আজ শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পরকীয়া প্রেম

“পরকীয়া প্রেম“ বলাটা যেমন সহজ , করাটাও সহজ কিন্তু এর ফলাফল খুবই ভয়ানক। সোজা কথায় একজনের বউ/প্রেমিকা আরেকজন অনৈতিকভাবে নিয়ে যায়, বা একজনের স্বামী/প্রেমিককে খুব আপন করে নেয় অন্য কোন নারী।শুধু বৈবাহিক জীবনে এই সম্পর্ক ঘটে তা কিন্তু নয়, এই নোংরা ও অবৈধ সম্পর্কটি প্রেমিকযুগলের সুন্দর সম্পর্কতেও ঘটে।যদিও বৈবাহিক জীবনে এই সম্পর্কের পরিমান বেশি।

এই পরকীয়ার ছোবলে একটি সুন্দর সংসার তছনছ হয়ে যাচ্ছে নিমষেই, এর ফলাফল, কোন সন্তান হারায় তার প্রিয় মা/বাবাকে, কোন স্বামী হারায় তার স্ত্রীকে এবং কোন মা হারায় তার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা একটি পরিবার।

কেন এই সম্পর্ক? অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, এই প্রেমে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশী। একাকীত্ব অনুভব করা নারীরা বেশিরভাগ এই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছে, রিয়া (ছদ্মনাম) নামের এক পরকীয়া প্রেমিকার সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বামী বিদেশ থাকে  দীর্ঘ সময় পর পর বাড়িতে আসে। বাসায় একা একা অনুভব করি, কোন বন্ধু পাওয়ার আশায় এই সম্পর্কে আসি। আমার স্বামী আমাকে অনেক বিশ্বাস করে হয়তো তার বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রাখতে পারছিনা। আমার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে সে নার্সারীতে পড়ে। ছেলেকে স্কুলে দিতে গিয়ে সেখানে কিছু শিক্ষকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। এর ফলে আস্তে আস্তে আমি প্রেমে পড়ে যাই, আমি মনে করি একজন বন্ধু থাকতে পারে  যে আমার সবসময় কেয়ার করবে, তাই এমন একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি।

অনেকের মতে স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় পরকীয়ার হার আরও বেড়ে গেছে। ডিজিটাল এইযুগে অনলাইনে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার ব্যাপক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই সম্পর্কগুলোতে আবেগীয় বিষয়টাই বেশি থাকে, যা অনলাইন বা ভার্চুয়াল যগতে খুব সহজেই আবেগ বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। নারীরা নিজেদের চাহিদা অনুসারে কোনকিছু না পাইলেই অন্যপথে হাটতে পারে খুব সহজে। প্রত্যেক স্বামী এবং স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক কিছু চাহিদা আছে। যখন এসব চাহিদা পূরণ হয় না, মূলত তখনই পরকীয়ার সূত্রপাত ঘটে।

একে অপরের প্রতি উদাসীনতা ধীরে ধীরে একজন স্বামী থেকে একজন স্ত্রীকে আলাদা করে ফেলে, বা একজন স্ত্রী থেকে স্বামীকে আলাদা করে ফেলে। যদিও পরকীয়ার কারণের অভাব নেই, আর্থিক ও শারীরিক অক্ষমতা, স্বামীর অনুপুস্থিতি, বয়সের পার্থক্য….ইত্যাদি। আর্থিক ও শারীরিক অক্ষমতা; পরকীয়া সম্পর্কিত নারীরা তাদের স্বামীর মধ্যে একটু ত্রুটি পেলেই অন্যপথে হাটতে পছন্দ করে। স্বামী আর্থিকভাবে/শারিরীকভাবে একটু দূর্বল থাকলেই তারা মনে করে আমার সুখ নাই।আমি পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী মানুষ, এ জীবনে সুখ হারিয়ে ফেলেছি।

এতে করে সন্ধান করে নতুন কাউকে আবার এ সুযোগ কাজে লাগায় অনেক পুরুষ। এর ফলে ঘটে পরকীয়া প্রেমের সূত্রপাত, একে অপরের প্রতি খুব যত্ন ও ভালোবাসা দেখা গেলেও উদ্দেশ্য হাসিল হওয়া পর্যন্ত টিকে এই সম্পর্ক। উদ্দেশ্য হাসিল শেষে উভয়ের একজন বা কোন সম্পর্কে উভয়ই খুব আবেগপ্রবণ হয়ে বিয়ে পর্যন্ত করতে চায়। তার ভেঙ্গে যায় একটি সুন্দর সংসার সুখের পরিবারগুলো ঘূর্ণিঝড়ের মত মুহুর্তেই লন্ডবন্ড হয়ে যায়। এই সম্পর্কের ফলে হত্যাকান্ডের মত ঘটনাও অহরহ ঘটতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বজূড়ে।

পরকীয়ার প্রেমিক-প্রেমিকাদের উদ্দেশ্যেঃ

বিয়ে মানে একটি বৈধ সম্পর্ক আমরা কেন এই সম্পর্কটিকে নষ্ট করে দিচ্ছি?

বিয়ে কেবল শারীরিক সম্পর্ক নয়, বরং পরস্পরকে জানার বোঝার একটি মাধ্যম।

হয়তো আপনাদের মাঝে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে, সেই ত্রুটিগুলো সমাধান করার চেষ্টা করুন। যে কোন সমস্যায় থাকুন না কেন আপনার ধর্মের সৃষ্টীকর্তার কাছে প্রার্থনা করুন, অবশ্যই সমাধান পাবেন।

এতেও যদি ধর্য্যহারা হয়ে যান, আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক আইনিভাবে বিচ্ছেদ করুন। অনুগ্রহ করে আপনার সন্তান ও অন্য কারও সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করবেন না। নিজে ভালো থাকুন এই পৃথিবীর সকলকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন। দেখবেন এই পৃথিবীতে সুখের কোন ঘাটতি থাকবে না, মনে রাখবেন বৈধ জিনিস স্বল্পতায় ও পূর্ণতায় এবং অবৈধ জিনিস দীর্ঘতায় অপূর্ণতায়।

লেখকঃ মোঃ শিপন মীর।

নিজস্ব প্রতিবেদক, দৈনিক সংবাদচর্চা।