রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি: পুণ্যস্নান ও নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোনার মোড় নামক স্থানে ইতিহাস খ্যাত যমুনা ও ইছামতি নদীর সংযোগ স্থলে ঐতিহ্যবাহী ১৪৩তম বারুণী উৎসব।
বৃহস্পতিবার বারুণীর উৎসব উপলক্ষ্যে খুব সকাল থেকে শ্যামনগর সহ বিভিন্ন এলাকার পুণ্যার্থীরা মৃত যমুনা কুলে এসে উৎসবে অংশ গ্রহন করেন।এ সময় দেখা যায় যাদের মানত ছিল তাদের অনেকে গঙ্গা দেবীর মূর্তি নিয়ে মন্ডপ স্থলে পুণ্যের আসায় আসেন।
জানা যায় এবার বারুণীর যোগ শুরু হয়েছে সকাল ৯টা থেকে এবং রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।এ সময়ে বহু ভক্ত বৃন্দ বা পুণ্যার্থীরা যমুনায় পুণ্য স্নান করবেন বা করেন।
উৎসবের পুরোহিত হরিপদ মুখ্যার্জী জানান, চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণ এয়োদশ তিথিতে বারুণী উৎসবে বিভিন্ন এলাকার ব্রাক্ষণ সমাজের অনেক ব্যক্তি এসে পূজা অর্চনা করে থাকেন। বিভিন্ন পুণ্যার্থীগণ মাসিক,বাৎসরিক শ্রাদ্ধকার্য ব্রাক্ষণের মাধ্যমে সমাপ্ত করে থাকেন।এ ছাড়া গোকিস্তি সহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করেন।
বারুণীর উৎসব আয়োজক কমিটির প্রধান বরুণ কুমার ঘোষ বলেন এ বছর ১৪৩ তম বারুণীর উৎসব চলছে। তিনি উৎসবের স্থলে পাকা বেদী নির্মানের জন্য ও যমুনা নদী পুনঃখননের ব্যাপারে কতৃপক্ষের নিকট দাবী জানান। পুরোহিত হরিপদ মুখ্যার্জী ,বিবেকানন্দ মুখ্যার্জী ও অন্যান্যরা জানান ঐতিহ্যবাহী বারুণীর উৎসবের আয়োজক বংশীপুর ঘোষ পরিবার।
এ বারুণীর মেলায় অতীতের ন্যায় দেশীয় মৃৎ, বাঁশ বেত তালপাতার সহ বিভিন্ন প্রকার হস্ত শিল্প জাত দ্রব্যের সমাগম ঘটে।তবে অতীতের ন্যায় বাইচকোপ, পুতুল নাচ, যাত্রা সহ অন্যান্য বিনোদন মুলক উৎসব এখন পালিত হয়না। মেলার আগত ৪৭ বছর বয়সের দর্শনার্থী রবীন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন আগে এ বারুণীর উৎসবকে কেন্দ্র করে মাস ব্যাপী মেলা চলত। মেলায় যাত্রা,পুতুল নাচ সহ বিনোদনের ব্যবস্থা থাকত। এ মেলায় শুধু হিন্দু ধর্মালম্বী নয় অন্যান্য ধর্মের লোকজনও পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন।
এ বছর বারুণীর উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় পদাবলী কীর্তনের আয়োজন করা হয়। দিন ব্যাপী পদাবলী কীর্তন পরিবেশন করেন শ্রী ভ’ষণ কুমার মন্ডল-গেীরিপুর ও শ্রী নিমাই মন্ডল-সিরাজপুর। মেলার শান্তি শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ঈশ্বরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এড.জি এম শোকর আলী সহ ইউপি মেম্বরবৃন্দ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক সদস্যদের মাধ্যমে। মেলায় দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মেলার আগত পুণ্যার্থীবৃন্দ দাবী করেছেন উৎসব সংলগ্ন স্থানে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারী ল্যাট্রিন স্থাপনের।
লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামীন মেলা ও উৎসব।