা প্রায়ই বিভিন্ন দূর্ঘটনার শিকার হন। ট্রাক্টর মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, উপজেলার উন্নয়নমূলক সকল কাজে আমাদের ট্রাক্টরগুলো দিয়ে বালু, ইটসহ অন্যান্য মালামাল বহন করা হচ্ছে। আমরাও উন্নয়নের অংশীদার। সকল চালকদের ধীরে চালানোর নির্দেশ দেয়া আছে। কোন চালক কথা না শুনলে আমরা তাকে গাড়ি হতে নামিয়ে দেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান জানান, আমি নতুন এসেছি ট্রাক্টরের বিষয়টি আমার জানা নেই তবে কিছু দিনের মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়া রাস্তার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শীঘ্র রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে।