স্টাফ রিপোর্টার :
আলোচিত এমপি শামীম ওসমান মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন বহু আগেই। এসব নিয়ে তার বক্তব্য আলোচনার তুঙ্গে উঠেছিল বারংবার। কেউ কেউ সাধুবাদ জানালেও কার্যক্রম না থাকায় অনেকেই বলেছিলেন, বলার জন্যই বলে থাকেন শামীম ওসমান। তবে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন পবিত্র কাবা শরীফকে স্বাক্ষী রেখে। নির্বাচনের আগে ওমরাহ পালনের সময় পবিত্র কাবা শরীফের সামনে দাঁড়িয়ে শামীম ওসমান বলেছিলেন, মাদক ও সন্ত্রাস নির্মূল করবেন তিনি। নির্বাচনের পর সেই লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন প্রত্যাশা নামক একটি সংগঠনের। শুরুতে সভা-সমাবেশ ও গরম বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা তুললেও বর্তমানে শামীম ওসমানের সেই প্রত্যাশায় তোড়জোড় নেই। তিনি এক ওমরায় প্রতিজ্ঞা করেছেন, এখন আরেক ওমরাহ পালনে মক্কায় গিয়েছেন।
তবে তার সেই প্রতিজ্ঞা এবং প্রত্যাশার কতটা পূরন করতে পেড়েছেন, সেই আলোচনা চলছে নগরীতে। উপরন্ত তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের চাচাতো ভাই এবং অনুসারীরা প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী দানিয়েলকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাকাণ্ডের মত দুঃসাহসিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন। এতে প্রত্যাশা নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। কিছুদিন সভা-সমাবেশ ও বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনায় থাকলেও এখন তোড়জোড় না থাকায় নগরবাসীর কাছে প্রশ্ন উঠেছে, এসকল সভা-সমাবেশ কী তবে শামীম ওসমান লোক দেখানোর জন্য করেছেন, নাকি অন্য কাউকে ভয় দেখানো অথবা আলোচিত ইস্যুগুলোকে ধাপাচাপা দেয়ার কৌশল এঁটেছিলেন তিনি!
তথ্য মতে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার ৪২ লাখ টাকা কান্ডে গ্রেফতার হয়েছেন। এই অর্থের উৎস এবং নেপথ্যে রানা নামে এক ব্যবসায়ীর নাম সামনে আসে। আলোচিত এই রানাকে নিয়ে নানা তথ্য উপাত্ত ছাপা হয়েছিল খবরের কাগজে। যা ‘হট টপিক’ হয়ে উঠেছিল গোটা নারায়ণগঞ্জে। এই রানার পরিচয় প্রকাশ করে স্থানীয় একটি গণমাধ্যম দাবি করেছে, তিনি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ-সভাপতি এসএম রানা এবং শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। এ নিয়ে যখন সরব ছিলো নগরবাসী, তখন আরো একটি বিষয় সামনে চলে আসে। তা হলো জেলার সর্বোচ্চ পর্যায়ের এক সরকারী তথা প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে শামীম ওসমানের বৈরী সম্পর্ক। মূলত, শামীম ওসমান প্রত্যাশা নামক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে যেই সমাবেশ করেছিলেন, ওই সমাবেশে ওই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অংশগ্রহণ না থাকায় শামীম ওসমান প্রকাশ্যেই নানা ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন। এমনকি একই সভায় ৪২ লাখ টাকা প্রসঙ্গেও নানা মন্তব্য করেছিলেন শামীম ওসমান।
সচেতন মহল বলছেন, ৪২ লাখ টাকা কাণ্ড এবং রানার ইস্যুটি এখন ডিপ ফ্রিজে চলে যাচ্ছে। একই ভাবে তোড়জোড় কমেছে শামীম ওসমানের প্রত্যাশা নামক সংগঠনটিরও। তাই যোক্তিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী আলোচিত ওই ইস্যুগুলো আড়াল করতেই প্রত্যাশার আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে সকলের নজর ভিন্ন দিকে নিতে চেয়েছিলেন শামীম ওসমান!
ুজানা গেছে, ষাট পেড়িয়ে শামীম ওসমানের বয়স গড়িয়েছে সত্তরের কোঠায়। ৬২ বছর বয়সে ৪র্থবারের মত এমপি হওয়া শামীম ওসমান প্রথমবার এই স্বাদ পেয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ৩৩ বছর বয়সেই এমপি হয়েছিলেন তিনি। সেই সময়ের শামীম ওসমানকে কেন্দ্র করে এই জেলার প্রতি বহিরাগতদের মাঝে ভিন্ন ধারনা জন্মেছে, এমন কথা প্রচলিত। একটি পক্ষ তাকে গডফাদার বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন প্রায় সময়। তবে সময় বদলেছে। বদলেছেন শামীম ওসমানও। ৩৩ বছর বয়সে তিনি অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে বজ্র কণ্ঠে আওয়াজ না তুললেও সত্তরের কোঠায় দাঁড়িয়ে সেই আওয়াজ তুলেছেন, মাদক নির্মূলের প্রতিজ্ঞা করে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন প্রত্যাশার। এতে প্রত্যাশিত নগরবাসীর প্রত্যাশা কী আদৌ পুরণ হয়েছে? সংগঠনের কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় এমন নানা আলোচনা চলছে সচেতন মহলে।