এম.এ মোমেন
বাণিজ্য মেলার দশটি বিদেশি স্টলে পণ্যের রঙ বেরঙের বাহার। বিদেশিদের পরিচালিত দোকানে দেশিয় বিক্রয় প্রতিনিধি। তাদের তত্ত্বাবধানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টলে কেনাবেচা চলছে। স্টলে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। কেউ কেউ পণ্য কিনতে বিদেশিদের কথা বুঝতে না পেরে বিরম্বনায় পড়ে। তখনই তারা দেশিয় দোভাষি বিক্রয় প্রতিনিধির সহযোগিতা নেন। বিদেশি স্টলে পণ্যের চাহিদাও প্রচুর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ইরান, কোরিয়া, জাপানের দশটি স্টলে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এদের মধ্যে শীতবস্ত্র, কসমেটিক্স, হারবাল পণ্য, খেলনা, আলোকসজ্জার সরজ্ঞামাদি, পারিবারিক তৈজসপত্র, বোরকা, জামা, শাড়ি, শো-পিস ও গৃহস্থালির পরিস্কারক যন্ত্রপাতির চাহিদা প্রচুর। বিক্রিও হচ্ছে দেদারসে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মেশিনারিজ নিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশের ডব্লিউএ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ রাশেদ মেলায় এসেছেন। তার অষ্টমবারের মতো মেলায় আসা। তিনি বলেন, এবারের মেলা গ্রামীণ এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে বসেছে। সার্বিক দিক সুন্দর। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়।
খাদ্যমেকার বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
তুরস্ক থেকে আসা তুর্কী প্যাভিলিয়নের অরজিনাল ইস্তামবুল ক্রিস্টালের মালিক সিহান জামুর পিতা সিমাল জামুরকে সঙ্গে নিয়ে মেলায় স্টল দিয়েছেন। এ স্টলে আলোকসজ্জার উপকরণাদি ও কসমেটিক্স বিক্রি হচ্ছে। তিনি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলেন, বাঙালিরা সৌখিন। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তারা শখের জিনিসপত্র ক্রয় করছেন। তাছাড়া বাংলাদেশে তুর্কী আসবাবপত্রের চাহিদা প্রচুর।
জাপানের ডিএইচই প্যাভিলিয়নের মালিক জান্নাতুল ফেরদৌস শান্তা বলেন, জাপানিজ কসমেটিক্স ও হারবাল পণ্যের চাহিদা এখানে বেশি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তরুণরা জাপানিজ কসমেটিক্সের ক্রেতা। দাম ক্রয়সীমার মধ্যে। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
ভারত থেকে আসা কাশ্মিরী শালের দোকান মালিক ফজল আহমেদদার ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলেন, এখন শীত মৌসুম। শীত নিবারণে প্রয়োজন শাল। তাই কাশ্মিরী শালের চাহিদা এখানে বেশি। ক্রেতারাও শাল কিনতে স্টলে ভিড় করছেন। দামও কম। ছাড়ও আছে। গত শুক্র ও শনিবারের পণ্য বিক্রিতে ব্যবসার লোকসানের ঝুঁকি কেটে গেছে।
তুর্কী কার্পেটের দোকান সুলতানস হোমের কান্ট্রি ম্যানেজার হালিফ ওযকুরত বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সৌখিন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কার্পেট, জায়নামায, ফরাসখানা, পাপোস, মাদুরের চাহিদা প্রচুর। এখানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে পাকিস্তান থেকে আসা এক স্টলের মালিক বলেন, তিনি গত দশ বছর ধরে মেলায় আসেন। এবার মেলায় কেনাকাটার চেয়ে দর্শনার্থীদের ঘোরাঘুরি বেশি। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই পণ্য বিক্রি কম। তুলনামূলক ভাবে এবছর মেলায় বিক্রি কম।
ঢাকার রামপুরা থেকে আসা নাছির মিয়া বলেন, কলকাতা থেকে ভারতীয় শীতবস্ত্র, জামা, শাড়ি কাপড় ও কসমেটিক্স ক্রয় করে তিনি নিয়ে আসতেন। করোনার কারণে গত দুই বছর এসকল পণ্য কেনা থেকে তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। সুযোগ পেয়ে বাণিজ্য মেলার স্টল থেকেই চাহিদা মতো ভারতীয় পণ্য ক্রয় করেছেন। তবে বিদেশি পণ্যের নামে কেউ নকল পণ্য বিক্রি করছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
নরসিংদী জেলার পলাশ থেকে আসা ইমন মিয়া বলেন, তার কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই মেয়েই বিদেশি পণ্য ও জামা পছন্দ করেন। মেয়েদের পছন্দের জামা ও কসমেটিক্স তিনি ক্রয় করেছেন। দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।
নারায়ণগঞ্জের গঙ্গানগর থেকে আসা শাহনাজ পারভীন বলেন, ইরানী বোরকা টেকসই। ব্যবহারে মোলায়েম। দামেও কম। মানসিক প্রশান্তির জন্যই অন্যদের মতো আমিও ইরানী বোরকা ক্রয় করেছি।
গাজীপুর জেলার মীরের বাজার এলাকার ব্যবসায়ী শাহেল মাহমুদ স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন। তিনি নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তাই তিনি বাড়ির আলোকসজ্জার জন্য ৩২ হাজার টাকায় তুর্কী ঝারবাতি ক্রয় করেছেন। নিয়মিত বাজারের তুলনায় মেলায় বিশেষ ছাড় পেয়ে তিনি এ বাতি ক্রয় করেছেন বলে জানিয়েছেন।
রূপগঞ্জের গুতিয়াবো এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আজিজ আগামী মাসে বিয়ের আসরে বসবেন। তিনি মেলায় এসেছেন বিয়ের বাজার করতে। নববধূর কসমেটিক্স, শাড়ি, লেহেঙ্গা, ইমিটেশন গহনা মেলার বিদেশি স্টল থেকেই তিনি ক্রয় করেছেন। বিদেশি পণ্য হাতের নাগালে পেয়ে তিনি খুশি।
মেলার দর্শকদের টিকিটের ইজারাদার আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ও রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা জমে উঠেছে।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক ইপিবির সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, দেশি পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি পণ্য মেলাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। বিদেশিরা মেলায় অংশ নেওয়ায় মেলাটি এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় নামকরণ সার্থকতায় এসেছে।