আজ মঙ্গলবার, ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রশাসন পরিচয়ে বাড়ছে প্রতারক

সাইফুল সুমন
মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়দানকারী ৯ প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব ও সেনা সদস্যের নাম ব্যবহার করেছে প্রতারকচক্ররা। এরা ভুয়া পরিচয় দিয়ে ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অপরাধ করতে গিয়ে সাধারন মানুষের কাছে গণপিটুনীর শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। দিনের পর দিন প্রশাসনের পরিচয়দানকারী এমন প্রতারকদের সংখ্যা বেড়ে চলায় সাধারণ মানুষ এক ধরণের বিভ্রান্তি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জানা যায়, গতকাল বিকেলে ফতুল্লার সাইনবোর্ড এলাকার চৌরঙ্গি পাম্পের সামনে ৫জন ব্যক্তি নিজেদেরকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে একটি সিগারেট কোম্পানির ক্যাশিয়ারকে গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো চ ১১-৩১৪৪) তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয় এলাকাবাসি ৩ জনকে আটক করে গণপিটুনী দেয় আর বাকি দু’জন পালিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে র‌্যাব-১০ এর সদস্যরা তাদের আটক করে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন।
১০ জানুয়ারি সোনারগাঁয়ের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গরু ভর্তি ট্রাক ছিনতাই করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
৮ জানুয়ারি রূপগঞ্জে উপজেলার ভুলতা এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৩৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গাড়ির চালকসহ ৩ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে ছিনতাইকারীরা।
৭ জানুয়ারি রাতে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ভুয়া সেনা সদস্য পরিচয়ে আলমগীর খাঁন (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই বোনকে অপহরণ করে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানা গেছে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন জানান, আসামি আলমগীর হোসেন ২০১২ সালে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি স্টোরে চাকুরি নিয়ে সেনাবাহিনীর ভুয়া আইডি কার্ড সংগ্রহ করে। পরে সে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতো। মিথ্যা পরিচয় দিয়েই ফেইসবুকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী দুই কিশোরীর সাথে ভাই-বোনের সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে সম্পর্কের জেরে গত ২৫ ডিসেম্বর সে ভুক্তভোগীদের বাড়িতে কৌশলে অবস্থান করে এবং তাদের আপত্তিকর কিছু ছবি মোবাইলে ধারণ করে। ওইদিন রাতে দুই বোনকে যৌন নিপীড়ন করে সে। একই সাথে এই বিষয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। পরে আসামি আলমগীর বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দেয় এবং তার কথামতো না চললে ভুক্তভোগীর আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি প্রদর্শন করে। এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর বিভিন্ন কৌশলে ফুসলিয়ে ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অপহরণ করে ঢাকা-বরিশালগামী কীর্তনখোলা লঞ্চের কেবিনে উঠিয়ে দুই বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তাদের মারধর ও হত্যার চেষ্টা করে আলমগীর। পরদিন ভোরে ভুক্তভোগীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় ভুক্তভোগীদেরকে তাদের নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযান চালিয়ে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। গ্রেপ্তারকৃত আলমগীর খাঁন (২৫) নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার কাটা কুশিয়া এলাকার এলাহি নেওয়াজ খাঁয়ের ছেলে।
৬ জানুয়ারি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন নারায়ণগঞ্জের দুই জন। গণধোলাইয়ের পর তাদের পুলিশে সোর্পদ করে স্থানীয়রা। গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ের ভুয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর এলাকায় পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় তিন ডাকাতকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দেয় স্থানীরা। তিন জনের মধ্যে দুইজন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের। আর অন্য জন হলো কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার। গ্রেফতারকৃত নারায়ণগঞ্জের দুই জন হলেন, ফতুল্লার জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) ও সিদ্ধিরগঞ্জের রিপন মিয়া (৪৬)।
৪ জানুয়ারি বিকেলে ফতুল্লার ভূইগড় এলাকায় থেকে পুলিশের পোশাক পড়ে ছিনতাইকালে খেলনা পিস্তল ও বেতারযন্ত্রসহ (ওয়ারলেস) গ্রেপ্তার করা হয় শামীম নামে এক যুবককে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে একটি প্রাইভেট কার থামায় চার যুবক। পরে গাড়ির কাগজপত্র দেখে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে যাওয়ার পথে ভূইগড় এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানের সাথে ধাক্কা লাগে। পরে কাভার্ডভ্যান চালক ও প্রাইভেট কার চালকের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে চার যুবকের তিনজন পালিয়ে যায়। এ সময় শামীম নামের ওই যুবককে মারধর করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ এসে যুবককে আটক করে। এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার (ওসি) মো. আসলাম হোসেন জানান, তিনটি খেলনা পিস্তল ও দুটি ওয়ারলেসসহ একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার গায়ে ডিএমপির পোশাক ছিল। আসলে সে পুলিশ সদস্য না। ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল তাদের। তবে তার সহযোগী তিনজন পুলিশ আসার আগেই পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, এসব বিষয়ে আমরা তৎপর আছি। আমাদের সাদা পোশাকে বিভিন্ন বাহিনী কাজ করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আবার তৎপর হয়েছে। আমরা এসকল গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষের ভয় পাওয়ার কিছু নেই কারন এসব ভুয়া পরিচয়দানকারীরা কিছু সময়ের জন্য মাথাচারা দিয়ে দাড়ায় কিন্তু আমরা তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম।