কলকাতা থেকে আসা পর্যটকবাহি জাহাজ আর ভি বেঙ্গল গঙ্গার এগারোদিনের ভ্রমনকে সফল ভ্রমন হিসেবে উল্লেখ করেছেন আগত পর্যটকরাসহ দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রবিবার বিকেলে এ সম্পর্কে নানা সফলতার দিক তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন এই ভ্রমনের সহযোগী বেসরকারি পর্যটন প্রতিষ্ঠান জার্ণি ওয়ালেট লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আর ভি বেঙ্গল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ সিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা দীপাক বড়য়া এবং ইন্ডিয়া ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির (আই ডব্লিউ আই) সাবেক চেয়ারম্যান নোটন গুহ বিশ্বাস সহ বিদেশী পর্যটকরা।
রবিবার বিকেল পাঁচটায় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে এসে নোঙ্গর করা আর.ভি বেঙ্গল গঙ্গার ছাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই বিদেশী পর্যটক ও অতিথিদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানসূচক উত্তরীয় ব্যাচ পড়িয়ে দেন জার্নি ওয়ালেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান। পরে সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের কাছে এই ভ্রমন সম্পর্কে নানা সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি জানান, প্রথমবারের এই ভ্রমনের ব্যাপারে বিদেশী পর্যটকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভিসার ব্যপারে নানা জটিলতা থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়া গেছে। আগামী ২ মে রংপুরের চিলমারি নদীবন্দর দিয়ে ভারতে থেকে গঙ্গা বিলাস নামে আরেকটি আধুনিক পর্যটকবাহি জাহাজ ভ্রমনে আসবে। পর্যায়ক্রমে প্রতি সপ্তাহে একটি করে জাহাজ আসার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের এই সহযোগিতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইতালি ও অষ্ট্রেলিয়ার ছয়জন পর্যটকসহ ঊনিশজন যাত্রী ও ত্রিশজন ক্রু নিয়ে আর ভি বেঙ্গল গঙ্গা গত ২৯ মার্চ দুপুর সাড়ে বারোটায় ভারতের কলকাতার খিদিরপুর বন্দর থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় খুলনার আংটিহারা বন্দরে কাস্টমস ও ই¤্েিরগ্রশন প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশে প্রবেশ করে জাহাজটি। এরপর মংলা, বরিশাল ও চাঁদপুর হয়ে ৫ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় নারায়ণগঞ্জে নদীবন্দরে বিআইডব্লিউটিএ’র ভি.আই.পি জেটিতে এসে যাত্রাবিরতি করে। বাংলাদেশে টানা নয়দিন অবস্থান করে পর্যটকরা দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখেন। বিশেষ করে খুলনার সুন্দরবন, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগর, পুরাতন ঢাকার আহসান মঞ্জিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন ছাত্রাবাস ঘুরে দেখেন। তবে সুন্দরবন ও পানামনগরের সৌন্দর্য্য বেশি মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের। এই ভ্রমনকে স্মরণীয় ভ্রমন হিসেবে উল্লেখ করে আবারো দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমনে বাংলাদেশে আসার কথাও জানান তারা।
তিন হাজার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাংলাদশের নদীপথের সৌন্দর্যকে স্বপ্নের ভ্রমন হিসেবে উল্লেখ করে করে বেঙ্গল গঙ্গার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ সিং জানান, প্রথমবারের এই ভ্রমনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন তারা। আর এতে সফলও হয়েছেন। বাংলাদেশের নদীপথ এবং বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের প্রশংসাও করেন তিনি। ভবিষ্যতে আরো আধুনিক জাহাজে করে ভারত থেকে বিভিন্ন দেশের পর্যটদের নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আর এই ভ্রমনের মাধ্যমে বিরাট অভিজ্ঞতা অর্জনসহ নৌ-পথে দু’দেশের ভবিষ্যত উজ্জ্বল সম্পর্ক সৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা দীপাক বড়–য়া। তিনি বলেন, এই ভ্রমনটি তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভারত-বাংলাদেশের এই নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা দু’দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করবে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও পর্যটনসহ সব ধরনের সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
৮ এপ্রিল সোমবার সকাল আটটায় নারায়ণগঞ্জের পাগলা জেটি থেকে পুনরায় ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে আর.ভি বেঙ্গল গঙ্গা। তবে পর্যটক ও অতিথিবৃন্দ বিকেলে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করবেন আকাশপথে।