জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ১০ দিন ধরে এই হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
এরশাদের রাজনৈতিক ও প্রেসসচিব এবং জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভ রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৪ জুলাই থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এরশাদ। তিনি রক্তের রোগ মাইলোডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোমে ভুগছিলেন। তার আগে গত ২২ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়।
এরশাদ গত কয়েক বছর ধরেই স্বাস্থ্য নিয়ে সমস্যায় ছিলেন। গত বছরের শেষের দিকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান তিনি। এরপর থেকেই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে খুব একটা দেখা যায়নি তাকে। এসময় নিজের সম্পত্তি ট্রাস্টে দিয়ে দেন এরশাদ। এছাড়া অসুস্থতার কারণেই ভাই জি এম কাদেরকে নিজের উত্তরসূরি ঘোষণা করে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে বসান এরশাদ।
১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্ম এরশাদের। পরে রংপুরে চলে আসে তার পরিবার। সেখানেই তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন। এরপর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি পেয়ে ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। পরে ১৯৭৩ সালে এরশাদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ওই বছরই আগস্ট মাসে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এরশাদ। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত তিনি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক (সিএমএলএ) হিসেবে দেশ শাসন করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণ করে ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এরশাদ। তার শাসন আমলে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি ৯ বছর দেশ পরিচালনা করেছেন। স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।