আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভূঁয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১, বিভিন্ন সরাঞ্জাম উদ্ধার

ভূঁয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের

ভূঁয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
রাজধানী ঢাকার বনশ্রী ও মিরপুর থেকে ভূয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থানরত র‌্যাব-১১ সদস্যরা। সেই সাথে প্রশ্ন ফাঁসের বিভিন্ন সরাঞ্জাম ও মোবাইল সীম উদ্ধার করেছে।  শুক্রবার বিকালে র‌্যাব-১১ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে নানা তথ্য উপস্থাপন করেন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান (পিপিএম)।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান (পিপিএম) জানায়, ৩ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে ভূঁয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও প্রচারের সাথে জড়িত এ্যাডমিনসহ ৮ জন সদস্যকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মু›িসগঞ্জ ও কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১।

এ সংক্রান্ত ৭ টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩ এপ্রিল র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন বনশ্রী এলাকা থেকে মোঃ ইয়াসির আরাফাত ওরফে সাউদ (২৮), জুবায়ের আহমেদ ওরফে জাবের (২০) এবং মোঃ রমজান আলী টিটু (১৮)কে গ্রেফতার করে। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানা এলাকায়।

গ্রেফতার হওয়া মোঃ ইয়াসির আরাফাত ওরফে সাউদ এবং জুবায়ের আহমেদ ওরফে জাবের সহোদর ভাই। অপরজন মোঃ রমজান আলী টিটু তাদের দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই বলে র‌্যাব জানায়। এসময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের কাছ থকে ১৭ টি সিম কার্ড, ৩ টি মেমোরী কার্ড, ১ টি ট্যাব, ২ টি ল্যাপটপ, ১ টি কম্পিউটার, ১টি হার্ডডিস্ক, ১ টি পেনড্রাইভ ও ১ টি ব্লু টুথ ডিভাইস উদ্ধার করে। র‌্যাব-১১ এর আরেকটি দল মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাহমুদ হাসান ওরফে প্রচ্ছদ ওরফে পারফেক্ট (২২) সদস্যকে গ্রেফতার করে। তার বাড়ি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানা এলাকায়।

সে বর্তমানে মিরপুর-২ এলাকায় বসবাস করে আসছে। এসময় র‌্যাব সদস্যরা তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল, ১ টি ল্যাপটপ ও ৮ টি বিকাশ একাউন্ট যুক্ত সিম কার্ড জব্দ করে।

র‌্যাব সিও জানায়, রাজধানীর বনশ্রী হতে গ্রেফতারকৃত চক্রটি এইচএসসি ২০১৮ এর ভূঁয়া প্রশ্নপত্র প্রচার ও বিক্রয় ছাড়াও ২০১৭ এর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ভূঁয়া প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেসবুক, মেসেঞ্জার) এর মাধ্যমে প্রচার করে এবং র‌্যাব কর্তৃক উদ্ধারকৃত ১১ টি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে ভূঁয়া প্রশ্নপত্র বিক্রয়ের টাকা লেনদেন করে। গ্রেফতারকৃত সদস্যরা ১ বছরের বেশী সময় ধরে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং হোয়াটস্অ্যাপ এর মাধ্যমে ভূয়া প্রশ্নপত্র প্রচার ও বিক্রয় করে আসছে। গ্রেফতারকৃত ইয়াসির আরাফাত ভূঁয়া প্রশ্ন প্রচারকারী বিভিন্ন ফেসবুক, মেসেঞ্জার গ্রুপের এ্যাডমিন ও সদস্য বলে জানিয়েছে। তার এই অবৈধ কর্মকান্ড সম্পর্কে তার মা অবগত ছিল এবং বিভিন্ন সময় সাবধান করত।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার হওয়া ইয়াসির আরাফাত ওরফে সাউদ ঢাকা কলেজ থেকে সম্প্রতি অনার্স সম্পন্ন করছে। সে গত ১ বছর ধরে ভুঁয়া প্রশ্ন সংগ্রহ, প্রচার ও বিক্রয় করে আসছে। ইয়াসির কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী। সে ৩ টি মেসেঞ্জার গ্রুপ এবং এসএসসি এডমিন প্যানেল ২০১৭, বিডি এডমিন প্যানেল, বিডি টাইগার টিমের এডমিন।

এছাড়া সে ২ টি ভূঁয়া প্রশ্ন প্রচারকারী ফেসবুক গ্রুপের সদস্য। আরাফাতসহ আরো ২৪ জন এ্যাডমিনের একটি বিশেষ গ্রুপ ভুয়া প্রশ্ন ফাঁস করে আসছে বলে জানায় র‌্যাব। যেখানে সকল এ্যাডমিন সদস্যরা প্রশ্ন পাওয়া মাত্রই পোষ্ট করে এবং যে ব্যক্তি আগে পোষ্ট করে শর্তানুসারে তাকে সকল এ্যাডমিন সদস্যরা ৫০০ টাকা বিকাশ করে। অতঃপর ইয়াসির উক্ত প্রশ্ন বিভিন্ন গ্রুপে প্রচার করে এবং বিক্রি করে। এ কাজে সে তার আপন ছোট ভাই জুবায়ের আহমেদ ওরফে জাবের ও দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাই মোঃ রমজান আলী টিটুকে ব্যবহার করে। র‌্যাব জানায়, জুবায়ের আহমেদ ওরফে জাবের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৃতীয় বর্ষের ৭ম সেমিষ্টার এর ছাত্র। সে তার ভাইয়ের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে অবগত। সে তার ভাইয়ের ব্যস্ততা ও অনুপস্থিতিতে গ্রুপের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা, ভূঁয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করা, প্রচার করা ও বিক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করে। সে মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ এর মাধ্যমে এইচএসসি ২০১৮ এর ভূঁয়া প্রশ্নপত্র প্রচার ও বিক্রয়ের সাথে সরাসরি জড়িত।

গ্রেফতার হওয়া রমজান আলী টিটু গত বছর তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। বর্তমানে সে যাত্রাবাড়ী সাইফুরস শাখায় আইলটস কোর্সে অধ্যয়নরত। সে ইয়াসির আরাফাত ওরফে সাউদ এর কাছ থেকে নিজের জন্য এইচএসসি ২০১৭ এর ভূঁয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও বিক্রয়ের মাধ্যমে এই গ্রুপের সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে। তার দায়িত্ব হলো ইয়াসির এর কাছ থেকে ভূূঁয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে বন্টন করা। গ্রেফতার হওয়া মাহমুদ হাসান ওরফে প্রচ্ছদ ওরফে পারফেক্ট নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে বর্তমানে এআইউবিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। সে এক বছরের বেশী সময় ধরে ভুঁয়া প্রশ্ন সংগ্রহ, প্রচার ও বিক্রয় করে আসছে। সে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী।

সে ভুয়া প্রশ্ন ফাঁসকারী ফেইসবুক কেন্দ্রীক ৪ টি গ্রুপের এ্যাডমিন। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯০ জন বলে উল্লেখ করে র‌্যাব-১১। ভূঁয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সাথে সাথে তারা তাদের এই গ্রুপে আপলোড করতো। মাহমুদ হাসান এই গ্রুপ থেকে ভূঁয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল। সে দেড় হাজার টাকা করে চলতি এইচএসসি পরীক্ষার ভূঁয়া প্রশ্ন সংগ্রহ করতঃ ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করত বলেও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

সে ভূঁয়া প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের জন্য মোট ৬২টি অ্যাপস্ ব্যবহার করতো। এই চক্র দুইটির বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র‌্যাব এর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে খিলগাঁও এবং মিরপুর থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে র‌্যাব।