আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাসার ছাদে ফলের বাগান

দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চাষাবাদের জায়গাগুলি। শহরের মানুষ গাছ লাগাবে এমন জায়গা পাওয়া দুষ্কর। তাই শখ করে বাগান কিংবা নিজের পরিবারের চাহিদা মিটানোর জন্যে বাগান করার জন্যে শহুরে মানুষদের জন্যে ছাদের কোন বিকল্প নেই। তবে ইচ্ছে আর গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকলে ছাদের জায়গাটুকু ব্যবহার করেই বাগানের শখ মিটানো যায়। ছাদে সবজি চাষ এর সাথে ফলের চাষ ও করা যায়। তবে ছাদে আর মাটিতে বাগান করা এক বিষয় নয়। ছাদে যে কোন বাগান করতে গেলেই দরকার হয় একটু বিশেষ যত্নের। জেনে নিতে হবে ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি, ছাদে বাগান উপযোগি ভালো জাতের গাছ নির্বাচন ও সাথে অন্যান্য পরিচর্চার বিষয় গুলি। এই সব কিছু নিয়েই এই ফিচার।

ছাদে ফলের বাগান পদ্ধতি

কি গাছ লাগাবেন তার উপর নির্ভর করবে কোথায় কিভাবে সেই গাছ লাগাবেন। মনে রাখতে হবে যে গাছ লাগাবেন সেই গাছের আকার যত বড় হবে গাছ লাগানোর পাত্র/ড্রাম/টবের আকার ও তত বড় হতে হবে। দেখে নেই পদ্ধতই গুলোঃ

টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যায় বলে এটাই সহজ পদ্ধতি বলে বিবেচিত। তবে ফলের গাছের জন্যে টব সাধারণত যে আকারের হয়ে থাকে তাতে খুব একটা ভালো হবে না। বড় আকারের টবে ফলের গাছ লাগানো যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি বড় টব ব্যবহার করা যায়। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৬ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।

হাফড্রাম পদ্ধতি : বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষই হাফড্রাম পদ্ধতিতে ছাদে ফলের বাগান করে থাকেন। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, শাক-সবজি, ফুলের জন্য ছোট খাট টব বা পাত্র হলেও চলে। কিন্তু ফলের ক্ষেত্রে পাত্র/ড্রাম যত বড় হয় তত ভালো।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি : স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়। অতিরিক্ত পানি, সার পাবার সুষ্ঠু পথ রাখতে হবে।

এছাড়া স্থায়ী বেড হিসেবে ট্যাংক পদ্ধতিতেও গাছ লাগানো যায়। সেই জন্যে ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।

আরও পড়ুনঃ টবে গাছ লাগানোর নিয়ম ও প্রস্তুতি

ছাদে কি কি গাছ লাগাবেন

ছাদে বাগান করার সময় জরুরী বিষয় হলো লক্ষ রাখতে হবে যেন গাছটি বড় আকারের না হয়। ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের গাছ বা কলমের গাছ লাগানো যেতে পারে। বেঁটে প্রজাতির অতিদ্রুত বর্ধনশীল ও ফল প্রদানকারী গাছই ছাদ বাগানের জন্য উত্তম। বীজের চারা নয়, কলমের চারা লাগালে অতিদ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমের বিভিন্ন হাইব্রিড বা কলমের জাত যেমন আম্রপালি ও মল্লিকা জাতের আম, আপেল কুল, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে, জলপাই, আমড়া, করমচা, শরিফা, আতা, ডালিম, এমনকি কলা গাছও লাগানো যাবে। জানাশুনা আছে এমন বিশ্বস্ত নার্সারির কাছ থেকে গাছ সংগ্রহ করতে হবে। আজকাল বিভিন্ন ফলের গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড় কলম পাওয়া যাচ্ছে। কলমের জলপাই, থাইল্যান্ডের মিষ্টি জলপাই, কলমের শরিফা, কলমের কদবেল, ডালিম, স্ট্রবেরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলকুল, লিচু, থাইল্যান্ডের লাল জামরুল, গ্রিন ড্রপ জামরুল, আপেল জামরুল, আঙ্গুর পেয়ারা, থাই পেয়ারা, ফলসা, খুদে জাম, আঁশফল, জোড় কলমের কামরাঙা, এমনকি ক্যারালা ড্রফ প্রজাতির নারিকেলের চাষ করা যেতে পারে। সঠিক মানের চারা হলে এক বছরের মধ্যেই ফল আসে। আজকাল বিদেশ থেকে উন্নত মানের কিছু চারা কলম দেশে আসছে। ছাদ বাগানের সাধ পূরণ করার জন্য এসব সংগ্রহ করে লাগাতে পারেন।

গাছ লাগানোর নিয়ম

খুব সাবধানতার সাথে টব/পটে/ড্রামে/স্থায়ীবেডে চারা/কলম লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণ মতো মাটির নিচে রোপন করতে হবে। চারা বা কলমের সাথে লাগানো মাটির বল যেন না ভাঙ্গে সেদিকে নজর রাখতে হবে। চারা বা কলমের ক্ষেত্রে যতটুকু নিচে বা মাটির সমানে ছিল ততটুকু সমানে ছাদে লাগাতে হবে।

ছাদে ফলের বাগানের যত্ন

যেহেতু সীমিত আকারে সীমিত জায়গায় উৎপাদন করা হয় সেজন্য অতিরিক্ত যত্ম সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং বিভিন্ন পরিচর্যায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। কেননা সার কমবেশি হলে, গাছের সাথে লেগে গেলে গাছ মরে যাবে, পরিমাণ মতো না হলে অপুষ্টিতে ভুগবে।

সেচ নিস্কাশন সেচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা মাটির আর্দ্রতার জন্য সহজেই গাছপারা নেতিয়ে যাবে তেমনি অতি পানি বা পানির আর্দ্রতার জন্যও গাছ নেতিয়ে পড়ে মরে যেতে পারে। তাই অবশ্যই ছাদের বাগানে প্রতিনিয়ত সেচের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলিয়ে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে। ইদানিং বাজারে টবের মাটি কিনতে পাওয়া যায়। মানসম্মত মাটি কিনে টবে/ড্রামে ভরতে হবে।

চাদের বাগানে প্রতিদিন পরিষ্কার কার্যক্রম অনুসরণ করতে হবে। সেজন্য পুরাতন রোগাক্রান্ত, বয়স্ক ডালপালা, পাতা সাবধানতার সাথে কেটে নির্দিষ্ট স্থানে জমা করতে হবে। এতে গাছপালা রোগমুক্ত থাকবে ফলনে সুবিধা হবে।

আমাদের দেশের আবহাওয়ায় কোন ফলে পোকা বা রোগের আক্রমণ অহরহ ঘটে থাকে। সেক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি হঠাৎ বেশি মারাত্মক আক্রান্ত হয়ে যায় তখন উপযুক্ত বালাইনাশক সঠিক সময়ে ব্যবহার করতে হবে।