আজ শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলা ক্রেতা দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

এমএ মোমেন:

পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারে আয়োজিত ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ছুটির দ্বিতীয় দিনে গতকাল ২৭ জানুয়ারি শনিবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ছিলো উপচেপড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের আগমন শুরু হয়। বিকেল ৩টা বাজতেই মেলা প্রাঙ্গণ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাতে আয়োজক ও বিক্রেতারা খুশি। এবারের মেলা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারনে নির্ধারিত সময়ের পরে গত ২১ জানুয়ারি শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করেন।

এবারের আয়োজনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা ৩৫১টি। মেলায় রেঁস্তোরা, মসজিদ, মহিলাদের নামাজের স্থান, ব্যাংক, এটিএম বুথ, শিশু পার্ক, হাসপাতাল, মা ও শিশু কেন্দ্র রয়েছে। 

দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তুরস্ক, ইরাণ, সিঙ্গাপুর, হংকং, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রি করছেন। এবার সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য ৪০ টাকার পরিবর্তে ৫০টাকা ও ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ২০ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা মূল্যের প্রবেশ টিকিট নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, রূপগঞ্জের বিদ্যালয়গুলোর ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষিকা, পরিচালনা কমিটি ও একজন অভিভাবকসহ ছাত্রীদের বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। মেলায় প্রবেশের টিকিট ইজারাদার আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া এ উদ্যোগ নিয়েছেন। গতকাল ২৭ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৩ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলার অধিকাংশ স্টলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। পণ্য বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। শাড়ী, লুঙ্গি, থ্রি-পিছ, লেহেঙ্গা, জুতা, কসমেটিক্স সামগ্রী, পায়জামা, পাঞ্জাবী, টুপি, খাবার দ্রব্য, টেলিভিশন, ফ্রিজ ও কোকারিজসহ নিত্য দিনের পণ্য সামগ্রীর দোকানে ভিড়। 

মেলা শুরুর পরে দ্বিতীয় ছুটির দিনে জমে উঠেছে বাণিজ্য মেলা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করে। গত শুক্র ও শনিবার ক্রেতা-দর্শনার্থীর আগমনে মেলা আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে মেলার বেশ কয়েকটি স্টল এখনো নির্মাণাধীন। সে সকল স্টলে রাত দিন ডেকোরেশন ও লাইটিংয়ের কাজ চলছে।

ঢাকার করাণীগঞ্জ থেকে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে আসা গৃহবধূ সুমাইয়া রহমান বলেন, ঢাকার কুড়িল থেকে মেলা পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরণির ব্যবস্থা দেখে বিমোহিত হয়েছি। দৃষ্টিনন্দন যানযটমুক্ত এ সড়কে মেলায় প্রবেশ করে আমরা আনন্দিত। অত্যান্ত সুন্দর ও শৃঙ্খল ব্যবস্থাপনায় দিন দিন মেলার প্রসার ঘটবে।

হোমটেক্সের ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, মেলা শুরুর ষষ্ঠ ও সপ্তম দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা জমে উঠে। এখনো পণ্য বিক্রি তেমন না হলেও এবার ভালো বিক্রি হবে। সেভাবে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

আরএফএল প্যাভিলিয়ন ইনচার্জ আজিজুর রহমান বলেন, মেলায় ১০ থেকে ৩০ ভাগ আমাদের পণ্যের ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

নরসিংদী থেকে আসা গৃহবধূ আকলিমা আক্তার বলেন, মেলার স্টলগুলোতে পণ্যের দাম একটু বেশি। তবে পণ্যগুলো সুন্দর।

ব্রাদার্স ফার্নিচারের প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থাপক শাহদাত হোসাইন বলেন, মালামাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আশানুরুপ নয়। কেনাকাটার চেয়ে মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে দর্শনার্থীদের পদচারণা বেশি। মেলার ১৫দিন পার হলে ভালো বিক্রি হবে আশা করছি।

ঢাকার মিরপুর থেকে স্বপরিবারে মেলায় আসা আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, মাসব্যাপি আয়োজিত বাণিজ্য মেলায় আমরা তিন-চারবার আসি। প্রথমদিকে ঘুরে ফিরে হালকা জিনিসপত্র ক্রয় করি। মেলার শেষের দিকে পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমাদের কেনা হয়।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে আসা মশিউর রহমান তারেক বলেন, নির্মাণাধীন এশিয়ান সড়ক নামে পরিচিত ঢাকা বাইপাস সড়কের বেহাল দশার কারনে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষ মেলায় আসতে ভোগান্তিতে পড়ছে। সড়কের নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।

ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের যাতায়াতের জন্য কুড়িল বিশ্বরোডসহ বেশ কয়েকটি স্থান থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। যাত্রী যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ সড়কে বাস থাকবে এই স্লোগানে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিআরটিসি সার্ভিস চলছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, মেলার প্রথম ও দ্বিতীয় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে বাণিজ্য মেলা জমে উঠেছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় পণ্য বিক্রিতে এবার বাণিজ্য মেলা উদাহরণ হয়ে থাকবে।