আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের তৈরি পণ্য

এম.এ মোমেন:

বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের বিক্রিতে তুমুল সাড়া পড়েছে। দেশের ৬৮টি কারাগারে ১৫টি শিল্পের তৈরি এসব পণ্যের দাম কম। শৈল্পিক, দীর্ঘস্থায়ী, মজবুত, দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয়, টেকসই ও শ্রাসয়ী হওয়ায় পণ্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। বিক্রি হচ্ছে প্রচুর। তাতে ক্রেতা-বিক্রেতা খুশি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ জেল এর উদ্যোগে আয়োজিত এ স্টলে বাঁশ, পাট, বেত, পুঁতি, উলের সুতা, প্লাস্টিকের তৈরি গৃহস্থালী ও শোভাবর্ধন আসবাবপত্র, সুস্বাদু আচার স্টলে স্থান পেয়েছে। নকশিকাঁথা, পোশাক, জুতা, মোড়া, ফুলদানি, পুঁতির ফুলের টব, কুলা, ছুরি, স্ট্রে, নৌকা, ভ্যানিটি ব্যাগ, কাঠের কচ্ছপ ও বিমানের বেশ চাহিদা। এছাড়া স্কুল ব্যাগ, গেঞ্জি, টি-শার্ট, পাপোষ, বিছানা, জলচৌকি, ঝাড়ু, পুতুল, লুসনি, লুঙ্গি, গামছা, দোলনা, ব্যাডশিট, পুঁতির টিস্যু বক্স, ড্রেসিং টেবিলসহ দুই শতাধিক ধরণের পণ্য এখানে কেনা বেচা হচ্ছে।
পণ্য ভালো ও সাশ্রয়ী মানের হওয়ায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে। কারাদন্ডের অংশ হিসেবে কারাগারে বসেই কয়েদিরা এসব পণ্য তৈরি করছেন। তৈরি করছেন গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। কারাপণ্য হিসেবেই পরিচিত এসব ব্যবহার সামগ্রী কিনতে স্টলে ক্রেতারা ভিড় করছেন। এসব পণ্য কয়েকটি কারাগারের বিক্রয় কেন্দ্রে সব সময়ই পাওয়া যায়। প্রচার ও প্রসারের জন্য চতুর্থ বারের মতো বাণিজ্য মেলায় কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করা হচ্ছে।
মেলার স্টলে একদামেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে। মোড়া ৩শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা, টি-শার্ট ২শ’ টাকা থেকে ৫’শ টাকা, নকশিকাঁথা ২ হাজার টাকা থেকে ৬হাজার টাকা, পুঁতির ফুলের ঝুরি ১শ’ টাকা থেকে ২শ’ পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঠ ও পাটের সংমিশ্রনের তৈরি হস্তশিল্প পণ্যের দাম কম হওয়ায় দিন দিন প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। পণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছে। এসকল পণ্য তৈরিতে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থের জোগান দিয়ে কাঁচামাল কেনা হয়। পণ্য বিক্রির লভ্যাংশের অর্ধেক সংশ্লিষ্ট কয়েদিদের মধ্যে প্রদান করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ব্যাংক একাউন্ট কিংবা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রদান করা হয়। ৬৮টি কারাগারের মধ্যে এক একটি কারাগারের কয়েদিদের কাজের উপর নির্ভর করে কম বেশি আয় হচ্ছে। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েদিরা তাদের কারাদন্ড শেষে বাড়ি ফিরে এ শিল্পে জড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজ করছে। তাতে অপরাধ প্রবণতা কমছে।
কারা তদারক ওয়াসিম খান বলেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কয়েদিদের জন্য পণ্য উৎপাদনে যুক্ত করা হচ্ছে। কয়েদিরা কারাগার থেকে মুক্ত হলেও যেন তারা কাজের মধ্যে যুক্ত থাকতে পারে সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাতে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করছি।
স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি পূজা রাণী সরকার বলেন, মেলার ক্রেতা ও দর্শনকারীদের অনেকেই এসকল কয়েদি শ্রমজীবী মানুষদের জীবনের কথা শুনছেন।
রূপগঞ্জ ইউপি সদস্য ও পণ্য ক্রেতা রিটন প্রধান বলেন, কারুকাজে সাজানো কারাপণ্য এ স্টলের দিকে এখন নজর যেন সবার।
নারায়ণগঞ্জের গঙ্গানগর থেকে আসা গৃহবধূ শাহনাজ পারভীন বলেন, স্টলে গৃহস্থালির সকল পণ্য রয়েছে। দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় অন্যদের মতো তিনিও বেশকিছু পণ্য ক্রয় করেছেন।
দর্শনকারীদের টিকিটের ইজারাদারের পক্ষে ইমন হাসান খোকন বলেন, প্রাণঘাতী করোনার ভয়াবহতা নিরসনে স্বাস্থবিধি মানতে মেলা কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থা অবলম্বন করছে। তাতে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা স্বাস্থবিধি মেনেই মেলা পরিদর্শন এবং কেনাকাটা করছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারা কর্মকর্তা শাহ্ মোহম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কারাপণ্য এখন ব্যবসায়ীক দিক থেকে আলোর মুখ দেখছে। কয়েদিদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেপুটি জেলার মাসুদ হোসেন বলেন, কারাগার এখন বন্দিশালা নয়। সংশোধনাগার। সাশ্রয়ী দামে ভালো মানের এসব পণ্য কিনতে ক্রেতারা স্টলে ভিড় করছেন। দাম কম হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
বাংলাদেশ জেলের ডেপুটি জেলার মোঃ জাকির হাসান রিয়াল বলেন, কয়েদিদের উৎপাদিত ১৫ টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য বাণিজ্য মেলায় স্থান পেয়েছে। মেলায় প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সাড়া পেয়েছি।
তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী স্টল পরিদর্শন করে বলেছেন, মনে হয়েছে প্রতিটি পণ্যই শৈল্পিক, দৃষ্টিনন্দন, আকর্ষণীয়। টেকসই ও শ্রাসয়ী হওয়ায় তিনি এখান থেকে ১৫টি পণ্য ক্রয় করেছেন।
বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলার পরিচালনা করা হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দর্শনকারীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী তাদেরকে তা মানতে বাধ্য করা হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকেই মেলায় করতে দেওয়া হচ্ছে না। নো মাস্ক-নো সার্ভিস এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।