নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জের কালীরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর ঘোষ হত্যাকান্ডের রহস্যের জট খুলছেনা যেন। ঘাতক পিন্টু দেবনাথ চতুরতার সাথে একেক সময় একেক তথ্য দিয়ে তদন্তকারী সংস্থাকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। রিমান্ডে থাকা ঘাতক পিন্টু দেবনাথের সকল তথ্যই যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে হত্যার মুল রহস্য এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, প্রবীর ঘোষ হত্যার পর থেকে পিন্টু দেবনাথের নারী কেলেঙ্কারীসহ নানা অপকর্মের কথা চাউর হয়েছে। বেরিয়ে আসছে পিন্টু দেবনাথের অতীত কর্মকান্ডের নানা তথ্য। আর এনিয়ে কালীরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
তদন্ত সংস্থাকে ঘাতক পিন্টু দেবনাথ জানিয়েছেন, স্বর্ণ আর আর্থিক লেন-দেনের কারণে খুন হয়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রবীর চন্দ্র ঘোষ এবং পিন্টু নিজেই খুন করেছে প্রিয়বন্ধুকে। তবে তদন্তকারী সংস্থা পিন্টুর কথায় পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না।
জেলা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিবি) তদন্তকারীরা বলছে, পিন্টু একাই প্রবীরকে হত্যার পর লাশ টুকরো টুকরো এবং লাশ গুম করা পর্যন্ত সবকিছু সে নিজেই করেছে বলছে। এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়। কারণ, তার শারীরিক অবস্থা দেখে এটা অনুমেয় সে একা এগুলো করতে পারবেনা। তার দেয়অ সকল তথ্য যাচাই বাছাই করে হত্যা রহস্যের জট খুলতে কাজ করছেন তদন্তকারী সংস্থা।
অন্যদিকে, বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, পিন্টুর ওস্তাদ অপু রায়ের স্ত্রীর সাথে পিন্টুর পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। পিন্টু যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সেই বাড়ির প্রতিবেশী ও কালীরবাজারের স্বর্ন ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, রাশেদুল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার ৪তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকতো পিন্টু দেবনাথের ওস্তাদ অপু রায়। যার কাছে স্বর্ণালংকার বানানোর কাজ শিখে পিন্টু। এক সময় পিন্টু ভালো কারিগর হয়ে উঠে। সুদর্শন পিন্টু অপু রায়ের পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। এই থাকার সূত্রধরে ওস্তাদের স্ত্রী শীলা রানীর সঙ্গে পিন্টুর পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। প্রায় ১৫ বছর পূর্বে অপু রায় পরলোক গমন করেন। অপু রায়ের মৃত্যুর পরও পিন্টু ওই বাসাতে থাকতো। এতে শীলা রানীর সঙ্গে পিন্টুর ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে অপু রায়ের ছোট ছেলেও মারা যায়। কিন্তু প্রচার করা হয় সে ক্যান্সারে মারা গেছে। শুধু তাই নয় অপু রায় ও তার ছোট ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় সন্দেহের তীর পিন্টুর দিকে। এদিকে ছোট ছেলের মৃত্যুর পর শীলা রানী ও পিন্টুর সম্পর্ক নিয়ে চরম ক্ষোভ তৈরী হয় এলাকায়। এক পর্যায়ে জনরোষের শিকার হয়ে শীলাকে তার বড় ছেলে অনিকসহ শহরের টানবাজারে বাসা ভাড়া করে দেয় পিন্টু। তবে কালিরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা জানতো শীলা রানী সাভারে তার স্বামীর বাড়িতে চলে গেছে। এদিকে পিন্টুর সঙ্গে শীলা রানীর যোগযোগ নষ্ট হয়নি।
বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে, পিন্টুর পরকীয়া প্রেমিকা শীলা রানী প্রবীর ঘোষ হত্যার পর গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা গেছে, শীলা রানী টানবাজারের সাহাপাড়ায় দেবালয়ের বিল্ডিং এ ভাড়া থাকতো। বর্তমানে সে আর এই বাসায় নেই। প্রবীর ঘোষের লাশ পাওয়ার পর থেকেই সে লা পাত্তা।
কালীরবাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীলা রানী আটক হলেই ঘটনার নেপথ্যের অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তারা।
তারা আরও জানান, শীলা রানীর সাথে সম্পর্কের বিষয় নিয়ে প্রবীরের সঙ্গে পিন্টুর মনোমালিন্য হয়েছিল। শীলা রানীর সংস্পর্শই পিন্টুকে নর পিচাশের ভুমিকায় নিয়ে যায় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অবিবাহিত পিন্টুর নারী আসক্তির বিষয়টি কালীরবাজারের স্বর্ণপট্টির কম বেশি সকল ব্যবসায়ী জানেন। তাই আমলাপাড়া ও ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র মনে করছে, শীলা রানী আটক হলেই পিন্টুর অজানা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
প্রসঙ্গত, ১৮ জুন রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রবীর ঘোষকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে খুন করে পিন্টু দেবনাথ। এরপর লাশ টুকরো টুকরো করে বাড়ির সেফটিক ট্যাংকি ও ড্রেনে ফেলে দেয়। বর্তমানে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছে সে।