আজ শুক্রবার, ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলা মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা পর্যবেক্ষণ

এম.এ মোমেন ঃ

বাণিজ্য মেলা চলবে কিনা এ নিয়ে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আক্রান্তে সরকারের চতুর্থবারের মতো নতুন করে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের ১১ দফা বিধি নিষেধের পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গতকাল ১১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, সরকার নতুন কোন নির্দেশনা জারি করলে তা বাস্তবায়ন করবো। করোনা ভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ এর নতুনধরণ ওমিক্রনের পাদুর্ভাব, সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্তে বিধি নিষেধ আরোপের পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

মেলার দর্শনার্থীরা বলছে বিধি নিষেধ অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থানে সর্বপ্রকার সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বাণিজ্য মেলা চলছে স্থায়ী প্যাভিলিয়নের কক্ষে। উন্মুক্ত স্থানে নয়। তাই বাণিজ্য মেলা এ বিধি নিষেধের অন্তর্ভুক্ত থাকার নয়। তবে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বাণিজ্য মেলার ক্রয় বিক্রয় ও পরিদর্শন করা উচিৎ।

প্রজ্ঞাপন জারি অনুযায়ী জনপরিবহনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করতে হবে। রেস্তোরায় বসে খাবার গ্রহণ ও আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য টিকার সনদ প্রদান করতে হবে। জন সমাগম স্থানে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। প্রবাসীদের টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে। জুম্মার নামাযে খুতবায় মানুষকে সচেতন করতে হবে এমন ১১ দফা বিধি নিষেধ জারি করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নুরজাহান আরা বেগম বলেন, বিধি নিষেধ নির্দেশনা নয় বাস্তবায়ন করতে হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তবেই ওমিক্রন থেকে নিরাপদে থাকা যাবে।
মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধু ফাতেমা আক্তার বলেন, সবেমাত্র মেলাটি জমে উঠছিল। ঠিক তখনই ওমিক্রনের বৃদ্ধি হচ্ছে। সরকার বিধি নিষেধ জারি করেছে। তাতে মেলার স্টল মালিকদের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।
ঢাকার ইব্রাহিমপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আলি আকবর বলেন, আজ আমি মেলার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে আসছি। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শুকবারে আসবো। বিধি নিষেধ জারি হওয়ায় মেলায় তাদের নিয়ে আসতে পারবো কিনা আশঙ্কায় আছি।
নারায়ণগঞ্জের গঙ্গানগর থেকে আসা শাহনাজ পারভীন বলেন, মেলায় এসে আনন্দ পেয়েছি। কেনাকাটা করেছি। আবারও আসার ইচ্ছা রয়েছে। তবে বিধি নিষেধ জারির কারণে আরও আসবো কিনা বলতে পারছি না।
গাজীপুর জেলার মীরের বাজার এলাকার ব্যবসায়ী শাহেল মাহমুদ স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। বিধি নিষেধে তিনি আর আসতে পারবেন না মনে করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
রূপগঞ্জের ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, বাণিজ্য মেলাকে ঘিরেই পাঁচ হাজারের অধিক নারী পুরুষ কাজ করছেন। বিধি নিষেধে মেলা বন্ধ থাকলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
মেলার দর্শকদের টিকিটের ইজারাদার আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ও রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ওমিক্রন ও বিধি নিষেধের কারণে মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন কিছুটা কমছে। মেলা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকের ন্যায় আমরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবো।
এদিকে মেলার পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার নিয়মনীতি কঠোর করলেও দর্শনার্থীদের কেউ কেউ তা মানছেনা। আবার কেউবা নিয়মনীতি ছাড়াই মাস্ক ব্যবহার করছে। কেউবা থুতনিতে, গলায় মাস্ক ব্যবহার করছে। কেউ কেউ গেইট অতিক্রম করেই মাস্ক ছুড়ে ফেলছে।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের ঘোষিত বিধি নিষেধ অনুযায়ি পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আজ ১২ জানুয়ারি বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে বাণিজ্য মেলার ভবিষ্যৎ।
উল্লেখ্য গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে বিধি নিষেধ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।