সজিব খান: আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের দীর্ঘ প্রায় পৌঁনে চার ঘণ্টার সংলাপ হয়েছে। সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ড. কামাল হোসেন দুইপক্ষে নেতৃত্ব দেন।
সংলাপ শেষে ড. কামাল হোসেন গণভবন থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আলোচনা ভালো হয়েছে। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। তবে শুধু তিনি বলেন, তারা সংলাপে সন্তুষ্ট নন।
এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তাদের যেভাবে যুক্তি দিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে উনাদের অনেকেই কনভিন্স। ঐক্যফ্রন্ট চাইলে আবারও আলোচনা হবে। তবে আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারবো না- এটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দুয়ার সব সময় খোলা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন- সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবনে সন্ধ্যা ৭টায় সংলাপ শুরু হয়। রাত ৯টার পর নৈশভোজের জন্য সংলাপে বিরতি দেওয়া হয়। নৈশভোজের পর তা আবারো শুরু হয়।
সংলাপে সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে গণতন্ত্র অব্যাহত রেখেছি। দেশটা আমাদের সকলের, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, সবাই মিলে দেশটাকে গড়তে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নেতাদের উদ্দেশে আরো বলেন, আওয়ামী লীগ ৯ বছর দশ মাস ক্ষমতায় থেকে দেশের যে উন্নয়ন করেছে, তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। আমি এর বিবেচনার ও বিচারের ভার আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। এটুকু বলতে পারি দেশের সাধারণ মানুষ ভালো আছে, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে, দিনবদলের যে সূচনা করেছিলাম সেই দিন বদল হচ্ছে।
তিনি বলেন, মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন- এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে কাজ করছি।’
সন্ধ্যা ৭টায় সংলাপ শুরু হলে শেষ হয় রাত পৌনে ১১টা নাগাদ। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তীতে দলের পক্ষ থেকে ব্রিফ করা হবে।
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সংলাপে যোগদিতে প্রধানমন্ত্রী বাসভবনে পৌঁছান গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও ১৪ দলের নেতারা।
প্রতিনিধি দলে বিএনপি নেতাদের মধ্যে ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান। এছাড়া অসুস্থতার কারণে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অনুপস্থিত ছিলেন। রয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এস এম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ।
আরও ছিলেন, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আ ও ম শফিকউল্লাহ এবং নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না।
সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদের, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, মো.আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আনিসুল হক, মাহাবুব-উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপ, শ ম রেজাউল করিম, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, মইনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর সংলাপের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। পরদিনই সংলাপে রাজি হওয়ার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছে দেন।
এরপর সংলাপের জন্য ১৬ জনের নামের তালিকা পাঠায় ঐক্যফ্রন্ট। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে তালিকায় আরও পাঁচজনের নাম যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে চিঠিতে পাঠান ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মহসীন মন্টু।