আজ শনিবার, ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাব কর্মীরা

করোনা ভাইরাস বিস্তাররোধে জনসচেতনা সৃষ্টির পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটারিজ বিতরণ করতে দিনভর মানুষের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সেবা কাজে যুক্ত সামাজিক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাবের স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা। নারায়ণগঞ্জ নগরীর বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, মোবাইল কোম্পানির শো-রুম ও বিপনিকেন্দ্রগুলোর দোকানে দোকানে ঘুরে নিজেদের উদ্যোগে তৈরি করা জীবানুনাশক হ্যান্ড স্যানিটারিজ তুলে দিচ্ছেন তারা।

রবি ও সোমবার টানা দুইদিন শহরের টারবাজার এলাকার ব্যাংকপাড়া ও বঙ্গবন্ধু রোডের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের প্রায় দেড় হাজার হ্যান্ড স্যানিটারিজ বিতরণের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করে সংগঠনটি।

নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাহলিল জিবরান জানান, টানা দুই সপ্তাহব্যাপী পনের হাজার হ্যান্ড স্যানিটারিজ বিতরণের লক্ষ্য নিয়ে গত ১৬ মার্চ তাদের করোনা সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। ডব্লিউএইচও বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিদ্যানন্দ নামে একটি এনজিও সংস্থার সহায়তায় চিকিৎসকদের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে নিজেরাই তৈরি করছেন এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আইসো প্রোপ্রাইল এ্যালকোহল, গ্লিসারিণ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মাম পানি ও এ্যালোবেড়া জেল নির্দিষ্ট উপাদানের সমন্বয়ে ৫০ মিলি লিটার পরিমানের প্রতি বোতল প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। সংগঠনের ফান্ড ও সদস্যদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রতিদিন ৫০ মিলি লিটারের এক হাজার বোতল তারা উৎপাদন করছেন। এটি স্বাস্থ্যসম্মত, নির্ভেজাল ও সম্পূর্ণ জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যা ব্যবহারে অত্যন্ত নিরাপদ।

কাহলিল জিবরান আরো জানান, টানা চারদিন তারা উৎপাদন করে মজুদ করেন এবং গত তিনদিনে প্রায় তিনহাজার বোতল হ্যান্ড স্যানিটারিজ ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করে ফেলেছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তারা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। বিতরণকৃত সামগ্রী ব্যবহারের পর শেষ হয়ে গেলে পুনরায় তাদের নিজ উদ্যোগে পৌঁছে দেয়া হবে। আগামীকাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং পথচারীদের মধ্যে আরো বারো হাজার হ্যান্ড স্যানিটারিজ তারা বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছাড়া কোন ব্যবসায়ী তাদের এই সেবামূলক কাজে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করতে আগ্রহী হলে সাদরে গ্রহণ করা হবে। তবে কোন রাজনৈতিক পরিচয়ের ব্যক্তিদের অনুদান তারা গ্রহণ করবেন না বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

সংগঠনটির সভাপতি ইব্রাহীম আদহাম খান বলেন, সরকার যেহেতু এখনো আমাদের দেশ লক ডাউন করেনি, তাই সে অবস্থার আগ পর্যন্ত আমরা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার কাজটি করে যাবো। হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাউথ মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভসসহ জীবানু প্রতিরোধ সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য অধিক হারে বৃদ্ধি করায় সাধারণ মানুষের কাছে দূর্লভ বস্তুতে পরিনত হয়েছে। ফার্ম্মেসীগুলোতেও সচরাচর এসব সা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে আমরা নিজেরাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছি। নিজের তৈরি এসব হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণের পাশাপাশি মানুষকে করোনার ব্যাপারে আমরা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দিক নির্দেশনাগুলো সম্পর্কে অবহিত ও সচেতন করছি।

সংগঠন পরিচিতি: সমাজের দু:স্থ মানুষদের কল্যান ও সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে শহরের গলাচিপা এলাকার ২২ তরুণ গঠন করেন সামাজিক সেবামূলক অরাজনৈতিক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাব। সংগঠনের বর্তমান সদস্য ৫৮ জন। জাতিসংঘের অনুমোদিত ৩৮ সদস্যবিশিষ্ট তাদের একটি কমিটিও রয়েছে। সংগঠনটির সদস্যদের মধ্যে কলেজ ও বিশ^ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ক্রীড়াবিদসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ। ক্লাবটির সভাপতি ইব্রাহীম আদহাম খান জাতিসংঘের অনুমোদিত ২০২০-৩০ সাল মেয়াদী কমিটির গ্লোবাল এ্যাকশন এ্যাম্বাসেডর হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। জাতিসংঘের তত্ত্ববধানে চলতি বছর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত “গ্লোবাল গোলস সামিট ২০২০” সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করে দেশের বর্তমান রাজিৈনতিক, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন তিনি। এর আগে ২০১৯ সালে থাইল্যান্ডে একই সেমিনারে বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।

দু:স্থ মানুষের সেবা দিতে ১৭টি এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে সেবামূলক সংগঠন নারায়ণগঞ্জ ইয়থ ক্লাব। মশক নিধন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বাল্যবিবাহ রোধ, দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিবাহ প্রদানের ব্যবস্থা, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের ফ্রি লেখাপাড়ার ব্যবস্থা, মাদকসেবীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনা এবং মাসিক ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান তাদের ১৭ এজেন্ডার মধ্যে অন্যতম। এরই মধ্যে শহরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মাদকসেবী যুবকদের ২০ শতাংশই সংগঠনটির সহায়তায় সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে। রিহ্যাবের ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করে তোলা হয়েছে। তাদের মধ্যে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা অনেকেই বর্তমানে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে পরিবারের সাথে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।