সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের মন্তব্যের একদিন পরই ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোঃ মঞ্জুর কাদেরকে স্ট্যান্ড রিলিক করা হয়েরছে। সোমবিার (১ এপ্রিল) পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে তাঁকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। তবে ওসি মঞ্জুর কাদেরের আকস্মিক স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
সম্প্রতি ফতুল্লা মডেল থানায় গ্রেফতার হওয়া নারায়ণগঞ্জ মহানগরের জামায়াত আমি মাওঃ মাঈনুদ্দিন আহমদের জবানবন্দির একটি অডিও টেপ ভাইরাল হয়। ওই অডিও টেপে নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও তার পিতা প্রয়াত পৌর পিতা আলী আহাম্মদ চুনকার সাথে জামায়াতের কানেকশন রয়েছে বলে দাবি করেন জামায়াতের ওই নেতা। ভাইরাল হওয়া অডিও টেপে জামায়াত আমিরের সাথে কথোপকথনে ওসি মঞ্জুর কাদেররের কণ্ঠও শোনা যায়।
গত রবিবার (৩১ মার্চ) জন কল্যাণ সংসদ এর শুভ উদ্ভোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তেব্য সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছিলেন, আমি বার বার চিৎকার করে প্রতিবাদ করবো এবং মামলাও করবো ওই ওসির বিরুদ্ধে। এ শহরের অরাজকতা সৃষ্টিকারী একজন ভদ্রলোকের নির্দেশে যখন একজন ওসি জামায়াতের আমিরকে নিয়ে বলে যে, আলী আহাম্মদ চুনকা জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি আরো বলেন, আজ থেকে ৪০ বছর আগে যে ব্যক্তিটা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। মুক্তিযোদ্ধারা বলতে পারবে আলী আহাম্মদ চুনকা ছিল মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, আলী আহাম্মদ চুনকা একাত্তরের পরে এ শহরকে দেখে রেখেছে, পচাত্তরের পরে দলকে দেখে রেখেছে। কত রক্তপাত বন্ধ করেছিল। এত সম্মানিত মানুষটিকে অসম্মান করেছে। আমি আল্লাহর কাছে, আপনাদের কাছে বিচার দিব। এ শহরের জুলুমকারী অরজকতা সৃষ্টিকারী মিথ্যাচারকারীদের অবশ্যই আল্লাহ বিচার করবেন।
মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর উপরোক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে (রবিবার ৩১ মার্চ) উপজেলা নির্বাচনের কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বলেছিলেন, ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের কাছে দেয়া নারায়ণগগঞ্জ মহানগররের জামায়াত আমির মাও. মাঈনুদ্দিন আহমদের এক জবনবন্দি অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ আরো বলেন, বিষয়টি জেলা পুলিশের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছি। নিরপেক্ষ তদন্ত হচ্ছে। নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে বিষয়টি জানানো হবে বলে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মঞ্জুর কাদেরের আকস্মিক স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি প্রকশা পাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ শহরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক বোদ্ধামহলের মতে, ওসি মঞ্জুর কাদেরের এই আকস্মিক স্ট্যান্ড রিলিজের ফলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান অনেকটাই ‘মানকাড’ আউটের শিকার হলেন। ফতুল্লা থানা এলাকায় শামীম ওসমান ও তাঁর অনুসারীদের যেই প্রভাব ছিলো ওসি মঞ্জুর কাদেরের রিলিজের ফলে সেই প্রভাব অনেকটাই কমে যাবে।
এদিকে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শাহ্ মোঃ মঞ্জুর কাদের গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজামের বিরুরেদ্ধ সাধাপরণ ডায়েরী করে নতুন করে আলোচনায় আসেন।
নারায়ণগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের মতে, ফতুল্লা থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের এক সাথেই অধ্যায়ন করেছেন। বিভিন্ন সময় ওসি মঞ্জুর কাদের ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জনসম্মুখে বলেছিলেন, তারা একে অপরের বন্ধু। বন্ধু মঞ্জুর কাদেরকে দিয়ে অনেক কাজই করিয়েছে শামীম ওসমান এবং একজন সংসদ সদস্য বন্ধুকে সহায়তায় ওসি মঞ্জুর কাদের দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করেছেন যা অন্য কোন ওসি নারায়ণগঞ্জে করে দেখাতে পারেন নি। ওসি মঞ্জুর কাদেরের স্ট্যান্ড রিলিজের মাধ্যমে এই দুই পরম বন্ধুর আপতত দৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন হলো বলে মনে করেন নাগরিক সমাজ।
ওসি মঞ্জুর কাদের দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি সোনারগাঁ থানা ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।