আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাণিজ্য মেলায় কেনাবেচার ধুম

এম.এ মোমেন

মেলার প্রথম ছুটির দিনে গতাকল ৬ জানুয়ারি শুক্রবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। মুখোরিত হয়ে উঠে মেলার প্রাঙ্গণ। স্টল ও প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে। বিকেল ৫টায় বাণিজ্য মেলায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। দর্শনার্থীর সমাগমে বিক্রেতা, মেলার আয়োজক ও প্রবেশ টিকিটের ইজারাদার খুশি। মেট্রোরেলের প্রতিকী কাঠামোসহ মূল ফটক, উৎসব মুখর আলোকসজ্জা, প্রাকৃতিক পরিবেশ, খোলা জায়গা, নিশ্চিত নিরাপত্তাসহ অন্যান্য আয়োজনে মেলা দিন দিন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। এবারের বাণিজ্য মেলায় টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট, প্রসাধনী, চামড়া ও কৃত্তিম চামড়া জাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য বাণিজ্য মেলার স্টলে স্থান পেয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মেলার প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় আসার প্রস্তুতি ছিল অনেকেরই। তাই অধিকাংশ দর্শকই অনলাইন টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ফলে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে পড়তে হয়নি। ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করে। জুম্মার নামাযের পর দল বেধে তারা মেলায় প্রবেশ করে। বিকেল ৫ টায় মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড় জমে। কেনাবেচার ধুম পড়ে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা স্টলগুলোতে তাদের পছন্দের পণ্য ঘুরে ঘুরে দেখেন ও কেনাকাটা করেন। বেশি ভিড় ছিল কাপড়, অলংকার, শো-পিস, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প ও ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের স্টলে। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর। গতকাল শুক্রবার দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় ছিল বেশি। পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই মেলায় এসেছেন। পছন্দের জিনিস কিনেছেন। প্লাস্টিক পণ্য, ক্রোকারিজ, ইমিটেশনের গয়না, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকসের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। মূল্য ছাড়সহ বিভিন্ন অফার থাকায় ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছেন। মেলায় শিশুদের জন্য রয়েছে নজরকারা ডিজাইনের পোশাক, জুতা ও খেলনা। জুম্মার নামাযের পর ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখোর হয়ে উঠে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। কেনা বেচাও বেশ। বিক্রেতারাও খুশি। বিকাল তিনটার মধ্যেই মেলা প্রাঙ্গন ভরে যায়। ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে অনেকেই চলে আসেন মেলায়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও দল বেঁধে আসেন। নানা শ্রেণির ও নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গন। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে স্টলের দায়িত্বরতদের হিমসিম খেতে হয়।
অ্যামেরিকা প্রবাসী ঢাকার খিলগাঁও থেকে আসা লায়ন আজাহার আলী ভুঁইয়া বলেন, ছুটির দিন থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি মেলায় এসেছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশ আর খোলামেলা জায়গায় মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে। মেলা উপভোগ করেছি। পরিবারের সদস্যরা খুশি। আমারও ভালো লাগছে। মেলাকে কেন্দ্র করে তাঁর অ্যামেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসা সার্থক হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ ফারজানা আক্তার বলেন, মেয়েটি গত কয়েকদিন ধরে মেলায় আসতে চাচ্ছে। কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার জন্য মেলায় আসেনি। ছুটির দিন পেয়ে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে মেলায় এসে আনন্দ পাচ্ছি।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া থেকে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুলতা থেকে কাঞ্চন ব্রীজ পর্যন্ত যানজট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছি। এখানে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা প্রয়োজন।
টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে আসা শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। তাই সড়কে যানজট আর ধুলাবালুতে একাকার হয়ে গেছে। চরম ভোগান্তি নিয়েই মেলায় এসেছি। মেলার আশপাশে ধুলাবালুতে মাখামাখি। সেখানে পানি ছিটানো দরকার।
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন গীতা রাণী সাহা। গৃহস্থালী পণ্য কিনেছেন তিনি। প্রথম দিকে দর্শনার্থীদের চাপ কম থাকবে এমন আশায় গতকাল মেলায় এসেছেন তিনি। কিন্তু লোক সমাগমের পরিমাণ এতো বেশি ছিল যে চলাচল করতে তাঁর কষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রয় প্রতিনিধি রাকেশ চন্দ্র সরকার বলেন, বিক্রি কম হলেও ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে। তবে মেলার দিন বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে বিক্রিও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ফুড বাংলো রেস্টুরেন্টের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, জুম্মার নামাযের পর থেকেই মেলায় লোক সমাগম বাড়তে থাকে। এসময় দম ফেলার সময় নেই। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।
ভারতীয় শীতবস্ত্রের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি চন্দ্রনা রাণী আচার্য বলেন, বাণিজ্য মেলায় শুক্রবার ক্রেতা দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সুযোগে আমাদের বিক্রিও বেড়েছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় শুক্রবার মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে। কাঙ্খিত দর্শনার্থীদের আগমনে সবাই খুশি। অবশ্যই বাণিজ্য মেলা ব্যবসা সফল হবে।