আজ শনিবার, ১লা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পথে পথে চলন্ত বোমা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ: প্রতিদিনই ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকা থেকে টেম্পু কিংবা বেবি টেক্সির করে আসেন সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সায়মা আক্তার। আবার কলেজ শেষে বাড়ি ফিরেন একই ধরণের পরিবহনে।
পারিবারিক কাজে অটো রিক্সা (সিএনজি) করে মুক্তারপুর থেকে চাষাড়ায় এসেছেন বিক্রমপুর টংগিবাড়ী ডিগ্রী কলেজের সুমন আহম্মেদ নামের আরো এক শিক্ষার্থী। যাবেনও লেগুনা কিংবা অটো রিক্সা করেই। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের জন্য যেসকল পরিবহন ব্যবহৃত হচ্ছে, সেই পরিবহনের গ্যাস সিলিন্ডার কতটুকু নিরাপদ জানা নেই এই যাত্রীদের। শুধু যে সায়মা আক্তার ও সুমন আহম্মেদের জানা নেই এমন নয়, সচেতনতার অভাবে গাড়িচালক ও হেলপার নিজেরাই জানেন না যে, তার গাড়িটি বিপজ্জনক বোমা হয়ে উঠেছে।
শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ও চাষাড়া-শিমরাইল সড়কে চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনের চালক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে এতথ্য জানা যায়। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক অনেক সময় রিটেস্টিং করার গরজ দেখান না। গাড়িতে লাগানো গ্যাসের সিলিন্ডার পরীক্ষা করে বিস্ফোরক অধিদফতরে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না।
গত ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লায় একটি চলন্ত কাভার্ড ভ্যানের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভ্যানটির চালক ও হেলপার দগ্ধ হয়েছিলো। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার স্থাপনের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সিলিন্ডার পুনঃনিরীক্ষা না করায় এঘটনা ঘটেছে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জের বেশির ভাগ গাড়িগুলোতে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার। নেই পরীক্ষার কোন কাগজ পত্রও। সিলিন্ডার পুনঃনিরীক্ষা করার যে একটি নিয়ম রয়েছে, তাও জানা নেই চালকদের।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক আব্দুল গণি মিয়া জানান, এক বছর পূর্বে পুরাতন অটোরিক্সা কিনে ছিলেন। কিন্তু কিনার আগে ও পরে ওই অটোরিক্সার সিলিন্ডার পরীক্ষা করা হয়নি। সিএনজিটির পূর্বের মালিক সিলিন্ডার পরীক্ষা করেছিলো কি না? তাও জানা নেই এই চালকের।
নিয়ম অনুযায়ী, ভাল্ব (যার মাধ্যমে গ্যাস রিফিল করা হয়) ঠিক আছে কিনা, পুরাতন গাড়ি কেনার আগে সিএনজি কনভারশন কবে করা হয়েছিল দেখে নেয়া ও প্রতি ৫ বছর অন্তর গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করতে হবে।
সুমন আহম্মেদ বলেন, আমাদের সচেতন হতে গেলে, পায়ে হেটে চলাচল করতে হবে। আমাদের সচেতনার চাইতে বেশি সচেতন হতে হবে চালকদের। তাই বিষয়ে চালকদের সচেতন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব আরোপ করবে বলে আশা করছি।
বিস্ফোরক অধিদফতর বলছেন, শুধু পরিবহন যাত্রীরাই ঝুঁকিতে রয়েছে এমন নয়, যে কোনো সময় যে কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ধারেকাছে অবস্থানরত মানুষের জন্যও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে। স্মর্তব্য, একটি গ্যাস সিলিন্ডারের মেয়াদ পাঁচ বছর। এরপর নিরাপত্তার স্বার্থে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার রিটেস্টিং করা উচিত। প্রয়োজন হলে সিলিন্ডার বদলে ফেলা উচিত।