আজ সোমবার, ১৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভোটারদের সামনে জটিল সমীকরণে বিদ্রোহী প্রার্থীরা

সমিকরণে

সমিকরণেসংবাদচর্চা রিপোর্ট
কঠোর সতর্কবার্তা ও কলাকৌশলের পরও আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রধান তিনটি দলের ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থীদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি। এই কথিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই মূলত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরে চিহ্নিত হবেন উভয় জোটের কাছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তবে পিছিয়ে নেই সরকার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও। প্রায় সব আসনেই একাধিক ব্যক্তিকে বিএনপির দলীয় প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়। এর পরও অনেক আসনেই দলীয় পদধারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

আর এসব ‘স্বতন্ত্র’ নৌকা, ধানের শীষ ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের ঘুম হারাম করছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার (ইসি) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, নারায়ণগঞ্জে প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৫ জন। এরা বড় দুই দলের বিভিন্ন পদে থেকেই প্রার্থী হয়েছেন। কাগজে-কলমে বিদ্রোহী হওয়ার সুযোগ না থাকলেও দলগুলোর ‘ভুল’ কৌশলের কারণে তারা প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা। ‘বিদ্রোহী’ এসব প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকলে দুশ্চিন্তা বাড়বে দলীয় প্রতীকধারীদের।

অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জেলা শীর্ষ নেতারা দাবি করছেন, দলীয় পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিবৃত্ত করতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এসব প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য রাজি করানো হবে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পাওয়া তথ্যানুযায়ী, ১ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশায়। এদের মধ্যে যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেছেন, জোট বা দলের পক্ষ থেকে একটু কৌশলী হলেই বিদ্রোহীদের আটকানো সম্ভব ছিল। কারণ, আইন অনুযায়ী দলীয়ভাবে কেউ একবার মনোনয়ন দাখিল করলে তার আর স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না। একইভাবে কেউ স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে দলীয় প্রতীক পাওয়ার সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে দলের যারা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, তাদের সবাইকে প্রাথমিক প্রত্যয়নপত্র দেওয়া যেত। পরে প্রতীক বরাদ্দের চিঠি পাওয়া প্রার্থী ছাড়া অন্যরা এমনিতেই বাদ হয়ে যেত। তারা কেউ আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতেন না। ফলে তারা স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগও হারাতেন।
তিনি আরও বলেন, কেউ একজন প্রার্থী হওয়ার পর তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আইনবিরুদ্ধ কাজ।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাধ্য করা বা নিবৃত্ত করার চেষ্টা শাস্তিমূলক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কোনো প্রার্থী সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, দলীয় পরিচয় আছে এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগে বেশি। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. ইমদাদুল্লাহ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কাজী মনিরুজ্জামান, জাতীয় পার্টির মো. আজম খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেহান আফজাল, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির মো. মনিরুজ্জামান চন্দন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের তৈমূর আলম খন্দকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও জাকের পার্টির মাহফুজুর রহমান। নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাসির উদ্দিন, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির মো. হাফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মো. নজরুল ইসলাম আজাদ, মো. আতাউর রহমান খান, মাহমুদুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মো. নজরুল ইসলাম বাবু, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবু হানিফ হৃদয় ও জাকের পার্টির মো. মুরাদ হোসেন জামাল। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের (বিটএফ) মো. মজিবুর রহমান মানিক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মো. আজহারুল মান্নান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মো. ছানাউল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির আ. সালাম বাবুল, গণ ফ্রন্টের মো. সিরাজুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোশারফ হোসেন, জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা, স্বতন্ত্র অনন্যা হোসাইন মৌসুমী, স্বতন্ত্র আব্দুল্লাহ আল কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) এএনএম ফখর উদ্দিন ইব্রাহিম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিষ্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মো. সাহাব উদ্দিন হোসেন ভূঁইয়া, জাকের পার্টির মোস্তফা আমীর ফয়সল, মো. মুরাদ হোসেন জামাল, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির মো. রাশেদ ফেরদৌস। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির হিমাংশু সাহা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ মো. ওয়াজি উল্লাহ মাতবর অজু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মো. মামুন মাহমুদ, মো. শাহ আলম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মাহমুদ হোসেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মনির হোসাইন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সেলিম মাহমুদ, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির ইকবাল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউসার আহমেদ পলাশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন, জাতীয় পার্টির মো. ছালাউদ্দিন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শামীম ওসমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মুহাম্মদ কায়সার। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাজী মো. আবুল কালাম, খেলাফত মজলিসের হাফেজ মো. কবির হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আবুল কালাম, মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আবু নাঈম খান বিপ্লব, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির মন্টু চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সাইদ আহম্মেদ, বাংলাদেশ কল্যান পার্টির মো. আল আফতাব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের এসএম আকরাম, জাকের পার্টির মোর্শেদ হাসান ও জাতীয় পার্টির একেএম সেলিম ওসমান।

২৮ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই আওয়ামী লীগের মনোনীতদের দলীয় তালিকা প্রকাশিত হয়ে যায়। ফলে বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র হিসেবে নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ প্রার্থী হলে তাকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে।

তবে এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর সবাই যে শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকবেন, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, দলীয়ভাবে অনুরোধ আসলে হয়তো তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।