আজ বুধবার, ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নীট কনসার্ন গার্মেন্টসের মালিক জয়নালের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার জায়গা দখলের অভিযোগ

সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টু (৬৮) এর সম্পত্তি জোর পূর্বক আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে নীট কনসার্ন গার্মেন্টসের মালিক জয়নালের বিরুদ্ধে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিন আহম্মেদ মন্টুর সম্পত্তিতে বিজ্ঞ আদালতের স্থিতবস্থার আদেশ থাকলেও আদালতের আদেশকে অমান্য করে ভূমিদস্যু জয়নাল জবর দখল করার পায়তারা করছে বলে গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টুর অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার চাচাত ভাই সহ আমরা ভাগিনা ভাগনীগণ ফতুল্লা থানাধীন হাজীগঞ্জ মৌজাস্থ খতিয়ান নং- সি.এস-১৮, দাগ নং- সি.এস ও এস. এ-১১৩, এস.এ-২৮, আর.এস-২৬৮, আর.এস-১৭৬ ২৬৯, ২০ এ ২৯.৫ শতাংশ সম্পত্তির মালিক। আমি ও আমার ভাই সালাউদ্দিন আহম্মেদ সেলিম আমাদের বড় ভাই আবু দাউদ মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এর সহিত বিজ্ঞ সাব জজ আদালত, নারায়ণগঞ্জ এর দে: নং-৭৩/১৯৯৩ নম্বর মোকদ্দমার রায়ের আলোকে ৯ শতাংশ সম্পত্তির মালিক হই। আমাদের ভাগিনা ও ভাগনীদের মাতা নিগার সুলতানা বিগত ১৫/১২/১৯৯৮ ইং তারিখে ৬৪৮১ নং সাফ কবলা দলিল মূলে ৬ শতাংশ সম্পত্তিতে মালিক হইয়া আমর ভাগিনা এ.ই.এম আদনান ও আমার ভাগিনী ইসরাত সুলতানাদের ওয়ারিশ রাখিয়া যায়। আমার চাচা মো. আসাদুজ্জামান ভূইয়া বিগত ২৮/১০/১৯৭৪ ইং তারিখে ৭০৫০ নং সাফ কবলা দলিল মূলে ৭.৫০ শতাংশ সম্পত্তি বিগত ১২/০১/১৯৭৩ ইং তারিখে ৩২৮ নং দলিল মূলে ৭.৫০ শতাংশ, একুনে ১৫ শতাংশ সম্পত্তিতে মালিক ভোগ দখলকর থাকাবস্থায় বিগত ০৯/০১/২০০১ ইং তারিখে ৩৪ নং বিল এওয়াজ হেবা নামা দলিল মূলে ১৪.৫০ শতাংশ সম্পত্তি আমার চাচাত ভাই মো. আসাদুজ্জামান ভূইয়া (সোহান) বরাবরে হস্তান্তর করিয়া দেয়। আমার বর্ণিত প্রকারে ২৯.৫০ শতাংশ সম্পত্তিতে আমাদের নাম নামজারী জমাভাগ করিয়া খাজনা আদায় করিয়া উক্ত সম্পত্তিতে আমরা দীর্ঘ ৪৩ বৎসরের উর্দ্ধকাল যাবত ভোগ দখল করিয়া আসিতেছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বেশ কিছু দিন পূর্ব হইতে জয়নাল আবেদীন মোল্লা (৬১), আজিবুর রহমান চঞ্চল (৩২), আনিছুর রহমান জুয়েল (৪৮)রা ভূমিদস্যু বাহিনী। তারা আমাদের স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তি জবর দখল করার জন্য চেষ্টা করছে। আমার উক্ত সম্পত্তির বিষয়ে বিজ্ঞ আদালত গত ০৯/০৫/২০১৯ ইং তারিখে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালতের আদশ সম্পর্কে জানার পরও ভূমিদস্যু জয়নাল সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা গত ১২ মে সকাল অনুমান ১০টার সময় আমাদের সম্পত্তির জবর দখল করার চেষ্টা করছে। বিজ্ঞ আদালতের আদেশকে অমান্য করছে তারা। এই বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল করিমকে ফোন করে জানালে তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিন আহম্মেদ টিটুর অভিযেগের বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার (ওসি তদন্ত) হাসানুজ্জামানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, আমি হলাম অত্র থানার ওসি তদন্ত, মুক্তিযোদ্ধা যে অভিযোগ করেছেন সেটা ঠিক নয়। কেননা আমি তার জিডি কিংবা অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা নই। তার জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে জিনি নিয়োজিত রয়েছেন সে এই বিষয়ে বলতে পারে। আরো বলতে পারেন আমাদের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন। তবে মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

দায়েরকৃত জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ইলিয়াছ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জিডির অগ্রগতির সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমার হাতে যখন জিডির কপিটি এসে পৌছে ঠিক তখনই জিডিটি যথার্ত ভাবে তদন্ত করার জন্য প্রস্তুতি নেই। মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টুর যে সম্পত্তি রয়েছে সেই সম্পত্তির উপর বিজ্ঞ আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞার কপিটি সংগ্রহ করি। পরবর্তীতে ওসি তদন্ত স্যার আমাকে বিজ্ঞ আদালতের নথি নিয়ে আসতে বললে তাঁকে সেই নথি দেই। তিনি নথি ও জিডি দেখে বলেন এই বিষয়ে ওসি স্যার সহ মুক্তিযোদ্ধার আগের অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আব্দুল করিম অবগত আছে এবং সে এই বিষয়ে কাজ করছে।

অপর দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টুর পূর্বের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক আব্দুল করিম সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ওই মুক্তিযোদ্ধা একটি জিডি করেছেন এবং সেই জিডির তদন্ত করছে এসআই ইলিয়াস হোসেন। তার কাছেই সকল তথ্য রয়েছে। এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টুর অভিযোগ এবং জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিনের আহম্মেদ মন্টু একটি অভিযোগ এবং গত ১৩ মে (সোমবার) একটি জিডি করেছেন। এরই মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তির বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের স্টে অর্ডার থানায় এসে পৌছে পরবর্তীতে জিডির তদন্তভার সহ বিজ্ঞ আদালতের নোটিশটি উপ-পরিদর্শক ইলিয়াছ হোসেনকে দেওয়া হয়। যথাযথ আইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যও তাঁকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে জিডির অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা ইলিয়াছ হোসেন ও পূর্বের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকরী কর্মকর্তা আব্দুল করিম এই বিষয়ে তেমন কিছুই জানেনা বলে জানালে ওসি আসলাম বলেন আমি তো তাদের এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি। বিষয়টি আমি দেখছি এবং মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার উদ্দিন আহম্মেদ মন্টু যাতে ন্যায় বিচার পান সেই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে।