আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মা দিবসে মানবতার পতন

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

লিপি আক্তারের বয়স মাত্র ২৩। স্বামী-সংসার, স্বজন সবই ছিলো। হয়তো সুখের কোন কমতি ছিলো না। আদর,সোহাগ, ¯েœহ মমতাও ছিলো ঘর জুড়ে। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় হঠাৎ করে একা হয়ে গেলো এ নারী- এ ‘মা’। খানপুর হাসপাতালে মৃত্যুর পর কেউ তাকে শেষ দেখা দেখতেও আসেননি। শেষতক তার দাফন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। ‘মা’ দিবসে এক মায়ের শেষ যাওয়াটা ছিলো খুব বেদনাময়।
গত ২৯ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জ ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে (খানপুর) ভর্তি হন লিপি আক্তার। ওইদিন তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠালেও ফলাফল পাওয়া যায়নি। এদিকে ৯ মে রাত সাড়ে ৭টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত্যুর পর পুনরায় তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর খবরটি তার স্বজনদের জানানো হলেও তারা আর কোন খোঁজ নেননি। ভর্তি ফর্মে সম্পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ না করে কেবল চাষাঢ়া উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্বামীর নাম ফাহিম লেখা রয়েছে। তবে প্রায় চব্বিশ ঘন্টায়ও কেউ হাসপাতালে এসে যোগাযোগ করেননি। এমনকি ভর্তি ফর্মে দেওয়া মুঠোফোনের নম্বরটিও গত রাত থেকেই বন্ধ। পরে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সামসুদ্দোহা সঞ্চয় বলেন, ‘গত রাতে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রোগী মারা যান। আমরা নিহতের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু তথ্যগত ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। শেষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও সদর থানার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি।’
আক্ষরিক অর্থে প্রতিটি নারীই মা। আজ সে কন্যা হলেও কালকেই তিনি মা হচ্ছেন। আবার তাকেও কোনো না কোনো মা জন্ম দিয়েছেন। আবার এই নারীর যে স্বামী হচ্ছেন, তিনিও কোনো মায়ের সন্তান। সার্বিক হিসেবে এই মা’কে কেন্দ্র করেই পুরো পৃথিবী, জগৎ সংসার। অথচ যত্রতত্রই অবহেলিত হচ্ছেন এই মায়েরা। কোথাও সন্তান দ্বারা। কোথাও স্বামী দ্বারা।
গতকাল মা দিবসে তেমনই নিষ্ঠুর এক ঘটনা ঘটেছে এক মায়ের সাথে। যে মা মরে যাওয়ার পর পুরো একটি দিন হাসপাতালে বেওয়ারিশ হিসেবে পড়েছিলেন। না স্বামী। না পরিজন কেউ আসেনি লাশটির কাছে। দাফন করাতো দূরের হিসেব। স্বীকারও করতে আসেনি কেউ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু মুঠোফোনে বলেন, রবিবার বিকেলে পুলিশের মাধ্যমে মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারি। পরে নাসিক মেয়রের সাথে যোগাযোগ করে তার নির্দেশনা মতে নাসিকের অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ মাসদাইরের সিটি কর্পোরেশনের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে পাঠানো হয়। সেখানেই দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাতে তিনি আরও বলেন, জেনেছি রোগীর স্বজনরা যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রতিদিন খাবার দিতে হাসপাতালে আসলেও মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তারা আসেননি। এমনকি যে ফোন নম্বর ভর্তি ফর্মে ছিল সে নম্বরেও যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের লোকজনের সাথে দুর্ব্যবহার করেন রোগীর স্বজনরা। তারপর থেকে ফোন নম্বরটি বন্ধ।
চারদিকে যখন ঘটা করে মা দিবসের জানান দিচ্ছিলেন সন্তানরা তখন এক মা চলে গেলে একরাশ অবহেলা নিয়ে। সচেতন মহলের মতে, এমন ঘটনা প্রমান করে মানবতার পতন হচ্ছে।