স্টাফ রিপোর্টার :
নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সোনারগাঁ। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এর নেপথ্যে এমপির সমর্থনকে দুষছেন সোনারগাঁয়ের প্রবীন নেতারা। তারা বলছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত দলকে ঐক্যবদ্ধ না করে উল্টো বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। দলীয় প্রতীক বিহীন এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা চার প্রার্থীর প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা হলেও কায়সার হাসনাত বাবুল ওমর বাবুকে সমর্থন দিয়ে বাকি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। এমনকি তিনি তার নিজ বলয়কেও সংকীর্ণ করে রেখেছেন। ফলে সোনারগাঁয়ে আলোচনা-সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন এমপি কায়সার হাসনাত। কেউ কেউ তাকে ইঙ্গিত করে ভোটের বেপারী বলেও মন্তব্য করছেন।
সম্প্রতি কায়সার হাসনাতকে ইঙ্গিত দিয়ে সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুজিবুর তাকে ভোটের বেপারী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর ব্যাখ্যায় স্থানীয়রা বলছেন, কায়সার হাসনাত শুরুতে সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কায়সার হাসনাতই শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে দুই হাতে টাকা উড়িয়ে যাওয়া বিতর্কিত বাবুল ওমর বাবুকে নতুন করে সমর্থন জানান। এতে কায়সার হাসনাতকে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। ফলে তাকে ভোট বেপারী বলে অনেকেই আড়ালে মন্তব্য করছেন।
এদিকে, কায়সার হাসনাতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুজিবুর রহমান কটুক্তি করেছে বলে দাবি করে গতকাল সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন করেন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই মানববন্ধনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনিসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফজলে রাব্বি এবং কায়সার বলয়ের নেতাকর্মীদের একাংশ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনি তার বক্তব্যের একাংশে বলেন, ‘কায়সার হাসনাতকে নিয়ে কোনো কথা বললে তার জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। তাকে সোনারগাঁয়ের মাটিতে পা রাখতে দেয়া হবে না।’
এদিকে, বাবুল ওমর বাবু তার নির্বাচনি উঠান বৈঠকে গিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে হুমকি-ধামকি দেয়া সহ প্রকাশ্যে গালিগালাজ করছেন। সম্প্রতি তার একটি বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়। এসময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার নাম বাবু, তোর যদি কোনো মা’র লা* থাকে মাদার চো*দ, তোকে গালি দিয়াই বললাম, ভোট ঠেকাতে থাকবি, আমিও থাকবো। এই মাইকের আওয়াজ যদি তোর বাসা পর্যন্ত যায়, তোকে বলে দিলাম, আমার এই কলিজায় যেই ব্যথা! খালি নির্বাচন দেইখা কিছু কইতাছি না।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী বাবুর প্রকাশ্যে এমন হুমকি ও গালাগাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরার পর সর্বমহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।
এদিকে, বাবু ওমর এবং তার পক্ষ নেয়া ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে হুমকির বিপরীতে পাল্টা মন্তব্য করেছেন কালামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুজিবুর রহমান। তিনি একটি পথসভায় বলেছেন, ‘আমাদেরকে ভয় দেখাইয়েন না। আমরা ভয় পাই না। যারা ভয় পায় তাদেরকে ভয় দেখান। আমরা ভোট কেন্দ্রে সিল মেরে নির্বাচন করতে চাই না। বৈদ্যেরবাজারে কালামের নির্বাচন করলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এত বড় কলিজা কার! আপনি বৈদ্দের বাজারে এসে হুমকি দিবেন, এটা হতে পারবে না। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, কিন্তু মাঠ গরম করে তোলা হয়েছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। আমরা ভয় পাই না। সবাই মিলে মাঠে থেকে সোনারগাঁয়ে ঘোড়া প্রতীককে বিজয়ী করে তারপর ঘরে ফিরবো।’
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে আনারস প্রতীকের প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকরা এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়ায় ভোটের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ভোটারদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ভোটের মাঠে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটবে কিনা- তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।