আজ মঙ্গলবার, ২৩শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রত্যাশা থেকে ‘পিছটান’

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও ভূমিদুস্যতার বিরুদ্ধে ‘প্রত্যাশা’ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাংসদ শামীম ওসমান। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি এ উপলক্ষে বিশাল একটি সভাও করেছিলেন তিনি। ওই সভায় তিনি জানিয়েছিলেন, দলমত নির্বিশেষে সমাজের ভালো মানুষ নিয়ে তিনি এই সংগঠনটি করতে চান। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘যত যাই হোক তিনি মাথা নত করার মানুষ নন।’
এদিকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমাজের ভালো মানুষগুলোকে নিয়ে কিছু করতে চাওয়া এই সাংসদের এমন ইচ্ছেকে শুরুতে মানুষ সাধুবাদ জানালেও বর্তমানে তার সেই উদ্যোগকেই এখন অনেকেই স্টন্টবাজি বলে মন্তব্য করছেন। তবে, এখানে আবার কেউ কেউ বলছেন, অনেক সময় মানুষ কিছু ভালো সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সে কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে কখনও কখনও সেই মানুষ নিজেই অসহায়বোধ করেন। কেননা, লোম বাছতে গিয়ে অনেক সময় কম্বল উজাড় হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যায়। এই সাংসদের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। যার কারণে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েও গত ৬ মাসেও প্রত্যাশার কার্যক্রম তিনি শুরুই করতে পারেননি।
অভিজ্ঞরা বলছেন, সাংসদ শামীম ওসমান যে কম্বল জড়িয়ে উষ্ণতা উপভোগ করেন সেই কম্বলের লোম যদি তিনি বাছতে যান তাহলে পুরো কম্বলই উজাড় হয়ে যাবে। তখন তিনি উষ্ণতা বঞ্চিত হবেন। হয়তো সে কারণে কম্বলের লোম বাছা থেকে নীরবে দূরত্ব বজায় রাখছেন প্রভাবশালী এই সাংসদ। কেননা, তার অনুগামিদের মধ্যে যে কজন নেতৃত্ব স্থানীয় রয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সমাজে বহুধা বিতর্কে জড়িত। ফলে এদের বিরুদ্ধে তিনি ব্যবস্থা নিতে গেলে তার রাজনীতি প্রায় শেষই হয়ে যাবে বলে তারা মনে করেন। ফলে স্বীয় স্বার্থেই তিনি প্রত্যাশা পূরণে একরকম ব্যর্থই হচ্ছেন।
সূত্র বলছে, সিদ্ধিরগঞ্জে তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, বন্দরের খান মাসুদ, ফতুল্লা মীর হোসেন মীরু, হাবিবুর রহমান রিয়াদ, সোনারগাঁয়ের সোহাগ রনি প্রমূখরা দীর্ঘদিন ধরেই বহু ধরণের বিতর্কে সম্পৃক্ত। এদের মতো আরও বহুসংখ্যক ব্যক্তি রয়েছেন বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়। যারা মূলত সাংসদ শামীম ওসমানের লোক হিসেবে পরিচিত। যাদের স্থানীয়রা তটস্থ থাকেন। এর মূল কারণ হচ্ছে এদের সবারই রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। যে বাহিনী বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। এমন কী হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য ঘটনায়ও কেউ কেউ সম্পৃক্ত।
অভিজ্ঞরা বলছেন, শামীম ওসমানের সব থেকে বড় একটি গুণ হচ্ছে তিনি অল্প সময়ের নোটিশে অসংখ্য মানুষ জড়ো করে যেকোনো সভা সমাবেশ করতে পারেন। এমন দক্ষতা অন্যকোনো রাজনীতিকের মধ্যে খুব একটা দেখা যায় না। তিনি অবশ্য এটা পারেন উপরে উল্লেখিত সেসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের কল্যাণে। ফলে এদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড যদি এই সাংসদ বন্ধ করতে চান, জোড়ালো পদক্ষেপ যদি গ্রহণ করেন তাহলে তিনি স্বল্প নোটিশে যেসব লোকজন জড়ো করতে পারতেন তা আর সামনে সেসব সম্ভব হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। হয়তো এ কারণেই প্রত্যাশা নামক সংগঠনের মাধ্যমে তিনি যে প্রত্যাশার কথা শুনিয়েছিলেন সেখান থেকে পিছটান দিলেন কিনা সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত শফিকুল ইসলাম বহু বিতর্কে বিতর্কিত। তার শেল্টারে বেড়ে উঠছে তিন তিনটি কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আর এ গ্যাংয়ে নেতৃত্বে রয়েছে খোদ শফিকুল ইসলামের ছেলে।
অন্যদিকে একই এলাকার কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিকে ঘিরেও বিতর্ক কম নেই। খোদ তিনি নিজেও জড়িয়েছেন দুর্নীতির মামলায়। এছাড়া তার অনুসারি হিসেবে পানি আক্তারসহ এমন অনেকেই রয়েছেন স্থানীয়দের কাছে আতঙ্কের কারণ। ইপিজেডের নিয়ন্ত্রক হিসেবে তাদেরকে ধরা হয়ে থাকে। এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।
এদিকে বন্দরের আতঙ্ক হিসেবে গণনা করা হয় খান মাসুদকে। পুলিশের উপর হামলা থেকে শুরু করে অস্ত্র, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ একাধিক মামলার আসামি এই মাসুদ। তিনি সরাসরি শামীম ওসমানের লোক হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। আবার তার অধিনস্থ রয়েছে বিশাল এক বাহিনী। এ বাহিনীর প্রত্যেকেই স্থানীয় পর্যায়ে যারপরনাই বিতকির্ত। প্রত্যেকের নামেই রয়েছে একাধিক মামলা। তারা মূলত ওসমান পরিবারের লোক পরিচয়েই এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছেন।
অন্যদিকে ফতুল্লা মীর হোসেন মীরুকে শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে ধরা হয়। তার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় রয়েছে অসংখ্য মামলা। তার রয়েছে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর প্রত্যেকের ভয়ে স্থানীয়রা থাকেন তটস্থ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ এহেন কোনো কাণ্ড নেই তারা সংঘটন করেন না।
এছাড়াও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের বিরুদ্ধেও রয়েছে কিশোর গ্যাং, ছিচকে সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদেরকে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ। এসব গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন তার চাচাতো ভাই ও অনুগামিরা। চলতি বছরে এই গ্যাংয়ের হামলায় দানিয়েল নামে এক যুবক নিহতও হয়েছেন। হাবিবুর রহমান রিয়াদ সাংসদ শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।
অপরদিকে সোনারগাঁয়ে সোহাগ রনির বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বর্তমান সরকার আমলে তিনি বিভিন্ন ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অঢেল ধন সম্পদের মালিকও বনেছেন। যদিও তার অতীত বলছে তিনি অর্থবিত্তের মালিক ছিলেন না। বর্তমানে আঙুল ফুলে তার কলাগাছ হয়েছে বলে অনেকেই বলছেন। তিনি সাংসদ শামীম ওসমানপুত্র অয়ন ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।