সৈয়দ রিফাত ও সাইফুল সুমন
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অবাধে চলছে সালফিউরিক এসিডের ব্যবহার। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সালফিউরিকের এমন ব্যবহারে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। এছাড়াও এই এসিডের কারণে হতে পারে ঘা, চর্মরোগ এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত। অভিযোগ আছে, প্রশাসনের খামখেয়ালীপনাকে পুজিঁ করে এসকল অসাধু ব্যবসায়ীরা দিনের পর দিন ঝুঁকি সম্বলিত এমন কার্যকলাপ পরিচালনা করে লাভবান হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফতুল্লার শিবু মাকেট-হাজীগঞ্জ রোডের দু’পাশের বেশ কয়েকটি ডাইং কারখানায় অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে সালফিউরিক এসিড। এছাড়াও লালখাঁর শেহাচর এলাকায় যান্ত্রিক উপায়ে যাবতীয় মার্কিন, লংক্লথ, ভয়েল পপলিন ও আস্তরের কাপড় উত্তমরূপে ধোলাই করার নামে গড়ে তোলা হয়েছে একাধিক বাংলা ডাইং। জানা গেছে, মূলত কাপড় উজ্জল ও রং করার লক্ষ্যেই বিভিন্ন ক্যামিকেলের সাথে সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করেন ডাইং কর্তৃপক্ষ।
একাধিক ডাইং কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করার কারনে কয়েক মাস পূর্বে ফতুল্লার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত জরিমানা করে গেছে। জেল-জরিমানা করার পরেও কমছে না সালফিউকের ব্যবহার বরং স্বল্প দামে বেশি লাভ হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকদের কাজ করাচ্ছে কিছু অসাধু ডাইংয়ের মালিকগন। সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করা ঠিক নয় জানিয়ে তারা আরও বলেন, এই এসিড হাতে পায়ে লাগলে ঘাঁ, চর্মরোগ হয়। যে কাপড়ে সালফিউরিক ব্যবহার করা হবে সেই কাপড় মানুষ পরিধান করলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে
লালখাঁ শেহাচর এলাকার একাধিক ডাইং সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সালফিউরিক এসিড ব্যবহার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। কম দামে এই এসিড দিয়ে কাপড় উজ্জল করা যায় তাই আমরা ব্যবহার করি। অভিযোগ আছে, সরকারি নিয়মনীতি না মেনে দেদারসে এসিড কেনাবেচা চলছে শহরজুড়ে। সহজলভ্যতা ও অসচেতনতার কারণে অবৈধ এসিড ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
খুচরা বাজারে এসিড কেনাবেচায় কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সহজেই সাধারন মানুষের কাছে এসিড পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে অবৈধভাবে এসিড ব্যবহার বন্ধে নানা প্রচার সত্বেও আশানুরূপ কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সাধারণত ছাপাখানা, তাঁত, বস্ত্র, ডাইং, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বর্ণশিল্প, সার, ব্যাটারি, পানি ও তেল বিশুদ্ধকরণ, অ্যালুমিনিয়াম, তামা, পিতল, চামড়া, চিনি ও প্রসাধনী শিল্প ছাড়াও স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে এবং ওষুধশিল্পে নানা ধরনের এসিড ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে হাইড্রোক্লোরিক এসিড, সালফিউরিক এসিড, ক্রোমিক এসিড, কস্টিক পটাশ ও কার্বলিক এসিডকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করে এসবের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে সরকার আইন করলেও তা প্রয়োগের গাফিলতির জন্য খোলা বাজারে এসিড এখনো সহজলভ্য।
সূত্রমতে, ২০০২ সালের ১৭ মার্চ প্রকাশিত গেজেটের ১ নম্বর আইনের অষ্টম অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, লাইসেন্স ব্যতীত এসিডের উৎপাদন, আমদানি, পরিবহন, মজুদ, বিক্রি ও ব্যবহার করা দ-নীয় অপরাধ। যারা লাইসেন্স করবে না ও লাইসেন্সের শর্তগুলো পালন করবে না, তাদের জন্য অনূর্ধ্ব ১০ বছর ও অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদ- এবং অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।
এতো আইন থাকা সত্বেও তার কোন তোয়াক্কা না করে যে যার মতো করে ফতুল্লার শিবু মাকেট-হাজীগঞ্জ ও লালখাঁ এলাকায় বেশ কয়েকটি ডাইংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক সালফিউরিক এসিড। তার উপর জেলা প্রশাসন থেকে এসিড ব্যবহারে কোন লাইসেন্স নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে এসকল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আবদুল মতিন খাঁন বলেন, এসিড ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। সালফিউরিক এসিড ব্যবহারে কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। সালফিউরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে যাবে। এসিড ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেটা ম্যজিস্ট্রেট সরজমিনে দেখবে। এরপর সে যদি পজেটিভ রিপোর্ট দেয় যে সেখানে সালফিউরিক ব্যবহারযোগ্য সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফতুল্লায় অভিযান পরিচালনা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি সেখানে তদন্ত করার জন্য লোক পাঠাবো। আমার স্টাফরা যদি আমাকে পজেটিভ রিপোর্ট দেয় তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে সেখানে যাবো। অবৈধ ভাবে সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।