আজ শুক্রবার, ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রার্থী জটিলতায় আটকে গেছে নির্বাচন

স্টাফ রিপোর্টার :
প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পরও তা আটকে গেছে মামলা জটিলতায়। গুঞ্জন রয়েছে, মামলাকে ঢাল বানিয়ে এই নির্বাচন আটকে দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা কম হয়নি। এবার নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিতে নির্বাচনী ফলাফলের পর ভিন্ন আলোচনা শুরু হয়েছে। কেননা, ওই চারটি উপজেলার প্রতিটিতেই স্থানীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলাফল; দুটি উপজেলাতে এমপির সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। সদর উপজেলায় যদি নির্বাচন হতো, তাহলে সেখানেও এমপি সমর্থিত প্রার্থীর ভরাডুবি ঠেকানো যেত কিনা- তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলাটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রিত এলাকা। তিনি এতটাই নিয়ন্ত্রন করে থাকেন যে, ইউপি সদস্য হতে গেলেও তার আশির্বাদ নিতে হয়- এমন কথাও বেশ প্রচলিত। সেখানে শামীম ওসমানের সমর্থন ব্যতিত উপজেলার চেয়ারম্যান হওয়াটা আদৌ সম্ভব কিনা- তা নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে উঠে, তখনই যেন এর ক্লাইমেক্স দেখা যায় বন্দর উপজেলা নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের বড় ভাই এমপি সেলিম ওসমান এবং তার অনুসারী নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সকলেই বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদকে সমর্থন দেন। এমপি শামীম ওসমানও রশীদের পক্ষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাকসুদকে নিয়ে সমালোচনার সুরে কথা বলেছিলেন। নগরবাসী যখন বন্দরে এমএ রশীদের জয় দেখার অপেক্ষায় ছিলেন, তখন বন্দরবাসী প্রভাবশালীদের সমর্থনের বিরুদ্ধে গিয়ে মাকসুদকেই ভোটের মাধ্যমে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও সোনারগাঁ উপজেলায় শামীম ওসমানের আশির্বাদ পেয়েছিলেন আনারস প্রতিকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবু। স্থানীয় এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার এবং সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার পূর্ন সমর্থনও পেয়েছিলেন বাবু। এরপরও বাবুর ভরাডুবি ঘটেছে।
এরপরই আলোচনা চলছে সদর উপজেলা নিয়ে। প্রবীন নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটিতে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এবার বাকি রয়েছে শুধু সদর উপজেলার পালা। মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দেখা দিলেও এই নির্বাচন চিরকালের জন্য বন্ধ থাকবে না। যখন নির্বাচন দেয়া হবে, তখন কী দেখা দিবে এই উপজেলায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রভাবশালীদের প্রভাবে যেন সাধারণ মানুষ বিষিয়ে উঠেছে। বন্দর ও সোনারগাঁয়ে এর প্রমাণও মিলেছে। এই অবস্থায় সদর উপজেলা নির্বাচনও উন্মুক্ত না রেখে যদি প্রভাব খাটানো হয়, তাহলে এখানেও হিতে বিপরিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর শামীম ওসমান মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহনিজামকে সমর্থন জানিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠে। অথচ, দলীয় প্রতীক বিহীন এই নির্বাচনে শাহ-নিজাম ছাড়াও উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু ও আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম চেঙ্গিস চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার জন্য ইচ্ছে পোষন করেছেন। কিন্তু শাহ-নিজামের পক্ষে শামীম ওসমানের সমর্থন রয়েছে- এমন গুঞ্জনে অন্যদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা গেছে ওসমান অনুসারীদের। বিশেষ করে, শাহাদাৎ হোসেন সাজনুকে নিয়ে একটি পক্ষ বিরুপ মন্তব্য করা শুরু করেছিলেন।
তবে, এমপির সমর্থনের পরও যে বিজয়ী হওয়াটা নিশ্চিত নয়, তা প্রতীয়মান হয়েছে বন্দর এবং সোনারগাঁয়ের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তাই অনেকেই বলছেন, সদর উপজেলায় যদি শামীম ওসমান শাহ্ নিজামকে সমর্থন জানান, তাহলে ভোটের মাঠে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বিদ্যমান।
জানা গেছে, গত ২১ মার্চ নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিলে জানানো হয়েছিল, ৮ মে দ্বিতীয় ধাপে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রার্থীতা ও সমর্থন নিয়ে যখন ওসমান বলয়ে ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, তখন একটি পক্ষ এই নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই পক্ষটি কে, তা পরিস্কার ভাবে প্রকাশ করা না হলেও শামীম ওসমানও বলেছিলেন, তিনি নিশ্চিত যে, সদর উপজেলার নির্বাচন হবে না। এরই মাঝে জানা যায়, সদর উপজেলা নিয়ে করা মামলাটি হাইকোর্ট থেকে খারিজ করে দেয়া হলেও তা পূনরায় সুপ্রিম কোর্টে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিট করা হয়েছে। ফলে গত ২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের এপিলেট ডিভিশনে মামলার শুনানিতে নির্বাচন স্থগীত করে দেন বিজ্ঞ আদালত। এতে এই নির্বাচন ঠিক কবে অনুষ্ঠিত হবে, কিংবা আদৌ হবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ