নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ সহ আদর্শচ্যুতের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তিন নেতা বহিস্কার হতে চলেছেন। ইতোমধ্যে ওইসব নেতাদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির মতামতও দেওয়া হয়েছে। তবে এখানে কিছুটা কৌশল অবলম্বন করেছেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি শাহআলম। নিজের দায় ও নেতাকর্মীদের রোষানল এড়াতে তিনি ওই কৌশল হিসেবে প্রস্তাবনা পাঠাতে কেন্দ্রে উদ্যোগী হলেও তিনিই আবার গোপনে সে নথি আটকে রেখেছেন।
ওই তিনজন নেতা হলেন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা কমিটির সেক্রেটারী আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, এ তিন নেতার কর্মকান্ড সম্পর্কে ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা আকারে কেন্দ্রে সুপারিশ করা হয়। পরে দলের মহাসচিব বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নিতে রুহুল কবির রিজভীকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু পরে বিষয়টি আবার শাহআলম নিজেই আটকে রাখেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শাহআলম কোনভাবেই চাচ্ছেন না আজাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক। কারণ এতে তাঁর ইমেজের ক্ষতি হবে। এসব কারণেই তিনিও চাচ্ছেন যেকোন ভাবে আজাদ বিশ্বাস যেন পদে থাকেন।
এদিকে কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানাভাবে আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা যখন আজাদ বিশ্বাসকে ‘দালাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিএনপি থেকে বহিস্কারের দাবি তুলেছে তখন জেলা বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সিনিয়র সহ-সভাপতি শাহআলম ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ অনেকটা যান প্রকাশ্যে। কিন্তু গোপনে আবার সেই কাজটিওসারেন।
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন সাধারণ আইনজীবী হিসেবে বিএনপির সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আজাদ বিশ্বাস। মূলত শিল্পপতি শাহআলমের আত্মীয়তার সুবাদে তিন বদলে যেতে থাকে আজাদ বিশ্বাসের। নির্বাচনের পর থেকেই তিনি আওয়ামীলীগের সঙ্গে প্রকাশ্যে সখ্যতা গড়ে তুলতে দেখা যায়। ওই সময় সারাহ বেগম করবী এমপি থাকলেও আজাদ বিশ্বাসকে এতটা দালালি করতে দেখা যায়নি বর্তমানে যতটা করছেন তিনি।
এর কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন মামলা সংক্রান্ত কাজে আটকে আছে। এর সুবিধা ভোগ করছেন আজাদ বিশ্বাস। স্থানীয় এমপিও জোরালো ভূমিকা নিচ্ছেন না সকল জটিলতার অবসান করে নির্বাচনের জন্য। ফলে আজাদ বিশ্বাস বোনাস চেয়ারম্যানশীপ হিসেবে পেয়ে গেছেন। আর এ সময়তেই আজাদ বিশ্বাস হয়ে ওঠেছে একজন আওয়ামী দালাল।
সদর উপজেলা পরিষদের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে বসিয়ে দেন আজাদ বিশ্বাস। ওই সময় মাসদাইরে তৈমূর আলমের বাসায় কর্মী সভায় জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া আজাদ বিশ্বাসের সামনেই বলেছিলেন, ‘এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল সে শামীম ওসমানের দালাল। সে দালালি করছে।’
গত ১৯ অক্টোবর ফতুল্লায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে আয়োজিত সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন আজাদ বিশ্বাস। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনা ও এমপি শামীম ওসমানের ব্যাপক প্রসংশা করেছেন আজাদ বিশ্বাস। আজাদ বিশ্বাস বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, আমার নেতা শামীম ওসমান। আমি বিএনপি নেতা হয়ে শামীম ওসমানকে স্যালুট জানাই।’
একই অনুষ্ঠানে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু বলেছেন, ডিএনডি জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে এখানকার মানুষ। এ মুক্তির কারিগর আমার বড় ভাই এমপি শামীম ওসমান। আজকে সকল দলের মানুষ এখানে উপস্থিত কারণ এটা মানুষের জন্য উন্নয়নের কাজ। একাজের ফলে এখানকার মানুষ দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির সঙ্গে সখ্যতা গড়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুল আলম সেন্টু। সেন্টু এক সমাবেশে বলেছিলেন, আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমানের জনগনের পীর হয়ে গেছেন। তাই জনগণ আবারো তাকে ভোট দেয় জয়ী করবেন!